বড় ধরনের সঙ্কটে কোভ্যাক্স কর্মসূচি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ২৩ এপ্রিল ২০২১

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিনে করোনা সংক্রমণে সবচেয়ে বিপর্যস্ত ভারত। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ভারতের স্থান। কিন্তু টানা সংক্রমণ এভাবে বাড়তে থাকলে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সবচেয়ে জোর দেয়া হচ্ছে ভ্যাকসিনের ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একমাত্র ভ্যাকসিনের মাধ্যমেই করোনা থেকে বাঁচা সম্ভব। কিন্তু ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে জটিলতা। অনেক ধনী দেশ ইতোমধ্যেই পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন মজুত করতে পারলেও দরিদ্র দেশগুলো কবে নাগাদ ভ্যাকসিন পাবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।

জাতিসংঘের সহায়তায় কোভ্যাক্স প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোতে ভ্যাকসিন কর্মসূচি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই প্রকল্পের আওতায় ধনী দেশগুলোর পাশাপাশি দরিদ্র দেশগুলোতেও ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় বিশ্বজুড়ে আগামী মে মাসের মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে পরিমাণ টিকা সরবরাহের কথা ছিল, তার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। রফতানি নিষেধাজ্ঞা, সংগ্রহ ও সরবরাহের ঘাটতির কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

অপর একটি কারণ হচ্ছে ভারতের সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতি। টানা এক সপ্তাহ দুই লাখের বেশি সংক্রমণের পর দেশটিতে এখন সংক্রমণ তিন লাখের বেশিতে গিয়ে ঠেকেছে। গত কয়েকদিনে একের পর এক রেকর্ড ভেঙে করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভারত।

দেশটিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ ব্যহত হচ্ছে। বিশ্বের ফার্মেসি হিসেবে আত্মপ্রকাশের কথা ছিল ভারতের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে করোনা পরিস্থিতি দেশটিকে একেবারেই বিপর্যস্ত করে ফেলেছে।

নিজ দেশের করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে ভারত এখন অন্যসব দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ভারত কেবল ১২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন বিদেশে সরবরাহ করতে পেরেছে।

এর আগের তিন মাসে দেশটি বিভিন্ন দেশে ৬ কোটি ৪ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে। দেশটির বেসরকারি সংস্থা সিরাম ইন্সটিটিউট সেখানে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে। ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কোভ্যাক্স কর্মসূচির সঙ্গে সংস্থাটির যে প্রতিশ্রুতি ছিল তারা তা রাখতে পারছে না।

ভারতে আগামী ১ মে থেকে নতুন ধাপে শুরু হচ্ছে করোনারোধী ভ্যাকসিন কার্যক্রম। এ পর্যায়ে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকেই ভ্যাকসিন দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে প্রতি মাসে দেশটির আরও ২০ লাখ ডোজ বেশি প্রয়োজন পড়বে। তাই এই মুহূর্তে ভারতকের নিজেদের দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রমে বেশি জোর দিতে হচ্ছে।

ফলে বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিনের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অনেক দেশেই এখন ভারতকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো দেশ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ব্রাজিল এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো বড় দেশগুলো আগামী মে নাগাদ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে পরিমাণ ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা ছিল তারা পেয়েছে তার মাত্র এক-দশমাংশ। অপরদিকে কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় এ পর্যন্ত এক ডোজ ভ্যাকসিনও পায়নি বাংলাদেশ, মেক্সিকো, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশ।

তবে মলডোভা, টুভালু, নাউরু ও ডোমিনিকা কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সবগুলো ডোজের সরবরাহই পেয়েছে। এমন আরও অনেক দেশ এক-তৃতীয়াংশ বা তার কম ভ্যাকসিন ডোজ পেয়েছে।

আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডা পেয়েছে বরাদ্দের ৩২ শতাংশ টিকা। এই মহাদেশে তারাই সবচেয়ে বেশি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পেয়েছে। অপরদিকে নাইজার, কেনিয়া, ইথিওপিয়া এবং গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো পেয়েছে ২৮ শতাংশ।

চলতি সপ্তাহের বুধবার পর্যন্ত কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় ৪ কোটি ২ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়েছে। অর্থাৎ তারা এ পর্যন্ত তাদের লক্ষ্যমাত্রার ২১ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পেরেছে। কিন্তু আগামী মে মাস নাগাদ এই কর্মসূচির আওতায় ১৮ কোটি ৭২ লাখ ডোজ সরবরাহের কথা ছিল।

টিটিএন/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।