করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের ‘উর্বরভূমি’ ইন্দোনেশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৫৩ পিএম, ২৩ জুলাই ২০২১

বিশ্বের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ইন্দোনেশিয়ায় মহামারির বর্তমান গতি ও আক্রান্তের হার সুপার স্ট্রেইনের জন্য একটি নিখুঁত প্রজননকেন্দ্র তৈরি করেছে, যা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় আরও বেশি মারাত্মক হতে পারে। গত সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়া দৈনিক আক্রান্তের হারে ভারত এবং ব্রাজিলকে অতিক্রম করে। বৃহস্পতিবার দেশটিতে ৪৯ হাজার ৫০০ জনের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত এবং ১ হাজার ৪৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. ডিকি বুদিম্যান বলেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট সর্বদা এমন অঞ্চল বা দেশগুলোতে শুরু হয়, যারা সহজে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পাঁচ শতাংশের বেশি করোনা টেস্টের ফলাফল পজিটিভ হলে মহামারি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। ইন্দোনেশিয়ায় করোনা মহামারি শুরুর পর ১৬ মাস ধরে আক্রান্তের হার ১০ শতাংশের বেশি ছিল। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে। সুতরাং সহজেই অনুমান করা যায়, ইন্দোনেশিয়ায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা সুপার ভ্যারিয়েন্ট তৈরির সম্ভাবনা প্রচুর।

jagonews24

সংক্রামক রোগ নিয়ে গবেষণা করে এমন একটি সরকারি সংস্থার পরিচালক আমিন সোয়েবানদিরিও বলেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত নজরদারি খুবই গুরত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ইন্দোনেশিয়ায় করোনার প্রকোপ দেখে নতুন ভ্যারিয়েন্টের সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুটি গবেষক দল ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, সেখানে নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাস্থ্য মেট্রিক্স বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. আলী মোকদাদ বলেন, ভাইরাস যত বেশি ছড়ায় তত বেশি নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরির সম্ভাবনা থাকে। তিনি আরও বলেন, ঈদুল আজহার কারণে ইন্দোনেশিয়ায় করোনা ভাইরাস আরও বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার করোনাভাইরাস বিষয়ক টাস্কফোর্স ছুটির সপ্তাহের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে, দেশব্যাপী ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা চলছে। চলমান লকডাউনও বৃদ্ধি করা হয়েছে। করোনা বিধিনিষেধ কার্যকর করার জন্য সারাদেশে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে দেশটির সরকার।

ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন
ভাইরাস জীনের রূপান্তর ঘটিয়ে ক্রমাগত পরিবর্তিত হয় এবং নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্ম দেয়। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. স্টুয়ার্ট রায় বলেন, বিশ্বের সকল প্রান্তেই করোনা ভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কার হচ্ছে। ধীরে ধীরে পরিবর্তন হওয়াই হচ্ছে আরএনএ ভাইরাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

যখন একটি ভাইরাস এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সংক্রমিত হতে পারে, কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য করে অথবা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমায়, সর্বশেষ মৃত্যু ঘটায়- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেটিকে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

jagonews24

বিশ্বে এই মুহূর্তে চারটি ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘আলফা’ ভ্যারিয়েন্ট। প্রথমে এটি আবিষ্কার হয় যুক্তরাজ্যে। পরে ‘বেটা ভ্যারিয়েন্ট’ আবিষ্কার হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। ‘ডেল্টা’ ভ্যারিয়েন্টে আবিষ্কার হয় ভারতে এবং ‘গামা’ ভ্যারিয়েন্ট আবিষ্কার হয় ব্রাজিলে।

ইন্দোনেশিয়ায় ইতোমধ্যে ‘গামা’ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। নতুন আরও ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের সম্ভাবনা রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে ‘আলফা’ ভ্যারিয়েন্ট এখনো সক্রিয়, যদিও ‘ডেল্টা’ ভ্যারিয়েন্টের তীব্রতা অনেক বেশি।

ভারতের শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট শহিদ জামিল বলেন, মূল ভাইরাসের চেয়ে ‘ডেল্টা’ ভ্যারিয়েন্ট চার-পাঁচগুণ বেশি সংক্রামক। তিনি আরও বলেন, ভ্যাকসিন সংকটের কারণে ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান অবস্থা ভারতের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতোই। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত তাদের মাত্র আট শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে।

এমএসএম/কেএএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।