কর্মীদের ‘আদর্শ বছর’ হতে পারে ২০২২
করোনা মহামারিতে বিশ্বব্যাপী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চাকরির বাজার। অর্থনৈতিক স্থবিরতায় সংকুচিত হয়েছে কর্মক্ষেত্র। অনেকেই হারিয়েছেন পছন্দের অথবা জীবিকা অবলম্বনের একমাত্র চাকরিটি। এতেই বাস্তব জীবনে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন অনেকে। অন্যদিকে ব্যয়ের ভার বহন করতে না পেরে শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছেন কেউ কেউ।
২০২১ সালজুড়েই ছিল এমন হাহাকার পরিস্থিতি। অবশেষে পাওয়া না পাওয়ার বেদনা নিয়ে শেষ হলো একুশ। শুরু হলো ইংরেজি নতুন বছর। চাকরিপ্রত্যাশীদের মনে একটাই প্রশ্ন কেমন কাটবে ২০২২ সাল। কর্মীবান্ধব পরিবেশ কি আবার ফিরে আসবে? পাবেন কি নিজের পছন্দের চাকরি অথবা উপযুক্ত বেতন?
এমন পরিস্থিতিতে ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে আসতে পারে কর্মীদের জন্য যথাযথ পরিবেশ। বাজরে তারা অনেক প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। বিভিন্ন ইস্যুতে চাকরিদাতাদের সঙ্গে দরকষাকষিও করতে পারেন তারা। যেমনটা বিগত কয়েক বছরে হয়নি। যা খুবই আশাব্যঞ্জক।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ ও ২০২১ সালে চলা কঠোর লকডাউনে কর্মীরা সবচেয়ে বেশি খারাপ সময় পার করেন। মহামারির প্রথম বছরে বিশ্বব্যাপী কর্মঘণ্টা কমে ৯ শতাংশ। এসময় অনেক দেশে দ্রুত বেকারত্ব বাড়তে দেখা গেছে। যা সামাজিক নিরাপত্তা ও বেতন-ভাতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
কিছু বিশেষজ্ঞ আগামীর চাকরির বাজার নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, মহামারি এক কঠিন যুগের সূচনা করতে পারে যেখানে চাকরি পেতে কর্মীদের সংগ্রাম করতে হবে। তবে হতাশা না হওয়ারও অনেক কারণ রয়েছে। কর্মীদের জন্য ২০২২ সাল হতে পারে অনেক সম্ভাবনাময়।
এরই মধ্যে বিশ্বের ধনীদেশগুলোতে ব্যাপক কর্মী ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যে সংখ্যা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি। ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে ধনীদেশের সংগঠন ওইসিডি জানায়, ২০২১ সালের শেষ দিক পর্যন্ত সদস্য দেশগুলোর বেকারত্ব নয় শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। যদিও অনেক দেশ করোনার দ্বিতীয়-তৃতীয় ঢেউ দেখেছে।
তারপরও বেকারত্বের হার অনেক সহনীয় পর্যায়ে আছে। পরিস্থিতি এখনো ততটা খারাপ হয়নি। যতটা প্রত্যাশিত ছিল। এমনকি সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া ইউরোপের দেশগুলোও দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
২০২২ সালে চাকরির বাজারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর কাজ করবে। প্রথম বিষয় হলো বাড়িতে বসে কাজ করা। ধারণ করা হচ্ছে আগের তুলনায় বাড়িতে বসে কাজের সময় পাঁচগুণ বেশি বাড়বে। যেটা মহামারির আগে ছিল অকল্পনীয়। তবে এই পদক্ষেপে উৎপাদন ও সুখী হওয়ার প্রবণতা বাড়বে।
দ্বিতীয় বিষয়টি হলো কাজের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের ব্যবহার বাড়বে। অনেক অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, মহামারি কর্মক্ষেত্রে রোবটের ব্যবহার বাড়াবে। অনেক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র চাকরির বাজরা দখল করতে যাচ্ছে। এটা অনেক বেশি সত্য, যে অতীতের মহামারিগুলো অটোমেশন ব্যবহারে উৎসাহিত করেছে। কারণ রোবট কখনো অসুস্থ হয় না। তবে ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই ধরনের সম্ভাবনা খুবই কম বা খুব অল্প পরিসরেই হবে। অর্থাৎ চাকরির বাজার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র দখল করতে পারবে না।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো নীতিনির্ধারণ। এখানে বলা হয়েছে অনেক কিছুই নীতি নির্ধারণের ওপর নির্ভর করে। দেখে গেছে, মহামারিটির পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিবিদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা অন্যান্য লক্ষ্যগুলো অনুসরণ করার চেয়ে বেকারত্ব কমাতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, কর্মসংস্থান যথেষ্ট বৃদ্ধির জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে বিপরীত চিত্রও রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনা মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি ছাড়ার হিড়িক পড়েছে। মাসিক হিসেবে যা অনেক বেশি। কম মজুরি ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের কারণেই শূন্য পদ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া ধনীদেশগুলোতে রেকর্ড সংখ্যক শূন্যপদ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে অত্যধিক কর্মী শক্তিতে মুদ্রাস্ফীতি হতে তাই নিয়োগকর্তাদেরও কিছু দর কষাকষির ক্ষমতা প্রয়োজন।
এদিকে করোনা মহামারির মধ্যে কর্মীদের ধরে রাখতে ও সহায়তা করতে ভিয়েতনামের কিছু কারখানা বেতন বাড়াচ্ছে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও কারখানাগুলোর উৎপাদন বাড়ানোই মূল লক্ষ্য তাদের। তাদের এমন নীতিও অনেক প্রশংসিত হয়েছে। দেশটিতে ৫৪ হাজার কর্মী নিয়ে সম্প্রতি জরিপ চালিয়েছে একটি নিয়োগ সংস্থা। যেখানে দেখা গেছে, এক-তৃীতাংশ কর্মীর বেতন আগের বছরের তুলনায় আট শতাংশ বেড়েছে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
এমএসএম/এমএস