বিশ্ব অর্থনীতির পথ বদলে দিয়েছে মহামারি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় ধাক্কার শুরু হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। সেসময় করোনাভাইরাস মহামারির কারণে জারি করা লকডাউন এবং ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ায় মহাসংকটে পড়ে শ্রম বাজার। করোনার কারণে তখন রাতারাতিই চাকরিহারা হন অন্তত ৫০ কোটি মানুষ।
বিপর্যয় আরও বড় হতে পারত। তবে সেটি ঠেকিয়ে দিয়েছে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর অভূতপূর্ব প্রণোদনা, বিপদেপড়া কর্মী-প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সরকারি সহায়তা এবং বাজেট ঘাটতি প্রায় যুদ্ধকালীন অবস্থার মতো সম্প্রসারণে।
হয়তো বিপদ কিছুটা সামলে ওঠা গেছে। তবে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া যত এগোচ্ছে, দেশগুলোর মধ্যে কর্মদক্ষতার পার্থক্য ততটাই সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ওইসিডির তথ্যমতে, আগামী বছরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ২০১৯ সালে যেমন ছিল, প্রায় তেমনই থাকবে। কিন্তু চীনের অর্থনীতির আকার বাড়বে অন্তত ১০ শতাংশ। ইউরোপ তখনও মহামারি-পূর্ব অবস্থায় ফিরতে ধুঁকবে, তাদের এই পরিস্থিতি থাকতে পারে আরও কয়েক বছর। একই অবস্থা হতে পারে জাপানেরও।
বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিগুলো শুধু যে বিপর্যয়ের দিকেই যাচ্ছে, তা কিন্তু নয়। বহুজাতিক ব্যাংক ইউবিএসের তথ্যমতে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) অন্তত ৫০টি দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এ ধরনের পার্থক্যের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ভাইরাস সংক্রমণের ভিন্নতা। চীন এটি পুরোপুরি বন্ধ করে ফেলেছে। অথচ ইউরোপে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, সম্ভবত খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রেও একই পরিস্থিতি হতে চলেছে। বেশ কিছুদিন ধরেই প্যারিস সব বার বন্ধ রেখেছে, মাদ্রিদ দ্বিতীয় দফায় আংশিক লকডাউনে গেছে। অথচ, চীনে এখন কেউ চাইলেই নাইটক্লাবে গিয়ে পার্টি করতে পারেন।
আরেকটি পার্থক্য হচ্ছে, আগে থেকেই বিদ্যমান অর্থনৈতিক কাঠামোটি। করোনার মধ্যে কারখানাগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ চালিয়ে যাওয়া সহজ, কিন্তু যেসব সেবাখাতে মুখোমুখি যোগাযোগ আবশ্যক সেগুলো পরিচালনা বেশ কঠিন।
তৃতীয় বিষয়টি নীতিগত পার্থক্যের। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের চেয়ে বেশি প্রণোদনা দিয়েছে, যা তাদের জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ। স্বল্পমেয়াদী সুদের হারে ১ দশমিক ৫ পয়েন্ট পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে দেশটি। তবে অবকাঠামোগত পরিবর্তন এবং মহামারির আঘাত মোকাবিলায় সরকার কীভাবে সাড়া দিচ্ছে সেটিও নীতিগত বিষয়ের মধ্যে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তনটা হবে বিশাল। মহামারির কারণে অর্থনীতি কম বিশ্বায়িত, আরও ডিজিটালাইজড এবং আরও অসম হয়ে উঠবে। সরবরাহ ব্যবস্থার ঝুঁকি কমানো এবং স্বয়ংক্রিয়করণে ফলে প্রস্তুতকারকরা তাদের উৎপাদন আরও ঘরমুখী করে তুলবেন।
অফিসকর্মীরা বাড়িতে বসে কাজ চালিয়ে গেলে ওয়েটার, ক্লিনার বা বিক্রয় সহযোগীর মতো পেশায় নিয়োজিত নিম্নমজুরির কর্মীদের নতুন চাকরি খুঁজে নিতে হবে। আর যতদিন সেটি না হচ্ছে, ততদিন হয়তো তাদের বেকারই থাকতে হবে।
কর্মক্ষেত্রগুলো যত বেশি অনলাইননির্ভর হবে, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বেশি ও তথ্যের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে- এধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যে ততবেশি প্রভাব বিস্তার করবে। এবছর প্রযুক্তিখাতের বিশাল চাহিদা দেখেই আগামীতে কী হতে চলেছে তার কিছুটা পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/এমএস