নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস করে লাভবান হতেন তারা

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর আলম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:০৭ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
প্রতীকী ছবি

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ও উত্তরপত্র ফাঁস করে আসছিল সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র। গত বছরের জানুয়ারিতে ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের অডিটর পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষাতেও তারা প্রশ্নফাঁস করেন। পরবর্তীসময়ে এ ঘটনায় প্রশ্নপত্র ও ডিজিটাল ডিভাইসসহ চারজনকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

সম্প্রতি তদন্ত শেষে এ মামলায় চারজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। চার্জশিটে তাদের জালিয়াত চক্রের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে চক্রের মূলহোতা কে বা কারা, তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় দুজনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপ-পরিদর্শক মো. নূর আলম সিদ্দিক জানান, এ মামলায় ১৭ জনকে সাক্ষী করে চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা না পাওয়ায় দুজনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের (সিজিএ) কার্যালয়ের কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান ওরফে আজাদ, মো. নোমান সিদ্দিকী, নাইমুর রহমান তানজু ও শহীদ উল্যাহ।

আরও পড়ুন: নিয়োগের প্রশ্নফাঁস হয় বিমান এমডির কক্ষ থেকেই: ডিবি

মামলার চার্জশিটে বলা হয়েছে, আসামিরা সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস ও ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিল। এর মাধ্যমে তারা অর্থ উপার্জন করে লাভবান হয়েছে।

ডিভাইস, প্রশ্ন ও উত্তরপত্র জব্দ

আসামি নোমানের কাছ থেকে একটি মাইক্রোফোন ও কালো রঙের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার তিন পাতার দুই সেট প্রশ্নপত্র ও আটটি অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়। আসামি মাহমুদুলের কাছ থেকে একটি মাইক্রোফোন ও কালো রঙের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার আটটি প্রবেশপত্র ও হাতে লেখা উত্তরপত্র জব্দ করা হয়। এছাড়া আসামি তানজু ও শহীদের কাছ থেকে হাতে লেখা অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র পাওয়া যায়। তাদের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ২৩ পাতা ও ফেসবুক মেসেঞ্জার থেকে দুই পাতার স্ক্রিনশট পাওয়া যায়।

স্ক্রিনশটের বিভিন্ন পাতায় প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের অধীনে ডিফেন্স ফাইন্যান্স অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্রের তথ্য আদানপ্রদান করার তথ্য পাওয়া গেছে।

সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় দেখা গেছে, আসামি নোমান সিদ্দিকী মোবাইলে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নের ছবি পাওয়া যায়। তিনি হোয়াটসঅ্যাপে অন্যদের কাছে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন প্রেরণ করেন। আসামি নাইমুর রহমান তানজুর মোবাইলে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষায় আসা প্রশ্নের উত্তরপত্র পাওয়া যায়। আসামি শহীদ উল্যাহ’র ফোনে প্রশ্নের কোনো ছবি পাওয়া যায়নি। তবে তার ফোন থেকে পাঁচটি এসএমএস পাঠানোর তথ্য পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন: সর্ববৃহৎ প্রশ্নফাঁস চক্রের মূলোৎপাটন

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ডিফেন্স ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টে ৫৫০টি শূন্যপদের বিপরীতে অডিটর পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস করে নিজেদের কাছে রাখেন, যা ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রকাশ, বিতরণ ও হস্তান্তর করেন। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৩/২৪/৩৫ ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে আসামি ফারুক ও রায়হানের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা উদঘাটনসহ গ্রেফতার করতে পারেনি। এজন্য প্রাথমিকভাবে মামলার দায় থেকে তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।

২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত মিরপুর, কাকরাইল ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় চলা অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ইয়ার ডিভাইস ছয়টি, মাস্টার কার্ড, মোবাইল সিম হোল্ডার ছয়টি, ব্যাংকের চেক পাঁচটি, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প সাতটি, স্মার্টফোন ১০টি, ফিচার মোবাইল ছয়টি, প্রবেশপত্র ১৮টি ও চলমান পরীক্ষার ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র তিনটি সেট জব্দ করা হয়।

প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় রাজধানীর কাফরুল থানায় ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. আ. হান্নান বাদী হয়ে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় চারজনকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

জেএ/এমএইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।