ফিকে হচ্ছে ‘মোদি ম্যাজিক’, দুর্ভাবনায় আরএসএস-বিজেপি
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত। কার্যত দিশেহারা দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে দেশের ভেতরে সর্বত্র বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অভিযোগ উঠেছে, তার অদূরদর্শিতার কারণেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে মহামারি। এই যখন পরিস্থিতি তখন একের পর এক নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়ছে বিজেপি। সব মিলিয়ে মোদির জনপ্রিয়তায় কিছুটা হলেও চিড় ধরেছে। তবে কি কেন্দ্রের ক্ষমতাসীনদের ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়েছে মানুষ?
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা মহামারিতে মোদি সরকারের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিজেপির অভিভাবক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) একাংশ। সাত বছর ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার ম্যাজিকে ভর করেই ভোটযুদ্ধে জয় পেয়েছে বিজেপি। তাই এতদিন বিজেপি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অভিব্যক্তি কিংবা দলের ভাবমূর্তি এবং নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে চুপচাপই ছিল আরএসএস।
কিন্তু এবার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা, উত্তরপ্রদেশের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে আরএসএস-এর একাংশ। দলীয় সূত্রের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই দুই নির্বাচনের ফলাফল এবং করোনা পরিস্থিতিতে বিজেপি নেতৃত্বের ওপর রীতিমতো ক্ষুব্ধ অভিভাবক সংগঠনের নেতারা।
এদিকে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে কার্যত ব্যর্থ মোদি সরকার। অক্সিজেন, ভ্যাকসিন, প্রয়োজনীয় ওষুধের জন্য হাহাকার দেশজুড়ে। অভিযোগ উঠেছে, গত এক বছরে স্বাস্থ্য কাঠামো গড়ে তুলতে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এই কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেই চার রাজ্য ও এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিধানসভা ভোট হয়েছে। এরই মধ্যে আশা জাগিয়েও পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করতে পারেনি গেরুয়া শিবির। এমনকি, উত্তরপ্রদেশের পঞ্চায়েত ভোটেও যোগী আদিত্যনাথের বিরোধীরা গড়েছে শক্তিশালী অবস্থান। আর এসবের জন্য মোদি সরকারের ‘ভ্রান্ত’ নীতিকে দায়ী করেছেন দলের একাংশ।
তাদের ভাষ্য, ভারতে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তখন পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। বড় বড় জনসভা, শোভাযাত্রা করেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যা দেশের জনগণকে নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে।
রাজনীতিবীদরা বলছেন, মানুষ প্রিয়জনকে হারানোর কষ্ট বহুদিন পর্যন্ত ভোলে না। আর ঠিক এই ফ্যাক্টর নিয়ে চিন্তিত আরএসএস। ভারতজুড়ে কার্যত মৃত্যুর মিছিল চলছে। বহু মানুষ স্বজনকে হারাচ্ছেন।
সব মিলিয়ে ক্রমশ ফিকে হচ্ছে ‘মোদি ম্যাজিক’। তার ‘আচ্ছে দিন’ এখন রীতিমতো হাস্যরসের ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন তিন বছর পর। এর মধ্যে নতুন কোনো জাদু নিয়ে হাজির হতে না পারলে লেজেগোবরে পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে বিজেপিকে। দলের নেতারাই জানিয়েছেন এমন শঙ্কার কথা।
এছাড়া, বছর ঘুরলেই উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে পঞ্চায়েত ভোটে খোদ মোদির লোকসভা কেন্দ্র বারাণসী এবং অযোধ্যায় নাজেহাল অবস্থায় পড়েছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় সরকারের মতো করোনা পরিস্থিতিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের সরকারও। আর মহামারিতে প্রিয়জনদের অকালমৃত্যু ক্ষুব্ধ করেছে সাধারণ মানুষকে।
ব্যালটে সেই ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটলে ভেঙে পড়তে পারে আদিত্যনাথের বিক্রম।
ভারতের রাজনীতিতে বহুল প্রচলিত কথা হলো, ‘দিল্লির মসনদের রাস্তা যায় উত্তরপ্রদেশ হয়ে।’ তাই এত কম সময়ে কোন ম্যাজিকে বিজেপি এই পরিস্থিতি সামাল দেবে, তা ভেবে উদ্বিগ্ন আরএসএস-ও।
এসএস/এমএস