সুস্থ হয়ে ওঠা রোগী ফের আক্রান্ত হলেও করোনা ছড়ায় না: গবেষণা
রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পর ফের আক্রান্ত হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা থাকে না তার। বরং সুস্থ হয়ে ওঠার ব্যক্তির শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি আবারও অসুস্থ হওয়া ঠেকিয়ে দেয়। করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর আবারও আক্রান্ত হয়েছেন এমন ২৮৫ জন কোভিড-১৯ রোগীকে নিয়ে গবেষণায় এমন তথ্য পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন।
গবেষকরা বলছেন, পরীক্ষায় নেগেটিভ আসার পর ফের সংক্রমণ ধরা পড়লেও দীর্ঘস্থায়ী কোনও সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা নেই এই রোগীদের। নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, রোগীদের শরীরে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়লেও ভাইরাসগুলো বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম নয়। ওই রোগীদের শরীর থেকে যদি ভাইরাস ছড়ায়ও সেগুলো অসংক্রামক অথবা মৃত ভাইরাসের ক্ষুদ্র কণা।
দক্ষিণ কোরিয়ার সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সোমবার রাতের এই প্রতিবেদন সেসব দেশের জন্য কিছু স্বস্তির খবর হিসেবে এসেছে, যারা ইতোমধ্যে সবকিছু খুলে দেয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন।
কোরীয় এই গবেষণা বলছে, সামাজিক দূরত্বের বিধান শিথিল করা হলে যারা করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর কোনও ঝুঁকি নেই। এর অর্থ হচ্ছে- দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এখন থেকে করোনামুক্ত হওয়ার পর আর কাউকে সংক্রামক হিসেবে বিবেচনা করবে না।
কোভিড-১৯ ভাইরাস শনাক্ত করতে পিসিআর টেস্টকে বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করা হলেও গত মাসে এক গবেষণায় বলা হয়, পিসিআরের মাধ্যমে কোভিড-১৯ ভাইরাসের নিউক্লিক অ্যাসিড পরীক্ষা করে মৃত এবং সক্রিয় ভাইরাসের পার্থক্য বোঝা যায় না। যে কারণে করোনা পজিটিভ রোগী মানেই সংক্রমণ ছড়াবে এমন ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়েছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা অ্যান্টিবডি পরীক্ষার বিতর্কেও সহায়তা করবে। বিশেষজ্ঞরা অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে একটি মার্কার খোঁজার চেষ্টা করেন; যাতে কেউ করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন কিনা তা জানা যায়। তাদের ধারণা অ্যান্টিবডি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম। যদিও এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য কোনও প্রমাণ নেই। এমনকি এই অ্যান্টিবডি শরীরে কতদিন টিকে থাকবে সেব্যাপারেও জানা যায়নি।
সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের এক গবেষণায় বলা হয়, সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি বা সার্স ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর শরীরে সংক্রমিত হওয়ার ৯ থেকে ১৭ বছর পরও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। ডিউক-এনইউএস মেডিক্যাল স্কুলের বিজ্ঞানীরা গবেষণায় এই ফল পান।
মেডিক্যাল জার্নাল মেডআরজিভে প্রকাশিত এক গবেষণায় অন্য বিজ্ঞানীরা বলেছেন, শিশুদের শরীরে উচ্চমাত্রায় আইজিএম অ্যান্টিবডি মিলেছে। এর অর্থ হচ্ছে- তরুণ জনগোষ্ঠীর শরীরে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে অধিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এই গবেষণা এখনও পির রিভিউ দ্বারা পর্যালোচনা করা হয়নি।
দক্ষিণ কোরিয়ার এই গবেষণার পর কর্তৃপক্ষ তাদের করোনা গাইডলাইনে পরিবর্তন এনেছে। এতে বলা হয়েছে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর কেউ সুস্থ হয়ে ওঠে ফের সংক্রমিত হলে কর্মস্থল অথবা স্কুলে যাওয়ার জন্য তার নেগেটিভ রিপোর্টের দরকার হবে না। তবে এক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাদের আইসোলেশনের মেয়াদ সম্পন্ন করতে হবে।
কোরিয়ান সিডিসি বলছে, নতুন প্রটোকোল অনুযায়ী- আইসোলেশন থেকে মুক্ত হওয়াতের জন্য অতিরিক্ত কোনও পরীক্ষারও দরকার নেই। দক্ষিণ কোরিয়ার সম্প্রতি বেশ কিছু রোগী পাওয়া গেছে; যারা প্রথমবার করোনা আক্রান্ত হওয়ার ৮২ দিন পর আবারও সংক্রমিত হয়েছেন। তবে এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার মতো অ্যান্টিবডি তাদের শরীরে তৈরি হয়েছে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ।
এসআইএস/পিআর