আবদালা: বিস্ময়-জাগানিয়া করোনা টিকায় ‘দুই মহামারি’ জয় কিউবার
কিউবার আবিষ্কৃত করোনাভাইরাসরোধী টিকা আবদালা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৯২ দশমিক ২৮ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে বলে সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে কিউবার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তারা ৬০ বছরে দুটি মহামারি জয়ের স্বস্তি অনুভব করছেন। প্রথমটি যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয়টি করোনা।
সম্প্রতি এক টুইটবার্তায় কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-কানেল আবদালার প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, দুটি মহামারিতে (করোনাভাইরাস ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা) আক্রান্ত হয়েও ফিনলে ইনস্টিটিউট ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি সেন্টারে আমাদের বিজ্ঞানীরা দুটি কার্যকর ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছেন।
৬০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধের শিকার কিউবা। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশটি মার্কিন বিধিনিষেদের বিরুদ্ধে যেভাবে লড়েছে, এবার করোনার বিরুদ্ধেও যেন সেভাবেই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের দেশ কিউবা মহামারির শুরুতেই চীন-রাশিয়ার তৈরি টিকা আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এমনকি জাতিসংঘের কোভ্যাক্স কর্মসূচির সহায়তা নিতেও রাজি হয়নি তারা।
পরের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেদের ক্ষমতায় টিকা তৈরি করে দেশবাসীকে মহামারি থেকে রক্ষার সেই সিদ্ধান্ত এখন সফল বলে দাবি করছে কিউবা। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, তাদের আবদালা টিকার কার্যকারিতা ফাইজার-বায়োনটেক এবং মডার্নার তৈরি টিকার প্রায় সমান। এটি করোনার বিরুদ্ধে শতকরা ৯২ দশমিক ২৮ ভাগ কার্যকর। শুধু পার্থক্য হচ্ছে, এই টিকার তিন ডোজ নিতে হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুসারে, টিকা অনুমোদনের ক্ষেত্রে সেটির কার্যকারিতা অন্তত ৫০ শতাংশ হতে হয়।
প্রকৃত নায়ক বিজ্ঞানী নিয়েতো
লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে তৈরি প্রথম করোনা টিকা আবদালা। কিউবা এমন একটি টিকা উদ্ভাবনের মূল কৃতিত্ব দিচ্ছে বিজ্ঞানী গেরার্দো এনরিকে গুইলেন নিয়েতোকে। হাভানার সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির (সিআইজিবি) বায়োমেডিকেল রিসার্চের পরিচালক নিয়েতোর নেতৃত্বেই এই মুহূর্তে সবচেয়ে কার্যকর টিকাগুলোর সমমানের একটি টিকা তৈরি করেছেন কিউবান বিজ্ঞানীরা। এ সাফল্য সাড়ম্বরে উদযাপনও করেছে কিউবা।
গত রোববার বাবা দিবসে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে নিয়েতোকে নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রচারিত হয়েছে। সেখানে ৫৮ বছর বয়সী বিজ্ঞানীর সন্তান জানান, তার বাবা পরিবার এবং দেশের মানুষের জন্য কীভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। কিউবায় জাতীয় বীরের মর্যাদাপ্রাপ্ত নিয়েতো বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে সপ্তাহের প্রতিটি দিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সহকর্মীদের সঙ্গে কাজে ডুবে থেকে আজ তিনি তৃপ্ত। কারণ, আবদালার কার্যকারিতা রীতিমতো বিস্ময়কর! নিয়েতোর কথায়, ‘এই টিকা ভালো কাজ করবে তা জানতাম, কিন্তু ফলাফল যে এত ভালো হবে তা ভাবিনি!’
করোনার বিরুদ্ধে কিউবার একাকী যুদ্ধ
দেশটি বর্তমানে করোনার পাঁচটি টিকা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে দুটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হওয়ায় সেগুলো দিয়ে গত মে মাস থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে তারা। এর একটি আবদালা, দ্বিতীয় টিকার নাম সোবেরানা টু। আবদালার তিনটি ডোজ, দু সপ্তাহ পর পর একেকটি নিতে হয়।
গুইলেন নিয়েতো জানান, এ পর্যন্ত অন্তত এক ডোজ করে টিকা পেয়েছেন কিউবার ২২ লাখ মানুষ এবং ১৭ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শেষ। আর নয় লাখ মানুষ ইতোমধ্যে টিকার তিন ডোজই পেয়ে গেছেন।
আবদালার চাহিদা
আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে দেশের ৭০ ভাগ মানুষকে তিন ডোজ টিকা দেয়ার লক্ষ্য নিয়েছে কিউবা। নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এ টিকা রফতানির চেষ্টাও করবে তারা।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল আবদালার কার্যকারিতা চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা করবে। তাদের সবুজ সংকেত পেলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন চাইবে কিউবা। সেখান থেকে ছাড়পত্র পেলেই শুরু হবে রফতানি। ইতোমধ্যে বলিভিয়া, জ্যামাইকা, ভেনিজুয়েলা, আর্জেন্টিনা এবং মেক্সিকো এই টিকা পেতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে
কেএএ/জিকেএস