জলবায়ু সম্মেলন

‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল গঠনে ঐতিহাসিক ঐকমত্যে বিশ্বনেতারা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:১৯ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০২২
জলবায়ু সম্মেলনের শেষ দিনে কপ-২৭ প্রেসিডেন্সি সদস্যরা /ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অনুন্নত দেশগুলোকে অর্থসহায়তা দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে এবারের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন বা কপ-২৭ সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো।

স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ নভেম্বর) মধ্যরাতে পূর্ণ একটি সেশন শেষে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তার উদ্দেশ্যে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ নামের একটি তহবিল গঠনে ঐতিহাসিক ঐকমত্যে পৌঁছান বিশ্বনেতারা।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রায় সারারাত ধরে চলা উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনার পর, মিশরীয় কপ-২৭ প্রেসিডেন্সি সামগ্রিক চুক্তির একটি খসড়া প্রকাশ করে। একইসঙ্গে এটিকে কপ-২৭ সম্মেলনের চূড়ান্ত চুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনেরর আহ্বান করা হয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, চুক্তি অনুসারে, প্রাথমিকভাবে সব উন্নত দেশ, তাদের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তহবিলটিতে অর্থদান করবে।

এদিকে চীনের মতো বৃহৎ অর্থনীতির দেশকে প্রাথমিকভাবে এ তহবিলে অর্থ দিতে হবে না, এমনকি চীনের বিষয়ে আগামী সম্মেলনে আলোচনা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

চীনের বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। তাদের মতো চীনসহ যেসব উন্নয়নশীল দেশ বৃহৎ আকারে পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী, তাদেও এ তহবিল গঠনে অবদান রাখতে হবে।

আরও জানা যায়, সহায়তা তহবিল গঠনে একমত হলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার বৈশ্বিক সংকল্পের রূপরেখা বাস্তবায়নের বিষয়ে বৃহত্তর চুক্তি অনুমোদনে বিলম্ব করেছে দেশগুলো।

সম্মেলনে অংশ নেওয়া ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রান্স তিমারম্যানস জানান, ইইউ জলবায়ু বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর জন্য 'লস অ্যান্ড ড্যামেজ' নামে একটি তহবিল গঠনে সম্মত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোর জোট জি-৭৭ অন্তভূক্ত দেশগুলো এ তহবিল গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিল।

জার্মান সংবাদমাধম ডয়চে ভেলে বলছে, ৯ নভেম্বর শুরু হওয়া সম্মেলন ১৮ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, ঐকমত্যে পৌঁছাতে দেশগুলোর আরও একদিন সময় লেগে যায়। মূলত ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল গঠন নিয়ে আলোচনা দীর্ঘ হওয়ার কারণেই সম্মেলন শেষ হতে একদিন বেশি সময় লাগে।

রয়টার্স বলছে, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল গঠনের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর যে দাবি ছিল, তা গত দুই সপ্তাহের শীর্ষ সম্মেলনে অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। আর এ নিয়ে ধনী ও উন্নয়শীল দেশগুলোর মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলে আসছিল বলেই, সম্মেলনটি নির্ধারিত দিনে শেষ হয়নি।

সম্মেলনে অংশ নেওয়া মালদ্বীপের পরিবেশমন্ত্রী আমিনাথ শোনা বলেন, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল নিয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। তবে, সেটি অনুমোদন পাবে ভোটের মাধ্যমে। তাছাড়া ঐক্যমত্য নিয়ে যে খসড়া চুক্তি হয়েছে, সেটির চূড়ান্ত বাস্তবায়নে প্রায় ২০০টি দেশের অনুমোদন প্রয়োজন।

এদিকে, প্রায় প্রতিটি সম্মেলনেই সব ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে ভারত ও অন্য দেশগুলোকে অনুরোধ করে আসা হলেও, সম্মেলন শেষে শুধু কয়লার ব্যবহার বন্ধের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এতে জীবাশ্ম জ্বালানির বিরোধিতাকারী দেশগুলো বেশ হতাশ হয়েছে।

২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে সর্বোচ্চ কার্বন নিসঃরণকারী ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখার জন্য যা করা দরকার, তা করা হবে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো আশানুরূপ পদক্ষেপ নেয়নি অধিকাংশ ধনী দেশ।

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।