ভার্চুয়াল কোর্টের প্রশিক্ষণে অ্যাটর্নি জেনারেলসহ কর্মকর্তারা
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে আসামি, সাক্ষী এবং আইনজীবীদের সশরীরে উপস্থিতি ছাড়াই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালতের কার্যক্রম চলবে, সে বিষয়ে এরই মধ্যে নির্দেশিকা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
সরকার ঘোষিত ছুটির মধ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই ‘প্র্যাকটিস ডাইরেকশন’ অনুসরণ করেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট ও দেশের অধস্তন আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
তবে ভার্চুয়াল প্র্যাকটিস বাংলাদেশে এই প্রথম। কীভাবে এতে অভ্যস্ত হবেন আইনজীবীরা। সেই আলোকে সুপ্রিম কোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ কার্যালয়ের আইনজীবীদের নিয়ে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনার জন্য রোববার (১০ মে) দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভার্চুয়াল কোর্ট বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের আইন কর্মকর্তাদের নিয়ে ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপি’র উদ্যোগে রোববার (১০ মে) দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভার্চুয়াল কোর্ট বিষয়ক এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছে সুপ্রিম কোর্ট সূত্র।
প্রশিক্ষণের বিষয়ে ইউএনডিপির কর্মকর্তা ও জেন্ডার এক্সপার্ট বিথিকা হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা (১০ মে) হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ট্রেনিংয়ে সহযোগিতা করেছি। একটা সিরিজ ট্রেনিং চলছে। আগামীতে অন্য আইনজীবীদেরও ট্রেনিংয়ে সহযোগিতা করবো।
তিনি বলেন, সব মিলিয়ে বিচারিক আদালতেও সিরিজ অব ট্রেনিং অব্যাহত রয়েছে। ভার্চুয়াল কোর্ট সিস্টেম সম্পূর্ণ নতুন। যখন আদালতে ব্যবহারিক কাজ চলবে তখন আরো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হতে পারে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, যেহেতু ভার্চুয়াল পদ্ধতি সম্পূর্ণ নতুন, এখন আমরা প্রায় আড়াই ঘণ্টা প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তবে, যারা নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারসহ ইন্টারনেটে মোটামুটি পারদর্শী তাদের এতে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে না বলে আশা করছি।
এই ভার্চুয়াল টেনিংয়ে সভাপতিত্ব করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। ভার্চুয়াল সভায় অংশগ্রহণ করেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি খুরশিদ আলম সরকার, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, ড. মো. বশির উল্ল্যাহ, বশির আহমেদ, প্রতিকার চাকমা, জাহাঙ্গীর হোসেন, সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস সহ ১১ জন ডিএজি ও বেশকিছু এএজিসহ সর্বমোট ৩১ জন ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনা পদ্ধতির ট্রেনিং এ অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে, বিশ্বব্যাপী মহাদুর্যোগ করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশের উচ্চ আদালত হাইকোর্টে ভার্চুয়াল শুনানির জন্য ই-মেইলে আবেদন শুরু করেছেন আইনজীবীরা।
সোমবার (১১ মে) হাইকোর্টের নির্ধারিত বেঞ্চে মক্কেলদের পক্ষে তারা এই আবেদন করেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্ধারিত বেঞ্চে খবর নিয়ে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট কোর্টে একাধিক জামিন আবেদন জমা পড়েছে।
রোববার (১০ মে) ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা প্রসঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে ফুল কোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে উভয় বিভাগের বিচারপতিরা এতে অংশ নেন।
ফুলকোর্ট সভায় ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এর আওতায় উচ্চ আদালত এবং নিম্ন আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্র্যাকটিস ডাইরেকশন অনুমোদিত হয়।
পরে পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিম্ন আদালতে ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে কেবল জামিন শুনানি হবে। অপরদিকে সুপ্রিম কোর্টে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে শুনানির জন্য আপিল বিভাগে চেম্বার আদালত ও হাইকোর্ট বিভাগে তিনটি বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
গত ৬ মে বুধবার ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ তৈরি করতে আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এরপর প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
এফএইচ/এসএইচএস/এমএস