ট্রাম্পের ‘দুষ্টুমি’র কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে করোনা বিস্ফোরণ!
করোনাভাইরাস মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে সবার শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ইতোমধ্যেই ২২ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত এবং ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন। কিছু কিছু অঙ্গরাজ্যে সংক্রমণের হার কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে এখনও মারাত্মক হুমকিতে যুক্তরাষ্ট্র। আর এই হুমকি ডেকে আনার পেছেনে সবচেয়ে বড় ‘অবদান’ মনে করা হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও শুরুর দিকে লকডাউন দিতে চাননি ট্রাম্প। বরং এটিকে ‘সাধারণ ফ্লু’ বলে হেলাফেলা করেছেন তিনি। কিছু অঙ্গরাজ্য ও শহর কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্বে লকডাউন দিলেও এর কড়া সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট। বিশেষজ্ঞরা যখন বারবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলছেন, তখন তিনি উল্টো অর্থনীতি বাঁচিয়ে রাখার অজুহাতে সবাইকে বাইরে বেরিয়ে আসার ডাক দিয়েছেন।
ট্রাম্পের উদ্যোগেই ইতোমধ্যে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। করোনার ভয় কাটিয়ে যারা বাইরে বের হচ্ছেন, তাদের ‘সাহসী যোদ্ধা’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। করোনা প্রতিরোধের চেয়ে বরং এর উৎস হিসেবে চীনকে দোষারোপ করাতেই বেশি আগ্রহ দেখা গেছে ট্রাম্পের। এ নিয়ে নিজদেশেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। ধস নেমেছে জনপ্রিয়তায়ও। রয়টার্সের এক জরিপে দেখা গেছে, গত কয়েক মাসের মধ্যে জনপ্রিয়তার তলানিতে পৌঁছেছেন ট্রাম্প। তারচেয়ে রেকর্ড ১২ পয়েন্টে এগিয়ে গেছেন ডেমোক্রেট নেতা জো বাইডেন।
সমালোচনা হচ্ছে করোনা মোকাবিলায় ট্রাম্পে প্রশাসনের নেয়া পদক্ষেপেরও। নিজদেশে ২২ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও করোনাভাইরাসকে এখনও ততটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা টেস্ট বেশি হওয়ার কারণেই বেশি বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। টেস্ট কমিয়ে দিলেই রোগীর সংখ্যা কমে যাবে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের এমন নির্দেশও নাকি দিয়েছেন তিনি। এ কথা জনসভায় দাঁড়িয়ে নিজমুখেই স্বীকার করেছেন ট্রাম্প।
তবে প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্যের বিষয়ে হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, ওই সময় ট্রাম্প ‘দুষ্টামি’ করেছেন মাত্র। টেস্ট কমানোর কোনও পরিকল্পনা নেই তাদের।
করোনা নিয়ে শুধু হাসি-ঠাট্টাই নয়, এটি প্রতিরোধে অনেকটাই কার্যকর প্রমাণিত মাস্ক পরার বিষয়টিও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। জনসম্মুখে কখনোই মাস্ক পরতে দেখা যায়নি ট্রাম্পকে। তার দাবি, মাস্ক পরলে নাকি তাকে ‘হাস্যকর’ দেখাবে!
এর আগে, করোনা দূর করতে পাকস্থলী জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করার মতো উদ্ভট পরামর্শও দিয়েছিলেন এ রিপাবলিকান নেতা। তা নিয়েও হয়েছিল ব্যাপক সমালোচনা। তবে এসবে থোড়াই কেয়ার ট্রাম্পের।
সমালোচকদের মতে, করোনার হাত থেকে জনগণের প্রাণরক্ষার চেয়ে প্রেসিডেন্টের চেয়ারটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ট্রাম্পের কাছে। শনিবার ওকলাহোমায় বড় নির্বাচনী সমাবেশও করেছেন তিনি। এদিন প্রেসিডেন্ট যেমন নিজে মাস্ক পরেননি, তার অনেক অনুসারীকেও মাস্কবিহীন দেখা গেছে। ফলে ওই সমাবেশ থেকেই ফের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স
কেএএ/এমকেএইচ