শিক্ষকদের ৬ মাসের বেশি বরখাস্ত নয়, বিধি প্রণয়নের নির্দেশ

বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকদের ছয় মাসের বেশি সাময়িক বরখাস্ত রাখা যাবে না বলে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। এ সময়ের বেশি বরখাস্ত করে রাখলে ওই আদেশ বাতিল গণ্য হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি বিষয়টি বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরিবিধিতে সংযোজন করতে বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি ইস্যু করে সব শিক্ষা বোর্ডকে এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করতে বলা হয়েছে।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত ১৫ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রিটকারী শিক্ষক বাদশা মিয়ার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে ৯০ দিনের মধ্যে তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে বলেছেন আদালত। এছাড়া তার বকেয়া বেতন-ভাতাও পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
জাগো নিউজকে রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ুন কবির রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রায়ে বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরিবিধিতে এটি সংযোজন করতে বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে বিধিমালা প্রণয়ন করে পরিপত্র জারি করে সব শিক্ষা বোর্ডকে জানাতেও বলেছেন।
তিনি জানান, গত ৯ সেপ্টেম্বর দেওয়া ওই রায়ের ১৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সই করার পর প্রকাশ করা হয়েছে।
১৪ বছর আগে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মাগুরার স্কুলশিক্ষক বাদশা মিয়ার করা রিটের ওপর জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ুন কবির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
হুমায়ন কবির বলেন, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া স্কুলশিক্ষক বাদশা মিয়ার পক্ষে আমরা ২০১৭ সালে রিট করেছিলাম। ওই রিটের শুনানি নিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের বরখাস্ত করার বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে দেশের বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষকদের ছয় মাসের বেশি সাময়িক বরখাস্ত রাখা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন। রায়ে আদালত বলেছেন, কোনো শিক্ষককে এ সময়ের বেশি বরখাস্ত করে রাখলে ওই আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি শিক্ষকদের সাময়িক বরখাস্ত রাখার বিষয়ে আগে সুনির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ ছিল না। এ রায়ের ফলে ছয় মাসের সময় নির্ধারণ হলো। এখন কোনো অভিযোগে শিক্ষকদের বরখাস্ত করলে ছয় মাসের মধ্যে সেটি নিষ্পত্তি করতে হবে। অন্যথায় ছয় মাস পর সাময়িক বরখাস্ত আর কার্যকর থাকবে না। তবে হাইকোর্টের লিখিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর এ রায়ের বিষয়ে আরও বিস্তারিত বলা যাবে।
মাগুরা সদর উপজেলার বাহারবাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. বাদশা মিয়াকে অতিরিক্ত বেতন নেওয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালে সামরিক বরখাস্ত করা হয়। দীর্ঘদিন এ অভিযোগের নিষ্পত্তি না করায় ২০১৭ সালে বাদশা মিয়া হাইকোর্টে রিট করেন। পরে আদালত রুল জারি করেন। এ রুল নিস্পত্তি করে রায় দিলেন উচ্চ আদালত।
এফএইচ/এমএএইচ/এমএস