‘সৌদি আরবকে ভারতের ভ্যাকসিন দেয়াই উচিত নয়’
খুব শিগগিরই সৌদি আরবকে সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিনের এক কোটি ডোজ দেয়ার কথা ভারতের। তবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে মোটেও সন্তুষ্ট নন সৌদি প্রবাসী ভারতীয়রা। তাদের দাবি, সৌদি আরব ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া ও সেখানে আটকেপড়া প্রবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত দেশটিকে ভ্যাকসিন দেয়া উচিত নয় ভারতের। এ নিয়ে সম্প্রতি কূটনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে দেশ দুটির মধ্যে।
চলতি সপ্তাহে অন্তত ২০টি দেশের জন্য প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সৌদি। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো। তবে সেই তালিকায় নাম নেই ভারতের।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে পাঁচ মাস আগে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সৌদি সরকার। বলা যায়, এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রবাসী ভারতীয়রা। দেশটিতে অন্তত ২৬ লাখ ভারতীয় প্রবাসী রয়েছেন।
গত সেপ্টেম্বরে সৌদি সরকার ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞা জারি করায় দেশটির ভেতরে ও বাইরে আটকা পড়েন লাখ লাখ ভারতীয়। এরপর থেকেই নিজেদের দুর্দশার কথা জানিয়ে তারা একের পর এক মেসেজ পাঠাচ্ছেন ভারতীয় মিশনগুলোতে। ভুক্তভোগীদের দাবি, এমন সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির সমাধান না হলে সৌদির কাছে ভ্যাকসিন পাঠানো উচিত নয় ভারত সরকারের।
রিয়াদে ভারতীয় দূতাবাসের উদ্দেশে টুইটারে এক ভারতীয় লিখেছেন, সৌদি আরবকে ভারতের ভ্যাকসিন দিতে চাওয়া উচিত নয়। কারণ তারা ভারতীয় ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে, লাখ লাখ কর্মীর জীবিকা ঝুঁকিতে ফেলছে।
অনেকটা একই কথা বলেছেন ভারতে বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়া এক প্রকৌশলী। গত গ্রীষ্মে পরিবারকে দেখতে জন্মস্থান উত্তর প্রদেশে ফিরেছিলেন তিনি। কিন্তু ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার কারণে আর সৌদি ফিরতে পারেননি।
এ তরুণ বলেন, কর্তৃপক্ষের কাছে সাহায্য চেয়ে আমরা দিনরাত টুইট করছি। কিন্তু ভারতের খেয়াল শুধু ভ্যাকসিন বিক্রির দিকে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা অবশ্য ভ্যাকসিন রফতানি এবং ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার বিষয় দু’টি মেলাতে রাজি নন। তবে এ নিয়ে দুই পক্ষই যে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে তা নিশ্চিত।
বার্তা সংস্থা এএফপি’কে একটি সূত্র জানিয়েছে, ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে ভ্যাকসিনকে সংযুক্ত না করে ভারত দেখাতে চাচ্ছে যে, দেশ দু’টি কৌশলগত অংশীদার এবং ভারতীয় কর্মীদের দুর্ভোগ কমাতে সৌদিরই সহানুভূতিশীল হতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত সৌদি আরবের কাছ থেকে এ বিষয়ে স্বস্তিদায়ক কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে রিয়াদ কর্তৃপক্ষ বোঝাতে চেয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা স্বাস্থ্যতথ্যের ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে।
তবে সৌদিতে বেশ কিছুদিন ধরেই করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী এবং চলতি সপ্তাহে আক্রান্ত কয়েকটি দেশের ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
ভারতের কেউ কেউ অবশ্য সৌদির এমন মনোভাবকে দেশটিতে প্রবাসী কর্মী কমানোর পরিকল্পনা হিসেবে দেখছেন। করোনা সংকটে অভূতপূর্ব চাপের মুখে অর্থনীতিকে সচল করতে দেশটি ‘সৌদিকরণ’ নীতি অনুসরণ করছে।
তরুণ সেই প্রকৌশলীর দাবি, সৌদি আমাদের থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই আমাদের বাইরে আটকে রেখেছে।
তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ।
সূত্র: এএফপি
কেএএ/জিকেএস