অচিরেই মানুষ ওষুধ গ্রহণের ক্ষমতা হারাবে: হাইকোর্ট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৯ এএম, ০৮ জুন ২০২৩
ফাইল ছবি

বাংলাদেশে রোগীকে যে পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, তাতে করে অচিরেই দেশের মানুষ ওষুধ গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া চিকিৎসকদের সহকারী অর্থ্যাৎ ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টরা ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক লিখতে পারবেন কি না- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন আদালত। এ বিষয়ে আদালত বিশেষজ্ঞ মতামত শোনবেন।

একই সঙ্গে ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে জারি করা রুল শুনানির জন্য প্রস্তুত করতে বলেছেন আদালত।

ভুয়া চিকিৎসকের যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ডের সাজাসহ যথাযথ জরিমানার বিধান চেয়ে দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের মডিফিকেশন (সংশোধন) চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে বুধবার (৭ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জে আর খান রবিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান জামান।

এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী জে আর খান রবিন সাংবাদিকদের জানান, ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, সাজা বাড়ানোর বিষয়ে এবং ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ লেখার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে জারি করা রলের মডিফিকেশন চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে আদালত এটি নথিভুক্ত করে রাখেন এবং রুল শুনানির সময় ওই আবেদনটিও শুনবেন মর্মে জানান।

তখন আদালত বলেন, রোগীর ব্যবস্থাপত্রে যে পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, অচিরেই দেশের মানুষ ওষুধ গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন। ম্যাটসরা ব্যবস্থাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক লিখতে পারবেন কি না? সঙ্গে সঙ্গে রুলটি শুনানির জন্য প্রস্তুতের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।

এর আগে সারাদেশে ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন।

২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলী সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ওইদিন আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জে আর খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

ওইদিন আইনজীবী জে আর খান রবিন বলেন, এ বিষয়ে একটি রুলও জারি করেছেন আদালত। জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর দুটি ধারা সংশোধন করে দেশের ভুয়া চিকিৎসকদের সাজা বাড়াতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন আইন বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না রুলে তা জানতে চেয়েছে আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে আইন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, বিএমডিসির মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য মহাপরিদর্শক, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিএমডিসির রেজিস্ট্রারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে ভুয়া চিকিৎসকের যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ডের সাজাসহ যথাযথ জরিমানার বিধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জে আর খাঁন রবিন।

আবেদনে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর ধারা ২৮(৩) ও ২৯(২) সংশোধন করে ভুয়া চিকিৎসকের সাজা ৩ বছর ও জরিমানা এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ডসহ জরিমানা বাড়াতে বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানিয়েছেন।

একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০ এর ধারা ২৮(৩) ও ২৯(২) সংশোধন করে ভুয়া চিকিৎসকের সাজা ৩ বছর ও জরিমানা এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ডসহ জরিমানা বাড়ানোর জন্য কেন সুপারিশ করা হবে না, সে মর্মেও রুল চাওয়া হয়েছে।

রিট আবেদনে আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি ও রেজিস্টার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।

পরে আবেদনকারী আইনজীবী জে আর খাঁন রবিন বলেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চিকিৎসকদের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু বর্তমানে অনেক ভুয়া চিকিৎসক নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে। শুধু তাই নয় দেশের সাধারণ মানুষ এসব ভুয়া চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এমনকি শারীরিকভাবে স্থায়ী অক্ষমতাসহ অনেকেই মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে’।

জে আর খাঁন রবিন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের ধারা ২৮(৩) অনুযায়ী যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে নিবন্ধনকৃত একজন মেডিক্যাল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক বলে প্রতারণা করেন অথবা প্রতারণামূলকভাবে তার নাম বা পদবীর সঙ্গে নিবন্ধনকৃত মর্মে কোনো শব্দ, বর্ণ বা অভিব্যক্তি ব্যবহার করেন তার মিথ্যা পরিচয় দ্বারা কোনো ব্যক্তি প্রতারিত না হলেও তার জন্য তিনি ৩ বছর কারাদণ্ড অথবা ১ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। একজন ভুয়া চিকিৎসকের চিকিৎসার কারণে মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় সাজা অত্যন্ত নগণ্য। এ কারণে দেশে ভুয়া চিকিৎসকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবাও দিনে দিনে হুমকির মুখে পড়ছে।

এফএইচ/এমএএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।