বাবার জামিন

আপাতত শিশু থাকবে ভারতীয় মায়ের কাছে, নেওয়া যাবে না দেশের বাইরে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১০ পিএম, ০৬ নভেম্বর ২০২৩
ফাইল ছবি

আদালত অবমাননার মামলায় ছয় মাসের দণ্ডিত বাবা সানিউর টি আই এম নবীকে জামিন দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে এ বিষয়ে পারিবারিক আদালতে থাকা মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিশুটি মা সাদিকা শেখের কাছে থাকবে। বাবা সপ্তাহে দুদিন সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিশুটির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।

তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া শিশুকে নিয়ে (বাবা, মা) উভয়ের কেউই দেশের বাইরে নিয়ে যেতে পারবেন না। যদিও শিশুটির মা ভারতের হায়দারাবাদের নাগরিক।

সোমবার (৬ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার সদেস্যর আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ ওই শিশুটির বাংলাদেশি বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুন্সী মনিরুজ্জামান। আর শিশুর মায়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। সঙ্গে ছিলেন কাজী মারুফুল আলম।

এর আগে একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন। হাইকোর্ট ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট মা সহ শিশুকে হাজির করতে নির্দেশ দেন। হাজিরের পর ওইদিন শিশুকে মায়ের জিম্মায় দিয়ে বাবাকে সপ্তাহে তিন দিন দেখা করার সুযোগ দেন।

কাজী মারুফুল আলম বলেন, ওই আদেশের পর শিশুর কথা চিন্তা করে গুলশান ক্লাবে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে শিশুর মায়ের বিরুদ্ধে জিডি করেন বাবা। জিডি মূলে নন এফআইআর মামলাও হয়। আর কৌশলে শিশুটিকে নিয়ে যায় বাবা। বিষয়টি আদালতে জানালে ১৫ নভেম্বর হাইকোর্ট শিশুটিকে পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে আইনজীবীর চেম্বারে হাজির করতে বলেন। কিন্তু শিশুকে হাজির করেনি তারা।

এ কারণে আবেদনে শিশুকে বিদেশ নেওয়ার নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ওই বছরের ১৭ নভম্বের আদালত ওই শিশুকে বাবাসহ ২১ নভেম্বর বিকেল ৩টার মধ্যে আদালতে হাজির করাতে পুলিশের ঢাকা মহানগর কমিশনার ও গুলশান থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

কিন্তু পুলিশ জানায়, শিশুকে নিয়ে ওই বছরের ১৬ নভেম্বর বাবা দেশত্যাগ করেছেন। এরপর আদালত শিশুর দাদাকে তলব করেন। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট আদালতের আদেশে শিশুকে হাজির না করে বিদেশ চলে যাওয়ায় বাবা সানিউর টি আই এম নবীকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। অনাদায়ে আরও এক মাস কারাদণ্ড দেন উচ্চ আদালত।

এরপর চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর সানিউর আত্মসমর্পণ করেন। একই সঙ্গে ওই দণ্ডের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে জামিন চান। গত ১ নভেম্বর আপিল বিভাগ ওই শিশুকে ৬ নভেম্বর হাজির করতে বলেন। সেই অনুসারে আজ হাজির করে সকালে শিশুটিকে মায়ের জিম্মায় দেওয়া হয়।

রিটের পর আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেছিলেন, ২০১৭ সালে হায়দরাবাদের সাদিকা শেখ নামের এক নারীকে বিয়ে করেন বারিধারার সানিউর টি আই এম নবী। বিয়ের পর তারা মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন। কয়েক মাস পর তারা ঢাকায় ফিরে আসেন।

এরই মধ্যে ওই দম্পতির এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু করোনাকালে তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দেয়। এমনকি ভারতের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাদিকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। বিষয়টি ভারতে মেয়েটির আত্মীয়-স্বজনরা জানতে পারেন।

এরপর ওই দেশ থেকে তাদের পরিবারের পক্ষে প্রথমে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। এতেও বিষয়টি সমাধান হয়নি। পরে সাদিকার বোন মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান। এর মধ্যে সাদিকাকে ডিভোর্স দেন নবী।

এফএইচ/এমআইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।