অনেক বাবা-মার কাছে ‘হোম স্কুল’ই ভালো
করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই এখন স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। যদিও অনেক দেশেই সীমিত পরিসরে কিছু স্কুল খুলে দেয়া হলেও সেক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ থাকছেই।
মহামারি শুরুর পর থেকেই দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডে স্কুল বন্ধ ছিল। অবশেষে সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো করোনার মধ্যেই পুনরায় স্কুলগুলো চালু করা হয়। কিন্তু সে সময়ও এমিলি ক্লার্কস তার ছেলেদের স্কুলে পাঠাননি।
গত মার্চ থেকেই ইংল্যান্ডে প্রথমবারের মতো লকডাউন জারি করা হয়। তার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই এমিলি তার তিন ছেলেকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেন। ফলে অন্য শিশুদের আগে থেকেই তারা বাড়িতে বসেই পড়াশুনা শুরু করে দেয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এমিলির পাঁচ বছর বয়সী ছেলেটির কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সে কারণে করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিল এই শিশুটি।
তবে এমিলির কাছে তার সন্তানদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিই প্রধান কারণ ছিল না। ছয় মাস বন্ধ থাকার পর যখন স্কুল খুলল তখনও তিনি তার সন্তানদের স্কুলে না পাঠিয়ে তাদের পড়াশুনার দায়িত্ব নিজেই নিলেন।
তিনি বলছেন, তার সন্তানরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করার পর থেকেই প্রচণ্ড খুশি ছিল। কারণ সারাদিন এখন আর তাদের ক্লাসরুমে কাটাতে হচ্ছে না। আর শিক্ষকের চেয়ে তার সঙ্গে থেকে তার বাচ্চারা আগের চেয়ে আরও দ্রুত সবকিছু শিখতে পারছে।
তবে সব বাবা-মা কিন্তু এমিলির মতো খুশি নন। অনেক বাবা-মা এ বিষয়ে বেশ হতাশ। বেশিরভাগ মানুষের কাছেই তাদের সন্তানদের পড়ালেখার দায়িত্ব নেয়া এবং সেটা শেষ করাটা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে।
গত নভেম্বরে অ্যাসোসিয়েশন অব ডিরেক্টর্স অব চিল্ড্রেন সার্ভিসেসের একটি গবেষণা প্রকাশ হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি দল দেখতে পেয়েছে যে, ইংল্যান্ডে স্ব-শিক্ষিত শিশুদের সংখ্যা ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে গত মার্চ থেকেই এখনও অনেক স্কুলই বন্ধ রাখা হয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণায় উঠে এসেছে যে, প্রায় ৭ শতাংশ আমেরিকার বাবা-মা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের শিশুদের হোম স্কুলিং করিয়েছেন। গত বসন্তে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ শতাংশ।
মহামারি চলাকালীন সময়ে সন্তানদের পড়াশুনা তদারকি করতে গিয়ে কিছু বাবা-মা এটা জানতে পেরেছেন যে, তাদের সন্তানরা সহপাঠীদের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে। ফলে তারা সন্তানদের আরও বেশি যত্ন সহকারে পড়াতে পারছেন।
আবার অনেকেই এটা আবিষ্কার করেছেন যে, তারা যতটা ভেবেছেন তার চেয়ে হোম স্কুল অনেকটাই সহজ। তবে অনেক শিশুরাই আবার কম্পিউটারের স্ক্রিনে দেখে দেখে পড়াশুনা করার মধ্যে কোনো আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে না। তাদের কাছে ক্লাসরুম, সহপাঠী আর শিক্ষকের উপস্থিতিই বেশি আনন্দদায়ক।
অল্প কিছু সংখ্যক বাবা-মা আবার করোনা ঝুঁকির কারণেই তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানোর পক্ষে নয়। অনেক দেশেই হোম স্কুল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে এ ধরনের কার্যক্রম জার্মানিতে বেআইনি। এদিকে, মাধ্যমিক স্কুলে পাঠানোর বয়স না হওয়া পর্যন্ত সন্তানদের বাড়িতেই পড়াশুনা করানোর চিন্তা করছেন এমিলি এবং তার স্বামী।
সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
টিটিএন/জিকেএস