করোনা পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরবে জীবনযাপন?
২০২০ সালের শুরুতেই যখন করোনাভাইরাসের মহামারি শুরু হলো তখনও কেউ জানতো না যে আরও কতদিন এই পরিস্থিতি ভোগ করতে হবে বা আদৌও আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব কিনা। মহামারির শুরুতেই বিধিনিষেধ এবং কড়াকড়ি আরোপের কারণে বিশ্বের প্রায় ৩৬০ কোটি মানুষকে বাড়িতে থাকার বাধ্যতামূলক নির্দেশ দেওয়া হয়। সামাজিক দূরত্ব এবং বিধিনিষেধ প্রথম দিকে কঠিন মনে হলেও মানুষ এসবে অভ্যস্ত হতে শুরু করে। এমনকি বাড়িতে বসেই অফিসের কাজকর্মে সমান পারদর্শী হয়ে উঠতে শুরু করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
বাড়িতে বসেই কাজ করা, বিভিন্ন বিষয় শেখা এবং একে অন্যের সঙ্গে অভিনব উপায়ে যোগাযোগ বেশ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। তবে তারপরেও অনেকের মনেই প্রশ্ন কবে আবার সব কিছু স্বাভাবিক হবে? করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য ইতোমধ্যেই আমাদের হাতের নাগালে বেশ কিছু কার্যকরী ভ্যাকসিন রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ভ্যাকসিন কর্মসূচি চলছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা থেকে যেসব গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে তা কমাতে এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও কমিয়ে আনতে সক্ষম ভ্যাকসিন। বিভিন্ন কোম্পানির কার্যকরী ভ্যাকসিনগুলো আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরার আশা জোগাচ্ছে। কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে যে, করোনা পূর্ববর্তী সময়ে আমাদের জীবনযাত্রা যেমন ছিল আমরা কি ঠিক আগের মতোই সব কিছুতে ফিরতে পারব?
মহামারির কারণে আমাদের জীবনযাত্রায় কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে তা পরিমাপ করতে একটি ‘স্বাভাবিকতা সূচক’ তৈরি করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। প্রথমত এই সূচকে দেখানো হয়েছে যে, বিমানের ফ্লাইট, বিভিন্ন গণপরিবহন বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেমন পরিবর্তন এসেছে।
দ্বিতীয়ত, বক্স অফিসে সাড়া জাগানো সিনেমা নিয়ে লোকজনের আলাপ আলোচনা, পেশাগত খেলাধুলার বিভিন্ন আয়োজনে লোকজনের উপস্থিতি এবং বাড়ির বাইরে সময় কাটানোসহ অবসর সময় কাটানোর ক্ষেত্রে যেসব পরিবর্তন এসেছে সেগুলোও ওই সূচকের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়েছে। তৃতীয়ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক কর্মকান্ডও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
প্রতিটি ক্ষেত্রে মহামারি পূর্ববর্তী সময়ের সঙ্গে পরবর্তী সময়ের তুলনা করা হয়েছে। ৫০টি দেশের মানুষের ওপর এই জরিপ চালানো হয়। স্বাভাবিক জীবনযাপনের ৮০ ভাগই পরিবর্তন হয়েছে ২০২০ সালের মার্চের শুরুতেই। ২০২০ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝিতে চীনে জীবনযাপন মাত্র ৩৫ ভাগ স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
২০২১ সালে সূচকে বেশ পরিবর্তন আসে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে জীবনযাত্রার স্বাভাবিক অবস্থা ৬০ ভাগ থেকে ৭৯ ভাগে পৌঁছায়। বলা যায়, বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ দেশই করোনা পূর্ববর্তী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে।
স্বাভাবিকতা সূচকের মাধ্যমে গত ১৮ মাসের বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করে সামনের দিনগুলো সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। যেসব দেশের অধিকাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরার অনুমতি দেওয়া উচিত।
তবে সংক্রমণ কমে যাওয়া এবং একই সঙ্গে ভ্যাকসিন গ্রহণের হার বৃদ্ধি করোনা পূর্ববর্তী স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য যথেষ্ট নয়। বিমানের ফ্লাইট, সিনেমা এবং খেলাধুলায় উপস্থিতি সরকারি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে কমিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া বাকি সূচকের মধ্যে আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রম ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বেশি প্রভাবিত হয়েছে। যেহেতু সবচেয়ে কঠোর বিধিনিষেধগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে তাই অনেক ক্ষেত্রেই এখন আর সরকারি ভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না ফলে মানুষ অনেকটাই ছাড় পাচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী খুচরা বিক্রির সংখ্যা এখন প্রাক-মহামারি পর্যায়কে ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া লকডাউন বা কড়া বিধিনিষেধ না থাকায় মানুষ আবারও বাইরে বের হচ্ছে। ফলে বাড়ির বাইরে সময় কাটানোও আগের মতোই অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও মহামারি পূর্ববর্তী অবস্থায় ফেরেনি সিনেমা হলগুলো। অনেকেই বাসায় বসেই সিনেমা উপভোগে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। করোনা মহামারির কারণে আমাদের জীবনযাত্রায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে যেগুলো হয়তো স্থায়ীই হয়ে যাবে। তবে এসব পরিস্থিতিতে মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন যা ইতিবাচকই বলা যায়।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
টিটিএন/এএসএম