ড. সাখাওয়াতের পরামর্শ

জনস্বাস্থ্যে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার গড়তে করণীয়

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আনিসুল ইসলাম নাঈম আনিসুল ইসলাম নাঈম , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১২:৫১ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বা জনস্বাস্থ্য হচ্ছে একটি বিজ্ঞান এবং শিল্প। যা ব্যক্তি, সম্প্রদায়, সমাজ, সংস্থা ও সমাজে বিরাজমান অন্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ, মানব স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং দীর্ঘায়িত সুস্থ জীবনের নিশ্চয়তা দেয়। পাবলিক হেলথের বা জনস্বাস্থ্যের বিষয়বস্তু হচ্ছে মানুষের রোগ নিয়ে গবেষণা ও প্রতিরোধে পদ্ধতি-ব্যবস্থাপনার আবিষ্কার।

এ বিষয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের নানা দিক নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিষয়ে পড়ার যোগ্যতা কী?
ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়তে হবে। এ বিষয়ে পড়ার জন্য এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় কমপক্ষে জিপিএ ৪.০০ পয়েন্ট থাকতে হবে। এ ছাড়া উভয় পরীক্ষায় টোটাল জিপিএ সর্বনিম্ন ৯.০০ পয়েন্ট থাকতে হবে। পাশাপাশি জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিতে ‘এ গ্রেড’ থাকতে হবে। এ বিষয়ে কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে। এসব প্রোগ্রামে ভর্তি হতে মেডিক্যাল সায়েন্স, সোশ্যাল সায়েন্স, বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিষয়ে অনার্স পাস হতে হবে।

জাগো নিউজ: এ বিষয়ে পড়ার জন্য কোথায় কোথায় ভর্তি হওয়া যায়?
ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন: বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স কোর্সটি ২০১১ সালে চালু হয়। এখানে স্নাতকের পাশাপাশি মাস্টার্স, এমফিল এবং পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ আছে। বেসরকারির মধ্যে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রোগ্রাম চালু আছে। তবে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে। এরমধ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি। এছাড়া ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) থেকে এমবিবিএস ডাক্তাররা মাস্টার্স (এমপিএইচ) ডিগ্রি নিতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এমবিবিএস ডাক্তারদের মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু হয়েছে।

আরও পড়ুন: প্রোডাক্ট ডিজাইন থেকে মাসে আয় ৬ লাখ

জাগো নিউজ: পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স প্রাোগ্রামে কী কী কোর্স পড়ানো হয়?
ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন: পাবলিক হেলথ একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়। প্রোগ্রামটিতে বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার কম্বিনেশন আছে। এতে বেশ কয়েকটি কোর্স আছে। এর মধ্যে স্নাতক (বিপিএইচ) প্রোগ্রামে ইন্ট্রোডাকশন টু পাবলিক হেলথ, বেসিক বায়োকেমিস্ট্রি, মেন্টাল হেলথ, হিউম্যান অ্যানাটমি, এপিডেমিওলজি, বায়োস্ট্যাটিস্টিক্স, পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন, এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, অ্যাকুপেশনাল হেলথ, হসপিটাল মেনেজমেন্ট, রিপ্রোডাক্টিভ অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ, হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড হেলথ প্রমোশন, গ্লোব্যাল হেলথ, ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড হেলথ, ফুড সেফটি অ্যান্ড হেলথ ইত্যাদি কোর্স পড়ানো হয়। পাশাপাশি মাস্টার্স (এমপিএইচ) প্রোগ্রামে অ্যাডভান্স এপিডেমিওলজি, সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ, বায়োইনফরমেটিক্স, ট্রপিক্যাল ডিজেইস, আরবান হেলথ, অ্যাডভান্স বায়োস্ট্যাটিস্টিক্স, অ্যাডভান্স পাবলিক হেলথ নিউট্রিশিয়ান, অ্যাডভান্স ইনভায়রনমেন্টাল হেলথ এবং গ্লোব্যাল মেন্টাল হেলথ ইত্যাদি কোর্সে পড়ানো হয়।

জাগো নিউজ: এ বিষয়ে পড়ে চাকরি বা কাজের সুযোগ কোথায় আছে?
ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন: পাবলিক হেলথে চাকরির অনেক সুযোগ আছে। এখান থেকে একাডেমিয়া, ইন্ডাস্ট্রি, রিসার্চ ইনস্টিটিউট, সরকারি অফিসার, নন-গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশন, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সেক্টরে কাজের সুযোগ আছে। বেশ কিছু মাল্টিন্যাশনাল এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন অর্গানাইজেশনে জবের সুযোগ আছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অর্গানাইজেশনের মধ্যে আইইডিসিআর, আইসিডিডিআর’বি, ডব্লিউএইচও, ইউএনএফপিএ, ইউএনডিপি, ইউএস ভলান্টিয়ার, এডিবি, ইউএনএআইডিএস, ব্র্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেন, ওয়াটার এইড, ইউনিসেফ, জাইকা, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানে বিশাল কাজের ক্ষেত্র আছে। এছাড়া হেলথ এডুকেশন, হসপিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, রিসার্চ কোঅর্ডিনেটর, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, কনসালটেন্ট, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট, এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, এপিডেমিওলজিস্ট, স্পেশ্যালিস্ট হিসেবে কাজের সুযোগ আছে।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশে এ বিষয়ে গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজনীয়তা কেমন?
ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন: বাংলাদেশে পাবলিক হেলথ বিষয়ে গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিভিন্ন কারণে সৃষ্ট নানাবিধ স্বাস্থ্যঝুঁকি, যেমন- করোনা, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, জিকা, কলেরা, বসন্ত, মহামারি এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্য, যেমন- বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ ও গ্র্যাজুয়েটদের গুরুত্ব অপরিসীম। করোনা মহামারির পর পাবলিক হেলথের গুরুত্ব মানুষ বুঝতে পেরেছে। একটি মহামারি পুরো দেশ বা বিশ্বকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দেয়। এ মহামারি থেকে মানুষদের সচেতন করা এবং রোগ থেকে রক্ষা করতে পাবলিক হেলথে গ্র্যাজুয়েটদের অনেক বড় ভূমিকা থাকে। করোনা মহামারির সময় মানুষে সচেতন এবং শিক্ষাদানে পাবলিক হেলথ গ্র্যাজুয়েটরা কাজ করেছেন। দেশে নানাবিধ রোগব্যাধির পাশাপাশি হেলথ সেক্টরে জটিলতা আছে। তাই পাবলিক হেলথে গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজনীয়তা আছে। বর্তমানে আমাদের হেলথ সেক্টরটগুলো ক্লিনিক পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। তাই গ্র্যাজুয়েটদের জন্য সরকারিভাবে সুনির্দিষ্টভাবে কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। তারা প্রতিটি কমিউনিটিতে কাজ করতে পারলে সবার স্বাস্থ্যগত দিকের উন্নতি হবে। এছাড়াও হেলথ সেক্টরের পলিসি লেভেলে গ্র্যাজুয়েটদের গুরুত্ব অনেক বেশি।

আরও পড়ুন: প্রস্তুতির পাশাপাশি নিয়মিত মডেল টেস্ট দিতে হবে: মুহিব

জাগো নিউজ: বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে পড়ার খরচ কেমন?
ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন: পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্সে স্নাতক প্রোগ্রামের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ খুবই কম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রোগ্রামে ৮-১২ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য ২-৮ লাখ টাকা গুনতে হতে পারে। তবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বেশি টাকা গুনতে হতে পারে।

জাগো নিউজ: এ প্রোগ্রামে উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা কেমন?
ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোতে পাবলিক হেলথে উচ্চশিক্ষার অনেক সুযোগ আছে। বিশ্বের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাবলিক হেলথের ওপর স্কুল আছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনার্স (বিপিএইচ), মাস্টার্স (এমপিএইচ), এমফিল এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের ওপর বৃত্তি দিয়ে থাকে। পাবলিক হেলথে ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে শিক্ষার্থীদের প্রচুর বৃত্তি, অনুদান এবং অন্য সহায়তা দেওয়া হয়। পাবলিক হেলথের ওপর ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল হেলথ অ্যাসোসিয়েশন, কমিউনিটি হেলথ ইনিশিয়েটিভ স্কলারশিপ, ডেভিড এ উইস্টোন হেলথ পলিসি স্কলারস প্রোগ্রাম, এনভায়রনমেন্টাল পাবলিক হেলথ স্কলারশিপ, জর্জিয়া হেলথ ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ, টেক্সাস মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, ট্রুমান স্কলারশিপ, ইউনিভার্সিটি অব সান ফ্রান্সিস্কো, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস পাবলিক হেলথ স্কলারশিপ ইত্যাদি বৃত্তি দেওয়া হয়। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছেন।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।