মালদ্বীপের পাশে চীন, জিনপিংয়ের আশ্বাস কি দিল্লির জন্য হুঁশিয়ারি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৪২ পিএম, ১১ জানুয়ারি ২০২৪
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে নয়াদিল্লি-মালে টানাপড়েনের আবহে এবার সক্রিয় বেইজিং। সফররত মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাদেম মুইজ্জুকে তার দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বোচ্চ সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

জানা গেছে, পাঁচ দিনের চীন সফরের তৃতীয় দিনে বুধবার (১০ জানুয়ারি) জিনপিংয়ের সঙ্গে বেজিংয়ে বৈঠক করেন মুইজ্জু। সেখানেই ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের বিপরীতে মালদ্বীপের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন চীনা প্রেসিডেন্ট। বলেন, বেইজিং মালদ্বীপের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় মর্যাদা রক্ষায় দৃঢ়ভাবে সহযোগিতা করবে।

অন্যদিকে, ওই বৈঠকে বেইজিংকে তাদের বহু পুরনো বন্ধু ও ঘনিষ্ঠতম সহযোগী বলে দাবি করেন মুইজ্জু। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক আর্থিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা সংক্রান্ত কয়েকটি চুক্তিও সই হয়েছে বলে জানা গেছে।

কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, মালদ্বীপকে সহযোগিতার কথা বলে কার্যত ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। জিনপিংয়ের বক্তব্যে স্পষ্ট যে এবার ভারতীয় প্রভাব বলয়ে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে ঢোকার পরিকল্পনা করছে চীনের কমিউনিস্ট নেতৃত্ব। অতীতে কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতেও তাদের এমন ভূমিকা দেখা গেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বয়কট মলদ্বীপ’এর প্রভাব সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে মালদ্বীপ। আগে থেকে মালদ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার প্লেন ও হোটেলে টিকিট বুক করে রাখার পরও তা বাতিল করে চলেছেন একের পর এক ভারতীয়। ক্রমে সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

এমন পরিস্থিতিতে জিনপিং সরকার ও সে দেশের চেম্বার অব কমার্স প্রতিনিধিদের চীন থেকে মালদ্বীপে আরও বেশি পর্যটক পাঠানোর আর্জি জানিয়েছেন মুইজ্জু। বলেছেন, করোনা মহামারির আগে চীন ছিল মালদ্বীপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী। তিনি চান সেই পরিস্থিতি আবার ফিরে আসুক।

গত সেপ্টেম্বরে দুই দফায় মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছিল। সেই নির্বাচনে মালদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এমডিপি) নেতা ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহকে পরাজিত করে ক্ষমতায় আসেন চীনপন্থি মুইজ্জু। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি ভারতের বিরুদ্ধে একের পর সিদ্ধান্ত নিয়ে যাচ্ছেন। এটি নিয়েই মূলত নয়াদিল্লি-মালের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে।

ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের একাধিপত্যের মোকাবিলা করতে সক্রিয় মোদী সরকার। আমেরিকার নেতৃত্বে গড়া কোয়াডে প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা করছে ভারত। কিন্তু এবার সমুদ্রপথ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগে পড়ছে দেশটি। আর তার অন্যতম কারণ চীন-ঘনিষ্ঠ মুইজ্জু।
প্রেসিডেন্ট হয়েই মুইজ্জু মালদ্বীপে মোতায়েন করা ভারতীয় সেনাদের ফেরত পাঠানোর কথা বলেছিলেন।

এমনকি, গত মাসে তিনি নয়াদিল্লির সঙ্গে চার বছরের পুরনো জলচুক্তিও বাতিল ঘোষণা করেন। ওই চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় নৌবাহিনীর নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পরিবেশ সুরক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সাহায্য করার জন্য মালদ্বীপের জলসীমায় ‘হাইড্রোগ্রাফিক’ সমীক্ষা চালানোর অনুমতি মিলতো। চুক্তি বাতিলের ফলে ভারত এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমণে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই সফরের বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেসব ছবি নিয়ে মালদ্বীপের তিন উপ-মন্ত্রী, মরিয়াম শিউনা, মালশা শরিফ ও মাহজুম মাজিদ উপহাস করেন ও মোদীকে ‘পুতুল’ ও ‘জোকার’ বলে মন্তব্য করেন।

ভারত-ইজরায়েল সম্পর্ক নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়। পরে অবশ্য বিতর্কের মুখে পোস্টগুলো মুছে দেয় মন্ত্রীরা। তবে তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। ওই তিন মন্ত্রীকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু।

সূত্র: এএফপি, গ্লোবাল টাইমস

এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।