করোনা মোকাবিলার সাফল্য ভেঙে পড়েছে যেসব দেশে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০৭ এএম, ২৫ জুলাই ২০২০

অডিও শুনুন

মাস সাতেক আগে চীনের উহানে ধরা পড়েছিল যে করোনাভাইরাস, আজ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি কোণে পৌঁছে গেছে সেটি। যুক্তরাষ্ট্র-ব্রাজিলের মতো দেশগুলো যখন করোনার আঘাতে লণ্ডভণ্ড, তখন চীন-নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলো অসাধারণ সাফল্য দেখিয়ে রুখে দিয়েছে মহামারির তাণ্ডব। তবে বেশ কিছু দেশ বা অঞ্চল রয়েছে যারা করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ঢেউ দারুণ সাফল্যের সঙ্গে সামলালেও দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ভেঙে পড়েছে তাদের প্রতিরোধের দেয়াল।

হংকং
গত জানুয়ারিতে করোনার সংক্রমণ যখন মাত্র ছড়াতে শুরু করেছে, তখনই রোগী শনাক্ত, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত, সুরক্ষা উপকরণের বাধ্যবাধকতা জারি করে হংকং। মার্চে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের মুখে কড়াকড়ি আরও বাড়ায় চীনের আধা-স্বায়ত্তশাসিত এ অঞ্চলটি।

হংকংয়ের বাসিন্দা নয় এমন ব্যক্তিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, বিমানবন্দরের ট্রানজিট বাতিল করা হয়, আগতদের নমুনা পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়। এছাড়াও জিম, মদ বিক্রি বন্ধ, রেস্টুরেন্ট-ক্যাফে বন্ধ নাহয় অতিরিক্ত সতর্কতা জারি করা হয়।

jagonews24

এভাবে বেশ কয়েক সপ্তাহ শহরটিতে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা এক ডিজিটে বা কখনও কখনও শূন্যের কোটায় ছিল। তবে, গত ৬ জুলাই থেকে মহামারির তৃতীয় ঢেউয়ে আবারও সতর্কতা জারি করেছে হংকং। শুক্রবার ১২৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে সেখানে, যা এযাবৎকালে শহরটিতে একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের রেকর্ড।

সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে হংকংয়ে আবারও জিম বন্ধ, চারজনের বেশি জড়ো হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা, বহিরাগতদের করোনা নেগেটিভ সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া
মহামারি নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সফল দেশগুলোর একটি বলা যায় অস্ট্রেলিয়াকে। মহামারির শুরুর দিকে ১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের মতো তারাও চীন ভ্রমণকারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় মার্চে ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালির জন্যে সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। ওই মাসের শেষের দিকে সবধরনের জনসমাবেশ এবং অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে দেশটি। একসময় অস্ট্রেলিয়ায় করোনার সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণেই এসেছে বলে ধরা হচ্ছিল।

কিন্তু, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় গত ৭ মার্চ ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রায় ৬৬ লাখ মানুষকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয় অস্ট্রেলীয় সরকার। প্রথমবারের মতো গত সপ্তাহে ভিক্টোরিয়া ও নিউ সাউথ ওয়েলসের মতো জনবহুল রাজ্য দু’টির সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মেলবোর্ন ও এর আশপাশের এলাকায় খাবার কেনা, কর্মস্থলে যাওয়ার মতো জরুরি কাজ ছাড়া সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

jagonews24

গত মঙ্গলবার ৪৮৪ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ভিক্টোরিয়ায়, যা রাজ্যটিতে এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড।

জাপান
করোনা নিয়ন্ত্রণে অন্যতম সফল দেশ জাপান। গত ২৫ মে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা তুলে নিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, মাত্র দেড় মাসের মধ্যেই তারা করোনার সংক্রমণ শেষ করতে সক্ষম হয়েছেন। এসময় ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালুর কথাও জানান তিনি।

পরে খেলাধুলা, জাদুঘর, স্কুলগুলো খুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে জাপান। এমনকি পর্যটকদের ভ্রমণে উৎসাহিত করতে বিশেষ সুবিধা দেয়ারও ঘোষণা দেয় দেশটির সরকার।

jagonews24

কিন্তু, এরপর থেকেই জাপানে আবারও বাড়তে শুরু করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। গত বৃহস্পতিবার রেকর্ড ৯৮১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে দেশটিতে, এদিন মারাও গেছেন দু’জন। জাপানের বড় বড় শহরগুলোতেই মূলত বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ। এর কারণেই গত সপ্তাহে ভ্রমণ সুবিধা থেকে রাজধানী টোকিওকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।

ইসরায়েল
বেশ কয়েক মাস ইসরায়েলকে মহামারি নিয়ন্ত্রণের অন্যতম আদর্শ বলে ভাবা হচ্ছিল। পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় ইসরায়েলে প্রাণহানির সংখ্যা একেবারেই সামান্য। ইউরোপ-আমেরিকা যখন করোনার হানায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল, তখন মহামারি নিয়ন্ত্রণে এনে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালুর দিকে এগোচ্ছিল ইসরায়েল।

কিন্তু প্রথম ধাক্কা সামলাতে পারলেও মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কায় একেবারে কাবু হয়ে পড়েছে দেশটি। রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, সৈকত খুলে দেয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেখানে সংক্রমণ বেড়েছে অন্তত ৫০ গুণ। মে মাসের মাঝামাঝি যেখানে ইসরায়েলে দৈনিক ২০ জনের মতো রোগী শনাক্ত হচ্ছিল, মাত্র দু’মাস পরেই এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজারেরও বেশি।

jagonews24
এ কারণে জুলাইয়ের শুরুতেই জিম, পুল, হল, পাবগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ইসরায়েলি সরকার। রেস্টুরেন্ট ও প্রার্থনাস্থলগুলো খোলা রাখতে দেয়া হয়েছে সীমিত ধারণক্ষমতার শর্ত।

গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে রেকর্ড ১ হাজার ৮১৯ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এর আগের দিনও ১ হাজার ৭০০’র বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল সেখানে।

চেক প্রজাতন্ত্র 
গত ১ জুলাই লকডাউন সমাপ্তির খুশি উদযাপনে ১ হাজার ৬০০ ফুট দীর্ঘ এক টেবিলে গণনৈশভোজের আয়োজন করেছিল চেক প্রজাতন্ত্র। কিন্তু লকডাউন তুলে নেয়ার পর থেকে আবারও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে দেশটিতে। একারণে আবারও সেখানে সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারি রোধে এত কড়াকড়ি সত্ত্বেও এসব দেশে আবারও সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে ভাইরাসটি এখনও কত বড় হুমকি। কার্যকর ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত হয়তো এটি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হবে না।

সূত্র: সিএনএন
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।