মালয়েশিয়ায় নির্বাচনী পালে হাওয়া
![মালয়েশিয়ায় নির্বাচনী পালে হাওয়া](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/--20220919082856.jpg)
মালয়েশিয়ায় নির্বাচনী পালে হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকোবের বক্তব্যে সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সেক্রেটারি জেনারেল আহমেদ মাসলান এক বিবৃতিতে বলেছেন, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে মালয়েশিয়ার ১৫তম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসমাইল সাবরি সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়ে দলটির ‘শীর্ষ পাঁচ’ নেতার সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ১৫তম সাধারণ নির্বাচন নিয়ে শীর্ষ পাচঁ নেতা বৈঠকে বসবেন। মহাসচিব আহমদ মাসলান বলেছেন, বৈঠকটি রাত ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে এবং সন্ধ্যায় সুপ্রিম কাউন্সিলের বৈঠক হবে।
তার মতে, শীর্ষ পাঁচ নেতা প্রথমে বৈঠক করবেন। তারপর রাজনৈতিক ব্যুরো ও তারপর সুপ্রিম কাউন্সিল বৈঠকে বসবেন। শীর্ষ পাঁচজন হলেন- দলের সভাপতি আহমদ জাহিদ হামিদি, উপ-সভাপতি মোহাম্মদ হাসান এবং তিন সহ-সভাপতি- খালেদ নরদিন, মাহজির খালিদ ও ইসমাইল।
দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. নাজিব রাজাককে দুর্নীতির মামলায় জেলে পাঠানোর পর শাসক দল আমনুর পক্ষ থেকে তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়েছে দ্রুত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের। তা না হলে আমনুর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবকে বরখাস্ত করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনী হাওয়ার আকস্মিক এই উত্থানে বিরোধী পাকাতান হারাপান জোটের প্রধান আনোয়ার ইব্রাহিম এক মাসের মধ্যেই নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে শাসক জোটের অংশীদার পেরিকাতান ন্যাশনাল মহিউদ্দিন ইয়াসিনকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আর শতায়ু ছুঁই ছুঁই সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ রোগশয্যা থেকে উঠে অল মালয় পার্টির জোট গঠনের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। তিনি নিজে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথাও জানিয়েছেন। যদিও তিনি বলেছেন, ২০২২ সালে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
মালয়েশিয়ার সংসদ ভবন
মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে প্রতিদিনই নতুন নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে। সব দলই ক্ষমতায় যেতে মরিয়া। তবে পেছন থেকে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন দেশটির গভীর ক্ষমতাবলয়। যে বলয়ে রয়েছে দেশটির মালয় সুলতানরা, প্রতিরক্ষা বাহিনী, নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো ও অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক কিছু ব্যক্তি। দেশটির ৬০ শতাংশের বেশি মালয় ও ভূমিপুত্র জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এই গভীর ক্ষমতা বলয় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
নির্বাচনী হাওয়া শুরুর পর থেকে মূলত তিনটি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ধারা তৈরি হয়েছে। একটি হলো আমনুর নেতৃত্বাধীন বারিসান ন্যাশনাল, দ্বিতীয়তটি বারসাতু, পাস ও বর্নিও মালয়েশিয়ার কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গঠিত পেরিকাতান ন্যাশনাল। এ দু’টি জোট এখন সরকারে রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে বিরোধী জোট পাকাতান হারাপান।
এই জোটের নেতা হিসেবে ডা. মাহাথির মোহাম্মদ ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি অনুসারে আনোয়ার ইব্রাহিমকে ক্ষমতা না দিয়ে নিজের প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে ক্ষমতার লাইন থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। তার সহযোগী মহিউদ্দিন ইয়াসিন ‘শেরাটন অভ্যুত্থান’ নামে খ্যাত এক নাটকীয় ঘটনায় বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান।
এরপর মাহাথির শাসক জোট এবং বিরোধী পক্ষ দুই জায়গা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এখন তিনি মালয় দলগুলো নিয়ে একটি জোট গঠনের কাজ করছেন। দুটি লক্ষ্য নিয়ে তিনি এগোতে চাইছেন। প্রথমত, বৃহত্তর আমনু গঠন করে এই শাসক দল থেকে ছিঁটকেপড়া সবাইকে আবার ঐক্যবদ্ধ করা। মহিউদ্দিন ইয়াসিনও তা সমর্থন করছেন।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ড. নাজিবকে নির্বাচনের আগেই জেলে পাঠানো হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এ পথে বাধা হয়ে আছেন আমনুর বর্তমান নেতৃত্ব। দ্বিতীয়ত, বৃহত্তর আমনু গঠনের উদ্যোগ সফল না হলে অন্যসব মালয়ভিত্তিক দল নিয়ে একটি জোট তৈরি করে নির্বাচন করা।
এ ব্যাপারে মাহাথিরের গোপন সহযোগী আজমিন আলী নেপথ্যে কাজ করছেন। বারিসান আর পেরিকাতান ন্যাশনালের মধ্যে সমঝোতা না হলে মহিউদ্দিন ইয়াসিনও এই ধারায় মিলতে পারেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এ ধরনের রাজনৈতিক মেরুকরণ হলে তিনটি প্রধান ধারার মধ্যে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। একপক্ষে থাকবে বারিসান ন্যাশনাল আর এক বিপরীতে পাকাতান হারাপান জোট ও পেরিকাতান ন্যাশনাল জোট। এভাবে নির্বাচন হলে ফলাফল কেমন হবে তা নিশ্চিত করে বলার সময় এখনো আসেনি।
এমআরএম/জিকেএস