ওমিক্রনে ম্লান বড়দিনের উৎসব
আজ ২৫ ডিসেম্বর যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন। প্রতি বছরের এই দিনে বড়দিন হিসেবে বিশ্বের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা উৎসবে মেতে উঠেন। কিন্তু টানা দুবছর বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির কারণে বড়দিনের জমকালো উৎসবের আয়োজন হয়নি।
করোনার টিকা নেওয়ার কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী বেড়ে যাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন সবাই। ধারণা করা হচ্ছিল, এবার হয়তো করোনার বাড়বাড়ন্ত কমে যাবে। বিশ্বজুড়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা যখন বড়দিনের উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, চাঙা হচ্ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিক সেই মূহুর্তেই নতুন আতঙ্ক হয়ে ধরা দিলো ওমিক্রন।
গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রথম বি.১.১.৫২৯, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্তের খবর আসে। নতুন এই ধরনের নমুনা সংগ্রহ করা হয় গত ৯ নভেম্বর। বর্তমানে বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়েছে ওমিক্রন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনার নতুন ধরনকে উদ্বেগজনক বলছে এবং বারবার বিশ্ববাসীকে সতর্ক করছে।
বিশ্বব্যাপী বড়দিনের উৎসবকে ঘিরে নানা আয়োজন থাকলেও নেই কোনো উৎসবের আমেজ। রাস্তার পাশে বড় বড় ভবনজুড়ে আলোকসজ্জার কাজ করা হলেও সবকিছুর মধ্যেই দেখা যাচ্ছে অন্ধকারে আচ্ছন্ন পরিবেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, জাপানের টোকিও, এমনকি ফিলিপাইনেও বড়দিনের উৎসবকে ঘিরে আলোকসজ্জার কাজ করা হলেও নেই মানুষের কোলাহল। এদিকে, ওমিক্রন আতঙ্কে বড়দিনের উৎসবেও সপ্তাহ জুড়ে বিশ্বের সাড়ে চার হাজার বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
ইসরায়েলের অধিকৃত ফিলিস্তিনি শহর বেথেলহেম। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন যে ,যিশু খ্রিস্টের জন্মস্থান এটি। তাই বড় দিনের উৎসবে এই শহর পরিদর্শনে যেতেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। কিন্তু টানা একবছর লকডাউন থাকার কারণে এবং আবারও ইসরায়েলের সীমান্ত নিষেধাজ্ঞার কারণে ম্লান হয়ে গেছে স্থানীয়দের বড়দিনের উৎসব।
ওমিক্রন সবচেয়ে বেশি কাবু করে ফেলেছে ইউরোপের দেশগুলোকে। ফলে ওমিক্রন ঠেকাতে বড়দিনের উৎসব পালন সত্ত্বেও নানা বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে দেশে দেশে।
নেদারল্যান্ডস আবারও লকডাউন চালু করেছে। ইতালি ও স্পেনে বাড়ির বাইরে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মাস্ক পড়া। ব্রিটেনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড হওয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ক্রিসমাস উপলক্ষে বুস্টার ডোজ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিকদের। ফ্রান্স সরকারও বুস্টার ডোজ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে একবছর আগের চেয়ে এবার লোকজনের মধ্যে কঠোর বিধিনিষেধ মানার প্রবণতা অনেকটাই কমে গেছে বিশ্বব্যাপী। অস্ট্রেলিয়ার সরকার উৎসবের দিন যে কোনো জায়গায় ভ্রমণে অনুমতি দিয়েছে বিগত বছরের তুলনায়। সিডনির ক্যাথলিক আর্চবিশপ অ্যান্থনি ফিশার বলেছেন, অন্ধকার সময়ে আলোর রশ্মি নিয়ে হাজির হয়েছে ক্রিসমাস।
পোপ ফ্রান্সিস বড়দিনের দিনে উৎসব উপলক্ষে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার ব্যাসিলিকা থেকে বিশ্ববাসীর কাছে শান্তির বার্তা নিয়ে হাজির হন স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর)। এ সময় তিনি সমাজের দরিদ্র মানুষের দিকে নজর দেওয়ার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।
সূত্র: ফ্রান্স ২৪.কম, রয়টার্স
এসএনআর/টিটিএন/এএসএম