সব আদালত চত্বরে বসছে ‘ন্যায়কুঞ্জ’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩২ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২২

দেশের উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে অধস্তন (নিম্ন) আদালতে হাজার হাজার মামলা বিচারাধীন। মামলা সংশ্লিষ্ট কাজে আদালতে প্রতিদিনই আসা-যাওয়া করতে হয় নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মানুষদের। কেউ মামলার বাদী-বিবাদী, কেউ আসেন সাক্ষী দিতে, আবার কেউ আসেন হাজিরা দিতে। ফলে উচ্চ আদালত থেকে অধস্তন আদালত, সবখানেই ভিড় লেগেই থাকে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ আদালত চত্বরে নেই বসার বা বিশ্রামের জন্য সুনির্দিষ্ট জায়গা। ফলে কোর্টের বারান্দায়, গাছতলায় ও রাস্তার পাশে বসে সময় কাটাতে হয় বিচারপ্রার্থী ও সংশ্লিষ্টদের। আবার কোনো কোনো আদালতে নেই সুনির্দিষ্ট ওয়াশ রুম ও ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার। এভাবেই বছরের পর বছর চলে আসছে এ দুর্ভোগ।

বিচারপ্রার্থী ও সংশ্লিষ্টদের এমন দুর্ভোগ দূর করতে প্রত্যেক জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বসার স্থান অর্থাৎ ‘ন্যায়কুঞ্জ’ ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি মো. হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

এরই মধ্যে উচ্চ আদালতে বিচারপ্রার্থীদের বিশ্রামের জন্য একটি শেড নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আদালতের সড়ক ভবন চত্বরে এটির নির্মাণকাজ চলছে। পাশাপাশি দেশের অধস্তন আদালতের প্রতিটি চত্বরে এমন শেড (বিশ্রামাগার) স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব শেডের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ন্যায়কুঞ্জ’। এ ‘ন্যায়কুঞ্জে’ থাকবে বিচারপ্রার্থীদের বসার স্থান, ওয়াশ রুম, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার ও ছোট্ট একটি স্টেশনারি শপ। এ ‘ন্যায়কুঞ্জ’ স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

চিঠিতে বলা হয়, দেশের প্রত্যেক জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে জেলা ভেদে কমপক্ষে ১০০ জনের এবং চৌকি আদালতে ৪০-৫০ জনের বসার উপযোগী বিচারপ্রার্থী-বিশ্রামাগার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছেন।

এসব বিচারপ্রার্থী-বিশ্রামাগারে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা ইউনিট, দুগ্ধপোষ্য শিশুর মার জন্য আলাদা কক্ষ, প্রত্যেক ইউনিটে দুটি টয়লেট এবং দুটি ইউনিটেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।

দেশের সব আদালত চত্বরে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ স্থাপনের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার ও মুখপাত্র ব্যারিস্টার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।

তিনি বলেন, জেলা আদালতের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টেও বিচারপ্রার্থীদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে বসার স্থান। ওই স্থানের নাম হবে ‘ন্যায়কুঞ্জ’। আশা করছি, সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপিত ‘ন্যায়কুঞ্জ’ শিগগির উদ্বোধন করা হবে।

আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে গত ১৩ জুন সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, স্থাপত্য অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ ও সব জেলা ও দায়রা জজদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সাইফুর রহমান বলেন, ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণ করতে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে চিঠি দেওয়ার পর এরই মধ্যে পরিকল্পনা করে কাজও শুরু হয়েছে। এসব বিশ্রামাগার তৈরি হলে আদালতে আসা সাক্ষী ও বিচারপ্রার্থীরা উপকৃত হবেন।

এদিকে, বিচারপ্রার্থীদের জন্য বিশ্রামাগার স্থাপনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির জাগো নিউজকে বলেন, আদালত চত্বরে আসা বিচারপ্রার্থীদের নির্দিষ্ট করে বসার স্থান তৈরি করা বিচার বিভাগের তথা সরকারের পক্ষ থেকে একটি ভালো উদ্যোগ। এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে এসব কাজ পরিকল্পনা করে দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করা উচিত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান জাগো নিউজকে বলেন, দেশের আদালত চত্বরে আসা ক্লায়েন্টদের জন্য রেস্টরুম বা ন্যায়কুঞ্জ যে নামেই হোক, সেটা গ্রহণ করা একটি ভালো উদ্যোগ। বিচারের জন্য আসা মানুষদের কোর্টে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, কোর্ট রুমে বসতে হয়। কোর্টে বসার স্থান না থাকলে বারান্দায় বারান্দায় ঘুরতে হয়। তাদের বসার কোনো জায়গা নেই। তাই আমি মনে করি এমন উদ্যোগ খুবই ভালো।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আতিকুর রহমান বলেন, দেশের আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বিষয়টি ইতিবাচক এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। বিচারপ্রার্থীদের জন্য এই বসার স্থান খুবই প্রয়োজন। তবে দেখতে হবে দালালরা যেন সেখানে তাদের ব্যবসার ক্ষেত্র বানিয়ে না ফেলেন। এটি হলে মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের বিষয়টি তদারকি করার জন্য দায়িত্ব দিতে হবে। তারা নিশ্চিত করবেন বিচারপ্রার্থী ছাড়া কোনো দালাল সেখানে অবস্থান করছেন না।

এফএইচ/আরএডি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।