নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
দিগন্ত বিস্তৃত সোনালি ক্ষেত, ফসলে ভরা মাঠ আর ঘর ভরা গরু-মহিষ খুশির বান এনে দিয়েছিল উপকূলের কৃষক পরিবারগুলোতে। অল্প ক’দিন পরই ঘরে উঠতো সোনালি মাঠের ফসল। নবান্নের প্রস্তুতিও নিয়েছেন সব কিষাণ-কিষাণী। কর্মঠ কৃষক তাকিয়ে আছেন সোনাভরা খেতের দিকে। কিন্তু আশায় বুকভরা এই কৃষক পরিবারগুলোকে হতাশায় ঢেকে দিল নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ার ও ঝড়ো হাওয়া।
রোববারের এ জোয়ার ও ঝড়ো হাওয়া উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে কৃষকের ওই হাসিকে। উপকূলীয় অঞ্চলের বিস্তৃর্ণ এই খেতগুলো এখন আর বাতাসে দুলছে না। ঝড়ের সঙ্গে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ধানখেত। বাতাসে নুইয়ে পড়েছে সব। জোয়ারে চরাঞ্চলের শত শত গরু-মহিষ ভেসে গেছে। ঝড়ের কবলে পড়ে মাছধরা কয়েকটি নৌকাও নিখোঁজ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘গত দুদিন ধরে সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলজুড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। শনিবার রাত ১০টা থেকে বাতাসের বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসেছে জোয়ার। যে কারণে ফসল ভরা মাঠ মাটিতে ন্যুয়ে পড়েছে। নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বিস্তৃর্ণ ধানখেত পানির নিচে ডুবে গেছে।
কৃষকরা জনান, মাঠভরা ধানের শীষ এখনো চালে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। বাতাসে শুয়ে পড়ায় ধানের শীষগুলো চিটা হয়ে যাবে। গতকালের ঝড়ে তাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। তাছাড়া রাতে বাতাসের জঙ্গে জোয়ার ও শীত বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলে পানি উঠে শত শত গরু-মহিষ মারা গেছে।
হাতিয়া সদরের শামীম টেলিকমের পরিচালক মো. শামীম ক্ষয়ক্ষতির কয়েকটি ছবি পাঠিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘কৃষকের হাসি শেষ। ধানখেতগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। সব ধান চিটা হয়ে যাবে। গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিছু ঘর-বাড়ি পড়ে গেছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে ফসলের মাঠ রক্ষা করা যাবে না।
নিঝুম দ্বীপের বেচু মাঝি মুঠো ফোনো জাগো নিউজকে জানান, রাতের জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেয়ে দ্বীপের পুকুরের মাছ, গরু-মহিষ পানিতে ভেসে গেছে। কিছু কাঁচা ঘরবাড়িও বিধ্বস্ত হয়েছে। ধানের খেত বাতাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া বেশ কয়েকটি জেলে পরিবারের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সমাজকর্মী মহিউদ্দিন মিন্টু জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাতাস আর পানিতে ধান খেত শেষ। কিছু ঘরবাড়ি, গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে গেছে। পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের কৃষকের শতশত গরু মহিষ পানি ও ঠাণ্ডায় মারা গেছে।
হাতিয়ার সাবেক ইউপি সদস্য মো. শাহজাহান জাগো নিউজে জানান, দ্বীপের ঢালচর ও মৌলভীর চরের ২ শতাধিক গরু-মহিষ মারা গেছে। তীব্র শীতের কারণে আরো মরার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে তার নিজের ৫টি মহিষ রয়েছে।
তিনি জানান, সকালের ঝড়ে দ্বীপের বাংলাবাজারের খালের মুখে সাহাব উদ্দিন সেরাংয়ের একটি কার্গো ট্রলার নদীতে ডুবে যায়। ট্রলারটিতে প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল ছিল। এ ছাড়া ঝড়ের কবলে পড়ে একটি তেলবাহী জাহাজ দ্বীপের ঠেঙ্গার চরে উঠে যায়।
এদিকে উপকূলের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উপকূল বাঁচাও আন্দোলনের খুলনা অঞ্চলের আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, ঝড়ে খুলনার তেমন ক্ষতি না হলেও জেলার দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রার ধানখেতের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূলবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। তাছাড়া ১২০০’র মতো স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসানাত মো. মাঈন উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির কোনো তালিকা পাওয়া যায়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। তবে প্রাথমিক হিসেবে কিছু ঘরবাড়ি ও কৃষকের ফসলের মাঠের ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে ঝড়ের কবলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ভোলার মনপুরা উপজেলায়ও। উপজেলা চেয়ারম্যান শেলিনা চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, ঝড়ে তার উপজেলার কলাতলির চরে ফসলের বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ এলাকার ৮০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। বাতাসের কারণে ধানগুলো চিটা হয়ে যাবে।
এমএসএস/জেডএ/এবিএস