আপিল বিভাগের দিকে তাকিয়ে রিজেন্টের সাহেদ
করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, অর্থ আত্মসাৎসহ প্রতারণার অভিযোগে তিন বছর আগে অস্ত্রসহ সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে অভিযান চালায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অভিযানে সাহেদের নিজস্ব সাদা প্রাইভেটকার থেকে পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ১০ বোতল ফেনসিডিল, একটি পিস্তল ও একটি গুলি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করা হয়। এরপর ঢাকাসহ সারাদেশে তার বিরুদ্ধে ৩১টি মামলা হয়।
আরও পড়ুন>> সাহেদের ব্যাংক হিসাব ও রিজেন্ট হাসপাতাল সংক্রান্ত নথি দুদকে তলব
এর মধ্যে অস্ত্র আইনের মামলায় তিন বছর আগে সাহেদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন মহানগর দায়রা জজ আদালত। গত বছরের ৭ জুন তার জামিন মঞ্জুর করলেও আপিল বিভাগ তার জামিন স্থগিত করেন।
এদিকে, সোমবার (২১ আগস্ট) দুর্নীতির মামলায় সাহেদের তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তিন বছর ধরে কারাগারে থাকায় এ মামলায় তার আর সাজাভোগ করতে হচ্ছে না।
এছাড়া অন্য সব মামলায় জামিনে সাহেদ। এখন আপিল বিভাগ জামিন মঞ্জুর করলে তার কারামুক্তিতে আর বাধা থাকবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
আরও পড়ুন>> করোনার নমুনা টেস্ট না করেই রিপোর্ট দিতো রিজেন্ট হাসপাতাল
সাহেদের আইনজীবী এম দবির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, সাহেদ গ্রেফতার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ৩১টি মামলা হয়। এর মধ্যে অস্ত্র মামলায় তার জামিন স্থগিত করা হয়েছে। এ মামলায় আপিল বিভাগ তার জামিন মঞ্জুর করলে মুক্তিতে বাধা থাকবে না। আমরা আশা করছি, আপিল বিভাগ তার জামিন মঞ্জুর করবেন।
তিনি আরও বলেন, আজ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় তার তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। তিনি তিন বছরের অধিক সময় ধরে কারাগারে আটক। আমরা আদালতকে বলেছি, সাহেদ গ্রেফতার হওয়ার দিন থেকে যেন তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। আদালত বলেন, ঠিক আছে। তার হাজতবাস বাদ দিলে এ মামলায় তাকে আর অতিরিক্ত সাজাভোগ করতে হবে না।
আরও পড়ুন>> যেসব কুকর্মে গ্রেফতার সাহেদ
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জাগো নিউজকে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাহেদের তিন বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। অন্যদিকে, দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে না পারায় এ ধারা থেকে তাকে খালাস দেন আদালত।
ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) তাপস কুমার পাল বলেন, অস্ত্র আইনের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাহেদের জামিন আপিল বিভাগ স্থগিত করেছেন। দুর্নীতি মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। তিন বছরের অধিক সময় ধরে কারাগারে থাকায় সাজা সেখান থেকে বাদ দেওয়া হলে এ মামলায় তার সাজা খাটতে হবে না। অন্য মামলায় গ্রেফতার না থাকলে অস্ত্র মামলায় জামিন পেলে সাহেদ কারামুক্ত হবেন।
আরও পড়ুন>> দুদকের মামলায় নিজেকে নির্দোষ দাবি রিজেন্টের সাহেদের
দুর্নীতি মামলায় রিজেন্ট সাহেদের তিন বছরের কারাদণ্ড
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ করিমের তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। রায় ঘোষণার দিন থেকে ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
আজ ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক প্রদীপ কুমার রায়ের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। দুদক আইনের ২৬(২) ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কারাদণ্ড ও জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়। অন্যদিকে দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে না পারায় এ ধারা থেকে তাকে খালাস দেন আদালত। রায় ঘোষণার আগে কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
আরও পড়ুন>> অস্ত্র মামলায় সাহেদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
অস্ত্র মামলায় সাহেদের জামিন আপিল বিভাগে স্থগিত
রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান, অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত মো. সাহেদকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। চলতি বছরের ২৮ মার্চ হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি) নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের বেঞ্চ।
২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাহেদকে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ধারায় যাবজ্জীবন ও (চ) ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে হাইকোর্টে আপিল করে জামিন চেয়েছিলেন সাহেদ। ২০২২ সালের ৭ জুন তাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১২ জুন তা স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করে।
আরও পড়ুন>> দুর্নীতি মামলায় রিজেন্ট সাহেদের ৩ বছরের কারাদণ্ড
অস্ত্র মামলায় সাহেদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে করা এক মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় করা মামলায় সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এছাড়া অস্ত্র আইনের ১৯ (এফ) ধারায় তার সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেন।
২০২০ সালের ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানান অনিয়ম ওঠে। এ ঘটনার পর পালিয়ে যান সাহেদ। ১৫ জুলাই সাহেদকে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাকে হেলিকপ্টারে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনা হয়।
জেএ/এমএএইচ/এমএস