দেবিদ্বারে বাড়ছে নির্বাচনী উত্তেজনা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮:৪০ এএম, ১৯ মার্চ ২০১৬

আগামী ২২ মার্চ মঙ্গলবার ইউপি নির্বাচনের প্রথম ধাপে কুমিল্লার ১৬ উপজেলার মধ্যে শুধু মাত্র দেবিদ্বার উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনের দিন যতোই এগিয়ে আসছে দেবিদ্বারে ভোটের মাঠে উত্তাপ ততোই বাড়ছে।

এরই মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নে আ.লীগ বনাম বিদ্রোহী ও জাতীয় পার্টির মাঝে সংঘাত-সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি ইউনিয়নে আ.লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে। অধিকাংশ ইউনিয়নে আ.লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বিদ্রোহীদের সঙ্গেই নৌকা প্রতীক নিয়ে দলীয় প্রার্থীদের ভোটের লড়াইয়ে নামতে হয়েছে।

বড়শালঘর ইউনিয়নে আ.লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম ভূইয়া ঝারু( নৌকা) ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. ইউনুছ মিয়া মাস্টারের (আনারস) কর্মী সমর্থকদের মাঝে এরই মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টা-পাল্টি বাড়ি-ঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ভোটারা শঙ্কিত থাকলেও ভোটের মাঠে এগিয়ে আছেন নৌকার প্রার্থী।

আ.লীগের প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জানান, দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনুস মাস্টারের কর্মীরা ভোট কেন্দ্র দখল করার হুমকী দেয়ায় ভোটারদের মাঝে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
 
ইউছুফপুর ইউনিয়নে আ.লীগের প্রার্থী মোস্তফা কামাল চৌধুরী (নৌকা) ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান ডা. জসিম উদ্দিন (আনারস) মাঠে থাকলেও শুক্রবার বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

এ ইউনিয়নে অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির মো. নাছির উদ্দিন (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী (চশমা), দেলোয়ার হোসেন সরকার (ঘোড়া), আনোয়ারুল হক (টেলিফোন), শাহআলম (রজনীগন্ধা)।  তবে এ ইউনিয়নে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী জসিম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় নিশ্চিত বিজয়ের দ্বার প্রান্তে রয়েছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী।
 
রসুলপুর ইউনিয়নে রয়েছেন আ.লীগের মো. কামরুল হাসান (নৌকা), দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম সরকার ( আনারস), বিএনপির মাহবুবুল আলম (ধানের শীষ), মো. পারভেজ আহম্মেদ ভূইয়া (হাতপাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জাকির হোসাইন (মোটর সাইকেল), ফিরোজ আহম্মেদ খান (চশমা), মো. সৈয়দ আলী (ঘোড়া), মো. শাহাজ উদ্দিন সরকার (টেলিফোন)।

এ ইউনিয়নে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ভোটের মাঠে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী মাহবুব। তবে বিএনপির প্রার্থী মাহবুবুল আলম সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি এ ইউনিয়নে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়েছেন।

সুবিল ইউনিয়নে আ.লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এম.এ রশিদ (নৌকা) , বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম সারোয়ার মুকুল ভূইয়া (চশমা), মোহাম্মদ হোসেন (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নাজমুল হাসান সরকার (ঘোড়া), মো. আবু তাহের সরকার (আনারস), মাহবুব আলম  (মোটরসাইকেল) প্রতীকে মাঠে রয়েছেন।

এ ইউনিয়নে আ.লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় বেকায়দায় রয়েছেন নৌকার প্রার্থী এম.এ রশিদ। তাই এ ইউনিয়নে নৌকার সাথে আনারসের হাড্ডা-হাড্ডি ভোটের লড়াই হবে বলে ভোটারদের অভিমত।
 
ফতেহাবাদ ইউনিয়নে আ.লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার এম.এ ছালাম (নৌকা), দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মফিজুল ইসলাম (আনারস), বিএনপির জাহিদ হাসান (ধানের শীষ), জাপার আলেক মিয়া (লাঙ্গল), খন্দকার গোলাম মোস্তফা (কুড়েঘর), স্বতন্ত্র প্রার্থী মোসা. পারুল আক্তার (মোটরসাইকেল), মো. এরশাদ মিয়া (টেলিফোন) প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন। এ ইউনিয়নে নৌকা ও ধানের শীষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।  তবে ভোটের লড়াইয়ে এগিয়ে আছেন নৌকার প্রার্থী খন্দকার এম.এ সালাম।
 
জাফরগঞ্জ ইউনিয়নে আছেন আ.লীগের প্রার্থী সোহরাব হোসেন (নৌকা), দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আনোয়ার হোসেন (আনারস), বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপির প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান (ধানের শীষ), মো. রুহুল আমীন (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর এই.এস.এম.কে রহমান (হাতপাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জাকির হোসেন (মোটরসাইকেল), মো. আবুল হাসানাত (রজনীগন্ধা), মো. আমির হোসেন (টেলিফোন)। এ ইউনিয়নে নৌকা বনাম ধানের শীষে লড়াই হবে বলে ভোটারদের অভিমত।

এলাহাবাদ ইউনিয়নে আ.লীগ মনোনীত ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম সরকার (নৌকা), বিএনপির কাজী মাসুদ হাসান (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর মাহবুবুর রহমান ফিরোজ (হাতপাখা) মাঠে রয়েছেন। তবে ভোটের মাঠে জনসমর্থনে এগিয়ে আছেন ওই ইউনিয়েনের ৪ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম।

comillah
 
রাজামেহার ইউনিয়নে আছেন আ.লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. নোয়াব আলী খান (আনারস), বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম সরকার তাজু মাস্টার (ধানের শীষ), জাপার মো. আবুল কালাম ভূইয়া (লাঙ্গল)। এ ইউনিয়নে নৌকা ও ধানের শীষের তীব্র ভোটের লড়াই হবে বলে ভোটারদের অভিমত।
 
ভানী ইউনিয়নে আ.লীগের মো. নুরুজ্জামান ভূইয়া মুকুল (নৌকা), দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ হান্নান (আনারস), বিএনপির প্রার্থী মো. আজহারুল ইসলাম ভূইয়া (ধানের শীষ), বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ সরকার (অটোরিক্সা), জাপার মো. আক্তার হোসেন (লাঙ্গল) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হানিফ খান (ঘোড়া) মাঠে আছেন। এ ইউনিয়নে নৌকার সাথে অটোরিক্সার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
 
ধামতী ইউনিয়নে আ.লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ময়নাল হোসেন মনির (নৌকা), বিএনপির মো. আনোয়ার হোসেন ভূইয়া (ধানের শীষ), জাপার একে আজাদ (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী আ. রাজ্জাক (আনারস)। এ ইউনিয়নে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হতে পারে।
 
সুলতানপুর ইউনয়নে আ.লীগের প্রার্থী মো. সফিকুল ইসলাম (নৌকা), দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন (আনারস), স্বতন্ত্র প্রার্থী আলমগীর আলম (টেলিফোন), গোলাম সুলতান আহম্মেদ সরকার (কোড়ে ঘর) মাঠে আছেন। এ ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী জাকির হোসেন (ধানের শীষ) এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর কারণে সুবিধা জনক অবস্থানে রয়েছেন আ.লীগের প্রার্থী সফিকুল ইসলাম। এ ইউনিয়নে আ.লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে সাবেক চেয়ারম্যান শাহ জাহান সরকার দলের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী জসিম উদ্দিনের পক্ষ নিয়ে মাঠে প্রচারণা চালানোর কারণে দলের নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
 
বরকামতা ইউনিয়নে আ.লীগের প্রার্থী মো. জয়নাল আবেদীন (নৌকা) মৃত্যু বরণ করায় এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। এ ইউনিয়নে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন নুরুল ইসলাম ( আনারস), ও বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দের আগেই প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ওই ইউনিয়নে শুধু সাধারণ সদস্য ও মহিলা সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

মোহনপুর ইউনিয়নে আ.লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম (নৌকা), মো. শহিদুল ইসলাম মাস্টার (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর এটিএম সাইফুল ইসলাম (হাতপাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. তৈয়ব আলী (টেলিফোন) ও আবু সাত্তার খান (আনারস) মাঠে রয়েছেন। এ ইউনিয়নে নৌকা বনাম ধানের শীষ প্রার্থীর মাঝে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।

এদিকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা প্রসঙ্গে দেবিদ্বার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, জেলার প্রথম নির্বাচন দেবিদ্বারে অনুষ্ঠিত হবে, তাই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে প্রতিটি কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করার পাশাপাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে র্যাব-বিজিবির টহল, স্টাকিং ফোর্স এবং ম্যাজিস্ট্রেদের সমন্বয়ে মাঠে ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করবে।

এদিকে দলের বিদ্রোহীদের সমঝোতা প্রসঙ্গে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আলহাজ্ব জয়নুল আবেদীন জানান, দলের বিদ্রোহী সমঝোতায় আনতে চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। তাই দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে বিদ্রোহীদের তালিকা জেলা কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার দুপুরে কুমিল্লা উত্তর জেলা আ.লীগের সভাপতি আবদুল আউয়াল সরকার জানান, নির্বাচনের আগেই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কারের চিঠি পাঠানো হবে।

প্রসঙ্গত, দেবিদ্বারের ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে ১২ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৬৪ জন এবং ১৩ ইউনিয়নে সংরক্ষিত মহিলা আসনে ১০৪ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৭৭ জন প্রার্থী রয়েছে। এরই মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন এক নারী সদস্যসহ ৮ জন। ১৩ ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছে  ২ লাখ ৩৭ হাজার ৮০৯ জন।  মোট কেন্দ্র রয়েছে ১২৪টি।

কামাল উদ্দিন/এফএ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।