কলকাতায় শুধু একটি মসজিদের জন্য আরেক ‘হাওড়া ব্রিজ’

পশ্চিমবঙ্গ প্রতিনিধি পশ্চিমবঙ্গ প্রতিনিধি কলকাতা
প্রকাশিত: ০৭:৩৬ পিএম, ০৬ এপ্রিল ২০২৪
দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরের ‍ওপর ‘হাওড়া ব্রিজের’ আদলে নির্মিত সেতু

কলকাতায় গিয়ে হাওড়া ব্রিজের নাম শোনেননি বা এই ব্রিজ দেখেননি, এমন বাংলাদেশির সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু জানেন কি, ব্রিটিশ যে সংস্থাটি হাওড়া ব্রিজ বানিয়েছিল, তারা হুবহু এটির আদলে আরেকটি ঝুলন্ত সেতু বানিয়েছিল? তাও কলকাতার বুকেই।

তাও আবার কেন জানেন? শুধু একটি মসজিদে যাওয়ার জন্য। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। একটি মসজিদে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করতেই এই ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। আলোচিত সেই প্রার্থনালয় হলো প্রাচীন বাংলার সংস্কৃতি বহন করে আসা দক্ষিণ কলকাতার ‘লেক মসজিদ’।

খোদ তিলোত্তমার বুকে একটি হ্রদের মাঝখানে অবস্থিত এই মসজিদ শহরের অনেকগুলো গোপন রহস্যের মধ্যে একটি। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যাতে জলাশয় পেরিয়ে মসজিদে যেতে পারেন, সে কারণেই এ ঝুলন্ত ব্রিজটি বানানো হয়।

দক্ষিণ কলকাতার ১৯২ একর আয়তনজুড়ে রবীন্দ্র সরোবর হ্রদ। এই বিশাল বিস্তৃত হ্রদ বা জলাশয়ের মাঝখানে ছোট্ট একটা দ্বীপ। সেখানেই রয়েছে রবীন্দ্র সরোবর লেক মসজিদ।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৮২৪ সালে মসজিদটি নির্মিত হয়। পরে লর্ড কার্জনের অধীনে কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট পুরো এলাকা দখল করার পর তা সুন্দর করা এবং রাস্তা নির্মাণ ও বসবাসের জন্য এলাকার উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১১ সালে এ অঞ্চলে খনন করা হয় বিশাল জলাশয়। ৭৬ দশমিক ৭৬ হেক্টর সেই জলাশয়ের আয়তন। তার মাঝে মসজিদ। এক সময় নৌকায় মুসল্লিরা নামাজ পড়তে যেতেন।

পরে নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বার্ন অ্যান্ড কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় একটি সেতু নির্মাণের, যাতে মুসলমানরা পশ্চিম পাশে অবস্থিত মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পারেন। এই বার্ন কোম্পানিই কলকাতা ও হাওড়াকে জুড়ে দিতে তৈরি করেছিল ঝুলন্ত ব্রিজ, যেটিই মূলত হাওড়া ব্রিজ নামে পরিচিত। বর্তমানে সেতুটির নাম রবীন্দ্র সেতু। সেই ব্রিটিশ সংস্থা ১৯২৬ সালে হুবহু হাওড়া ব্রিজের আদলে তৈরি করে মসজিদের জন্য একটি সেতু।

বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতা হিন্দু অধ্যুষিত। তবে এর আশেপাশে বেশ কিছু মুসলিম পরিবার বসবাস করে। পবিত্র রমজান মাসে ৪০ থেকে ৫০ জন মুসল্লি নামাজ পড়ার পাশাপাশি প্রতিদিন ইফতার করতে এই মসজিদে আসেন।

লেক মসজিদের ইমাম একজন বিহারি, যার নাম মোহাম্মদ নওশাদ। ১২ বছর ধরে এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, রমজান মাসে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন ইফতার করছেন এখানে। বিশেষ দিনে ৭০ থেকে ৮০ জন ইফতার মাহফিলে শামিল হন। এখানে সব ধর্মের মানুষই আসেন, কোনো বাধা-নিষেধ নেই।

বেশ কিছুদিন ধরে কলকাতায় রয়েছেন উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা এমানুর রহমান। লেক মসজিদে ইফতার করে তিনি বলেন, উত্তর প্রদেশে থেকে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা কলকাতায় এলেই এখানে আসি। আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছিলাম। আমার পরিচিত একজনের কাছ থেকে জানতে পারলাম, এই মসজিদে প্রার্থনা করলে অনেক দোয়া কবুল হয়। তার প্রমাণও আমি পেয়েছি।

লেক মসজিদে যাওয়ার জন্য আপনাকে লেক ক্লাবের প্রধান ফটকের বাম দিকে একটি সরু পথ খুঁজে বের করতে হবে। দুটি ধাতব পোস্ট মাটিতে লাগানো থাকায় এর ভেতরে গাড়ি ঢুকতে পারে না। পোস্ট থেকে কয়েক মিটার দূরে ডান দিকে বড় ধাতব গেট। সেই গেট দিয়ে একটি পথ সেতুর দিকে চলে গেছে, যা মসজিদটি তীরের সাথে সংযুক্ত করেছে।

সেতু পার হয়ে আপনি যেখানে নামবেন সেখানেই জুতা খুলে মসজিদের ভেতরে চলে যান ও ইমাম মো. নওশাদের সঙ্গে দেখা করুন। অন্য কিছু করার আগে তার অনুমতি নেওয়া জরুরি। মসজিদে যারা প্রবেশ করবেন, তাদের অবশ্যই শালীন পোশাক পরতে হবে। মসজিদটির চারপাশের মনোরম দৃশ্য আপনার মনকে আরও শীতল-শান্ত করে তুলবে।

ডিডি/এসএএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।