মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামির ৩ জন হাইকোর্টে খালাস, ৩ জনের যাবজ্জীবন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫০ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২
ফাইল ছবি

মালিকের বাড়িতে দাওয়াতের কথা বলে ডেকে নিয়ে নরসিংদীতে বরফকলের শ্রমিক আইয়ুব মিয়াকে (২৮) হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক (নিম্ন) আদালত ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে খালাস ও তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামির মধ্যে বৌয়াকুড় মহল্লার সাদ্দাম হোসেন ও চাঁদপুরের মতলব উপজেলার আম্মাকান্দা গ্রামের এরশাদ মিয়া ও বিমল খালাস পেয়েছেন।

আর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামনাথপুর দক্ষিণপাড়ার সুজন ওরফে বাঘা সুজন, নরসিংদী পৌর শহরের পশ্চিম কান্দাপাড়া মহল্লার সোহাগ চন্দ্র দাস ও সমীর চন্দ্র দাসকে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুনুর রশিদ জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম ইমদাদুল হক ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফজলুল হক খান ফরিদ। তাকে সহযোগিতা করেন মোহাম্মদ আবুল হাসনাত ও শেখ মো. শামসুজ্জামান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হারুনুর রশিদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমেদ হিরো, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আলতাফ হোসেন আমানী।

২০১৬ সালের ১৯ নভেম্বর নরসিংদীতে বরফকলের শ্রমিক আইয়ুব মিয়া হত্যা মামলায় ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছিলেন বিচারিক আদালত। একইসঙ্গে অপর এক ধারায় দণ্ডপ্রাপ্ত ছয়জনের প্রত্যেককে তিন বছর করে কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। নরসিংদীর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন এ রায় দেন।

রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ২০১৭ সালে হাইকোর্টে আসে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। ডেথ রেফারেন্সের ওপর আজ শুনানি শেষে রায় দেন আদালত।

মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদী শহরের বৌয়াকুড়স্থ মোসলেহ উদ্দিন সুপার মার্কেটের একটি বরফকলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন ময়মনসিংহের সুজন। কাজে ফাঁকি দেওয়ায় তার চাকরি চলে গেলে সুজনের স্থলে নতুন শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পান শহরের বৌয়াকুড় মহল্লার আইয়ুব।

এ নিয়ে আইয়ুবের ওপর ক্ষিপ্ত হন চাকরিচ্যুত সুজন। এরই জেরে ২০০৮ সালের ২৯ আগস্ট সুজন মোবাইল ফোন করে মালিকের বাসায় দাওয়াতের কথা বলে আইয়ুবকে ডেকে নিয়ে যান। পরে পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আইয়ুবের সন্ধান পাননি। তিনদিন পর ১ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার ধামেরভাওলা এলাকায় মেঘনা নদীতে আইয়ুবের মাথাবিহীন গলিত মরদেহ পাওয়া যায়।

মরদেহ শনাক্তের পর নিহত আইয়ুবের বাবা আব্দুল হেকিম সরকার বাদী হয়ে নরসিংদী সদর থানায় সুজনকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নরসিংদী ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমাম হোসেন তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আসামিদের মধ্যে চারজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। সেইসঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অন্যদিকে প্রত্যেককে লাশ গুম করার অপরাধে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডেও দণ্ডিত করা হয়।

এফএইচ/এএএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।