রেলস্টেশনে তরুণীকে হেনস্তা

প্রতিবাদকারীদের পোশাক বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে কি না?

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৪৫ এএম, ১৬ আগস্ট ২০২২

নরসিংদী রেলস্টেশনে আধুনিক পোশাকের অজুহাতে এক তরুণীকে হেনস্তা করার ঘটনায় যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, তরুণীকে হেনস্তার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মূলহোতা শিলা আক্তার মারজিয়ারসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মামলা করে গ্রেফতারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে ওই তরুণীর পক্ষে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নরসিংদী রেলস্টেশনে গিয়ে প্রতিবাদ করতে আসা নারীদের ঘটনাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর যদি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে, সেটা আইনি কী পদক্ষেপ ছিল? তা রাষ্ট্রপক্ষকে জানানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

রোববার (১৪ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলে এ নির্দেশ দেন।

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল হাশেম ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মির্জা মো. শোয়েব মুহিত। অন্যদিকে আসামি শিলা আক্তার মারজিয়ার জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. কামাল হোসেন।

প্রতিবাদকারী নারীরা যেসব পোশাক পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দিয়েছেন এগুলো কি বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে যায় কি না এমন প্রশ্নও তুলেছেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত আমেরিকার সোসাইটি ও সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। এরপর প্রতিবাদ করতে আসাদের চিহ্নিত করা হয়েছে কি না এবং তাদের বিষয়ে কী কী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে আদালত জামিনের বিষয়ে পরবর্তীসময়ে শুনানির জন্য বিষয়টি মুলতবি রেখেছেন।

এ বিষয়ে আইনজীবী মো. কামাল হোসেন বলেন, নরসিংদীর ঘটনায় আসামি শিলা আক্তার জামিনের বিষয়ে করা আবেদনের শুনানিতে প্রতিবাদ করতে আসা নারীরা দেশের ও বাঙালিদের সামাজিক সাংস্কৃতিক সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পোশাক পড়েছিলেন কি না সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা রাষ্ট্রপক্ষের কাছে মৌখিকভাবে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এরপর এ বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করা হয়েছে।

আদালতের বরাত দিয়ে এ আইনজীবী বলেন, কিশোরীর ঘটনায় সে নিজে কোনো অভিযোগ করেনি। স্টেশন মাস্টারও কোনো অভিযোগ করেননি। তাহলে কেন সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার পর মামলা হলো। আর প্রতিবাদ জানানোর জন্য যারা গিয়েছিলেন তাদের বিষয়টিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার পর মামলা হওয়ার কথা ছিল।

গত ৩০ মে নরসিংদী রেলস্টেশনে আধুনিক পোশাকের অজুহাতে এক তরুণীকে হেনস্তার ঘটনার মূল হোতা শিলা আক্তারের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওইদিন নরসিংদী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক দেলোয়ার হোসেন এই আদেশ দেন।

এর আগে গত ২৯ মে দিবাগত রাত ৩টার দিকে শিবপুরের ইটাখোলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-১১ এর একটি দল।

র্যাব-১১ সূত্রে জানা যায়, স্টেশনে তরুণীকে লাঞ্ছিতের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে মূলহোতা শিলা আক্তার মারজিয়া ওরফে শায়লা আত্মগোপনে চলে যান। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শিবপুর উপজেলার ইটাখোলা এলাকায় শিলার খালার বাসায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে থেকে রাত ৩টার দিকে তাকে গ্রেফতার করে রেলওয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

র্যাব-১১ আরও জানায়, ঘটনার মূলহোতা শিলা আক্তার নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম মারজিয়া। তিনি পেশায় একজন ঘটক।

রেলওয়ে পুলিশের এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হারুনুর জামান রুমেল জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় গ্রেফতার শিলা আক্তার ওরফে মাজিয়াকে নরসিংদী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক দেলোয়ার হোসেনের আদালতে সোপর্দ করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে আদালতের বিচারক তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর পরে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত।

এর আগে গত ১৮ মে সকালে নরসিংদী রেলস্টেশনের ১নং প্ল্যাটফর্মে ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দুই তরুণ ও এক তরুণী। মেয়েটির পরনে ছিল জিনস প্যান্ট ও টপস। তাই দেখে স্টেশনে অবস্থানরত এক নারী প্রথমে ওই তরুণীকে আঘাত করে ও পরে আরও কয়েকজন ব্যক্তি তার ওপর হামলার চেষ্টা চালায়।

ভুক্তভোগী ওই তরুণী দৌড়ে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে আশ্রয় নিয়ে তাকে বাঁচানোর অনুরোধ করে। পরে স্টেশনমাস্টারের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়া হয়।

তরুণীকে হেনস্থা ও মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার দুদিন পর শুক্রবার রাতে নরসিংদী শহরের ইউএমসি জুট মিলের সামনে থেকে ইসমাইল মিয়া নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ সিদ্দিকীর আদালতে সোপর্দ করা হয়।

ওই রাতেই নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ও ৩০ ধারায় ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে এক নারীসহ দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আরও এক নারী ও ১০ পুরুষকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওতে অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের আসামি করা হয়।

এফএইচ/আরএডি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।