স্বস্তি ফিরছে বিশ্বে, ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে সব
প্রায় পাঁচ মাস আগে হানা দিয়েছিল প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমবারের মতো এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২১২টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস।
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, স্পেনের মতো দেশগুলোও করোনা নিয়ন্ত্রণে রীতিমত হিমসিম খেয়েছে। করোনার বিস্তাররোধ করতে বিভিন্ন দেশে লকডাউন জারি করতে হয়েছে এবং কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ফলে অনেক দেশই এর সুফল পেয়েছে।
ইতোমধ্যে করোনা থেকে অনেকটাই স্বস্তি মিলেছে বেশকিছু দেশে। অনেক দেশই এই বিপর্যয় কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশে। ফলে মাসব্যাপী চলতে থাকা লকডাউন শিথিল করে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে।
স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্রে ফিরতে শুরু করেছে বহু মানুষ। একেবারেই সবকিছু স্বাভাবিক না হলেও গত কয়েক মাস আগের চিত্র কিছুটা পাল্টেছে, এটাই বা কম কি?
করোনার উৎসস্থল চীনের উহানে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। যারা সুস্থ আছেন এবং কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা নেই তাদের এখন কাজে ফেরা এবং ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাদেশিক সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন উহানের মানুষ অন্যত্র যেতে পারছে এবং অন্যত্র থেকে উহানেও যাতায়াত করা যাচ্ছে।
এদিকে, স্পেনের কিছু অংশে কড়াকড়ি তুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে দোকানপাট এবং রেস্টুরেন্ট পুনরায় চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রেস্টুরেন্টের বাইরে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং সেভাবেই সবাইকে সেবা দেওয়া হচ্ছে।
ফ্রান্সেও লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। সোমবার লকডাউন শিথিলের প্রথমদিনই লোকজনকে সিয়েনে নদীর তীরে সমবেত হতে দেখা গেছে। সেখানে বসে তারা সময় কাটিয়েছেন, খাবার ভাগাভাগি করে খেয়েছেন। প্রায় দু'মাস পর সেখানে লকডাউন শিথিল করা হলো। দোকানপাট খুলে দেওয়ায় প্যারিসে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
দক্ষিণ কোরিয়ায়ও কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে। ফলে লোকজন কাজে ফিরতে শুরু করেছে। লকডাউন শিথিল করে দোকানপাট খুলেছে তুরস্কেও। সেখানে শপিংমল, সেলুন এবং অন্যান্য দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বেলজিয়ামেও সোমবার থেকে অধিকাংশ দোকান খুলে দেওয়া হলেও রেস্টুরেন্ট, বার ও ক্যাফে বন্ধ থাকছে। সুইজারল্যান্ডে প্রাইমারি ও মাধ্যমিক স্কুল খুলছে। তবে ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমিয়ে আনা হচ্ছে। রেস্টুরেন্ট, বইয়ের দোকান ও জাদুঘরে প্রবেশ সংরক্ষিত করা হয়েছে।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস এবং ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যেও লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকারও লকডাউন শিথিল করেছে। সেখানে ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ রয়েছে এমন মানুষদের ঘরে থাকতে বলা হয়েছে।
তবে যাদের ঘরে বসে কাজ সম্ভব হচ্ছে না তারা সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত বিধি মেনে কর্মস্থলে যাবেন। গণপরিবহনে এখনই অনুমতি দেওয়া হয়নি। অপরদিকে বুধবার থেকে মানুষকে আরও বেশি বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
জার্মানিতেও লকডাউন শিথিল হয়েছে। সেখানে সব ধরনের দোকান খুলে দেওয়া হয়েছে। স্কুলে যেতে শুরু করেছে দেশটির শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে, করোনার সংক্রমণ ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে থাকলেও লকডাউনের বিধি-নিষেধ শিথিল করে অর্থনীতির চাকা সচল করছে পাকিস্তান। দেশটিতে লকডাউন শিথিল করে শনিবার বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে।
তবে অনেক দেশেই লকডাউন এখনও শিথিল বা তুলে নেওয়া হয়নি। বেশকিছু দেশে এখনও লকডাউন জারি আছে। আবার কিছু দেশে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। করোনার সংক্রমণ কমিয়ে আনতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
টিটিএন/জেআইএম