কীভাবে ফের করোনার ‌‘হটস্পট’ হলো স্পেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:২৫ পিএম, ২২ আগস্ট ২০২০

ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কঠোর লকডাউন আর জনসম্মুখে মাস্ক বাধ্যতামূলক করার পরও ইউরোপের দেশ স্পেন আবারও কোভিড-১৯ মহামারির হটস্পটে পরিণত হয়েছে। প্রাদুর্ভাব শুরুর পর এখন পর্যন্ত দেশটির ৩ লাখ ৭৮ হাজার মানুষের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে; যা পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ইউরোপে সর্বোচ্চ হারের দেশ স্পেনে গত দুই সপ্তাহে প্রতি এক লাখে ১৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিবেশী ফ্রান্সে এই সংখ্যাটা ৫০ জন। এ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২৯ হাজার মানুষ মারা গেছে। স্পেন কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর পরপরই আংশিকভাবে সংখ্যা বেড়েছে রোগীর।

এ পর্যন্ত ৫৩ লাখ মানুষের নমুনা পরীক্ষা করেছে স্পেন; যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ প্রায়। তবে স্পেনের প্রতিবেশী দেশগুলো নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে এর চেয়ে বেশি। জার্মানি তার মোট জনসংখ্যার ১২.২, স্পেন ১২.৮ ও ব্রিটেন ২২.১ শতাংশের করোনার নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে।

কেউ কেউ বলছেন, শারীরিক সংস্পর্শে আসা এবং বড় পরিবার ও এক বাড়িতে অনেকে একসঙ্গে বসবাসের মতো সামাজিক রীতিনীতি স্পেনে ভাইরাসটির সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এসব সামাজিক প্রথা ইতালিতে প্রচলিত থাকলেও স্পেনের তুলনায় দেশটিতে ভাইরাসটির সংক্রমণ বৃদ্ধির হার অনেক কম।

তাহলে স্পেনে কেনো মহামারিটি প্রকট আকার ধারণ করলো? গত ২১ মার্চ শুরু হওয়া লকডাউন ২১ জুন পুরোপুরি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে এ পরিস্থিতির জন্য আংশিকভাবে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

লকডাউন চলাকালীন শুধু খাবার ও ওষুধ কিনতে এবং জরুরি চিকিৎসাসেবার জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি মিলতো। এমনকি এপ্রিলের আগে দেশটির মানুষ শরীরচর্চার জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি পেত না।

কাতালানিয়া ওপেন ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ স্যালভাদর ম্যাকিপ বলেন, কঠোর লকডাউন প্রত্যাহার হলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আকাঙ্খা ছিল। ফলে লকডাউন প্রত্যাহারের পর প্রকোপ বেড়ে যায়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভ্যান্সড সোশ্যাল স্টাডিজের জর্জ রুজও একই মত পোষণ করেন।

সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় স্পেন কর্তৃপক্ষ চলতি মাসে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে নাইট ক্লাব বন্ধ করে দেওয়া, রেস্তোরাঁ খোলা রাখার সময় কমানো ছাড়া প্রকাশ্যে ধুমপানও নিষিদ্ধ করা হয় কোনো কোনো অঞ্চলে। তবে জর্জ রুজ বলেন, এসব পদক্ষেপ মেনে চলা তরুণদের জন্য খুবই কঠিন কাজ।

স্পেনের বিকেন্দ্রীভূত সরকার পদ্ধতির ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সর্বজনীন কৌশল গ্রহণ করা কঠিন হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মাদ্রিদের পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পিলার সেরানো বলেন, সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়টি ছিল কঠিন এবং এ অবস্থা এখনো রয়েছে।

স্পেনে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির পেছনে পর্যটকদের জন্য জুন মাসের শেষে দেশটির সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকেও দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালেও গত জুলাই মাসে আকাশপথে প্রায় বিশ লাখ পর্যটক স্পেন ভ্রমণ করেছেন।

সূত্র: চ্যানেল নিউজ এশিয়া

এসএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।