গার্মেন্টসের মতো কলঙ্ক কি বিচারবিভাগ নিতে পারে : প্রশ্ন সুমনের
করোনাভাইরাসের কারণে সরকার ঘোষিত ছুটির মধ্যে স্বল্প পরিসরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বারজজ কোর্ট ও হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ চালু করার নির্দেশকে গার্মেন্টসের মতো স্টিগমার (কলঙ্ক) সঙ্গে তুলনা করেছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। এই কলঙ্ক বিচার বিভাগ নিতে পারে কি না? এই প্রশ্ন রেখে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ৬০ কোটি টাকা চেয়ে করা আবেদন লজ্জাবোধ করেছেন তিনি।
সুমন বলেন, আমি লজ্জাবোধ করছি। এই গার্মেন্টস মালিক আর আমাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকছে না। এই দুই নম্বর গার্মেন্টসের মালিক এই সময়েও মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করে।
সুপ্রিম কোর্ট খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরের দিন শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, শুক্রবারের জুমার আগে সবাইকে জানাচ্ছি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমি জানি, আপনারা কেউই ভালো নেই। কারণ, সারাদেশ লকডাউনে আছে। আমি সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। মানুষ আমাদের জিজ্ঞেস করে আপনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কি না। আইনজীবীদের জন্য এবং সুপ্রিম কোর্টে বিচার বিভাগে যারা কাজ করেন তাদের জন্য এই ভিডিওটি ডেডিকেটেড করতে চাই।
তিনি বলেন, 'আমি প্রথমেই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই মাননীয় প্রধান বিচারপতির। মাননীয় প্রধান বিচারপতি আমরা গতকাল একটি চিঠি পেয়েছি যে, স্বল্প পরিসরে সুপ্রিম কোর্টের দুটা ডিপার্টমেন্ট চালাতে চান। মাননীয় প্রধান বিচারপতি, আমি একটি কথা বলতে চাই, এই কথা যারা আপনাকে বুঝিয়েছে তারা অবশ্যই ভালো লোকজন না, আমাদের আইনাঙ্গনের জন্য, বিচার বিভাগের জন্য। কারণ, তারা বিতর্কিত করতে চায় আমাদের।
'আপনি দেখেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশকে লকডাউন করেছেন। আপনি জানেন যে, বিজিএমইএ, গার্মেন্টস সেক্টর যে কলঙ্ক নিয়েছে গার্মেন্টস সেক্টরের লোকজনকে ঢাকায় নিয়ে এসে। এই স্টিগমা কি আমরা বিচার বিভাগ নিতে পারি?'
তিনি প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, আমরা ১০-১৫ দিন দেরি করলে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের সঙ্গে যদি থাকি, কি এমন অসুবিধা হয় মাননীয় প্রধান বিচারপতি? আপনি আমাদের প্রধান বিচারপতি। যেখানে আপনি একজন অভিভাবক। আইনজীবীদের ভূমিকা সারা পৃথিবীব্যাপী। দুঃসময়ে আইনজীবীদের ভূমিকায় থাকবে। আইনজীবী যার যার এলাকায় মানুষকে সহযোগিতা করবে।'
সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী আরও বলেন, আমাদের মধ্যে যদি গরিব আইনজীবী থাকে আমরা সরকারের কাছে সাহায্য চাইব কেন? আমরা আমাদের বার কাউন্সিলে প্রতি মাসে মাসে যে টাকা দেয়, এই টাকা থেকে সহযোগিতা করা যেতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে সরকার প্রধানের কাছে দেয়া চিঠির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সুপ্রিম কোর্টের নেতৃবৃন্দ জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে ৬০ কোটি টাকা সাহায্য চাচ্ছেন। তখন নিজেকে ফকিরের চেয়েও বেশি মনে হয়েছে।
আমি গরিব হতে পারি। কিন্তু ফকিরের মানসিকতা রাখি না। যারা সংবিধানের সুরক্ষায় কাজ করে, তারা মানসিকভাবে দৈন্য হতে পারে না। মাননীয় প্রধান বিচারপতি, আপনার কাছে আমার অনুরোধ, আমি আল্লাহর ওয়াস্তে চাই, এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে, এতো বড় একটা কলঙ্ক আমাদের আইনজীবী ও বিচার বিভাগের ওপর চাপিয়ে দেবেন না।'
তিনি সুপ্রিম কোর্ট খোলার বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে বিষয়টি আবারও বিবেচনার কথা উল্লেখ করে বলেন, 'মাননীয় প্রধান বিচারপতি আমার বিশ্বাস আপনি আবার এটি পুনর্বিবেচনা করবেন। কোনোভাবেই আপনি স্বল্পপরিসরে বলেন আর যেভাবেই বলেন, কোর্টটা খোলার ঘোষণা দিলেই আইনজীবীরা ভেঙে পড়বে।'
প্রধান বিচারপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে সুমন বলেন, 'আমার যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, আমার ইনটেনশনের মধ্যে কোনো দুই নম্বরি নেই। এই সাবমিশন রেখে আমি আমার লাইফ থেকে বিদায় নিচ্ছি।'
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতে দেশে দেশে চলা সরকারি ছুটিতে রোববার থেকে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বারজজ কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগে একটি বেঞ্চ অতীব জরুরি বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার জন্যে বসবেন। এ ছাড়া সপ্তাহে অন্তত দুদিন দেশের সব জেলা ও দায়রা জজ আদালত খোলা রাখার নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আকবর আলী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়।
এফএইচ/জেডএ/পিআর