মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক বিরোধী প্রচারণা


প্রকাশিত: ১০:৩৮ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক বিরোধী প্রচারণা এখন তুঙ্গে। বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ নতুন শ্রমিক নেয়ার ঘোষণার পর দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিক বিরোধী প্রচারণা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। দেশটির সাধারণ মানুষ থেকে শরু করে মিডিয়া পর্যন্ত সকলে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে মেতে উঠেছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এই অপপ্রচারের পেছনে ইন্দন দিচ্ছে ভারতীয় বংশদ্ভুত মালয়রা। তাদের ইন্দনে সুর মিলিয়েছে ভূমিপুত্রা মালয়েশিয়ানরা। পাশাপাশি সেদেশের ইমিগ্রেশন বিভাগও বসে নেই ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগের চুক্তি সই হওয়ার দুই দিন পর থেকে শুরু হয়েছে ধর পাকড়। গত কয়েকদিনে অভিভাসন বিভাগ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক গ্রেফতার করেছে। শুধু তাই নয় ধর্ষণের অভিযোগে মেরে রক্তাক্ত করেছে এক বাংলাদেশি শ্রমিককে।

malayতাছাড়া, রাস্তা-ঘাটে এবং রেস্টুরেন্টে বাংলাশিয়া-বাংলাশিয়া বলে মালয়েশিয়ানরা টিটকারী করে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা জাগো নিউজকে জানান, গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি আমরা। প্রতিদিন নতুন নতুন খবর বিচলিত করছে। সত্যি খবর যে কোনটা আর কোনটা আমরা বিশ্বাস করবো বুঝতে পারছি না। বাংলাদেশ সরকারের উচিত এ দেশের সরকারের কাছে জবাবদিহি চাওয়া। তানাহলে এ রকম পরিস্থিতি চলতেই থাকবে।

মালয়েশিয়া বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাশেদ বাদল জাগো নিউজকে বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রায় সাড়ে আট লাখ প্রবাসী বাস করছেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তারা রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন দেশে। দু’দেশের পারস্পরিক ইস্যু নিয়ে সে দেশের সাধারণ জনগণ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। আমাদের দেশের ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগ শুধু ইস্যু নয় যখন সাধারণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে তা ফলাও করে সোশ্যাল মিডিয়া ও সেদেশের পত্রপত্রিকায় পকাশ করা হয়। আর যখন তদন্ত করে প্রমাণিত হয় নির্দোষ তখন এ খবরটি আর প্রকাশ হয় না।

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও মালয়েশিয়ার পক্ষে দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্ড রায়ট চুক্তিতে সই করার পরের দিনই সে দেশের মালয়েশিয়ান ইনসাইডার নামের একটি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে জানানো হয়েছে, মালয়েশিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (এমটিইউসি) বাংলাদেশ থেকে নতুন ১৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার ঘোষণার বিষয়ে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জককে একটি রাষ্টীয় তদন্ত কমিশন গঠন করার আহ্বান জানিয়েছে।

malay
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে এমটিইউসি জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার জনগণের জন্য কি করা উচিত সে বিষয়ে সরকারের ভাবা উচিত।

তারা জানিয়েছে, তিন বছর মেয়াদকালের জন্য ১৫ লাখ শ্রমিক সেদেশে আনার ব্যাপারে দুই দেশের সরকারের ওই পারস্পারিক সমঝোতা স্বারকটি অগ্রহণযোগ্য।

তারা বলেছে, ‘বাংলাদেশি শ্রমিকরা ইতোপূর্বে খামারের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পেত। কিন্তু এখন তারা চাকরি, চাষাবাদ, উৎপাদন ও নির্মাণ খাতে নিয়োগ পাচ্ছেন’। তাদের প্রশ্ন ‘এই মুহূর্তে মালয়েশিয়ার স্থানীয় আধা দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকের ক্ষেত্রে করণীয় কি হবে?’

মালয়েশিয়ার আরো একটি অনলাইন জানায়, বাংলাদেশি শ্রমিকরা দীর্ঘদিন মিথ্যা অভিযোগের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন। মালয়েশিয়ায় বেকারত্ব থেকে শুরু করে যে কোনো অপরাধের জন্য তাদের দায়ি করা হয়। এতে উস্কানি দিচ্ছে কিছু মিডিয়া।

এবিষয়ে কিশোরগঞ্জের আনিছুর রহমান সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, মালয় ইন্ডিয়ানরা বাংলাদেশিদের বিরোধিতা করে আসছে অনেক আগে থেকেই। তারা চায় না বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়ায় এসে কাজ করুক। বাংলাদেশিরা আসলে তাদের কর্তৃত্ব হারাবে বিধায় বাংলাদেশের বিরোধিতা করে।

মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে নিয়োজিত ফার্স্ট সেক্রেটারি এসকে শাহীন জাগো নিউজকে বলেন, শ্রমিক বিরোধী যে অপপ্রচার হচ্ছে সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যপার। তবে মানবিক কারণে যাতে করে আমাদের দেশের শ্রমিকদের অপপ্রচার না করে এ বিষয় নিয়ে সে দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করা হবে।

কর্মরত শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অপপ্রচারে কান না দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রেখে কাজ করতে হবে এবং সেদেশের আইন মেনে চলতে হবে। কোন পরামর্শের প্রয়োজন হলে মিশনে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

অবৈধদের বৈধ করার ব্যাপারে শাহীন বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ক্রাইটেরিয়ার মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সরকার কাজ করছে। রি-হেয়ারিংয়ের আওতায় কারা আসবে কারা আসবে না আমাদের কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের নিয়ে সমন্বয় করে লিফলেট আকারে প্রচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই বলেও জানান তিনি ।   

এসকেডি/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।