আদালতে বিস্ফোরণ

স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগে ককটেলটি বহন করেন হামিদ

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর আলম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:১১ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

আব্দুল হামিদ ও স্ত্রী হাফসা আক্তার পুতুল তাদের কন্যা সন্তানকে নিয়ে আদালতে আসেন। এর আগে পুতুলের ভ্যানিটি ব্যাগে একটি কৌটা রাখতে দেন, যেটা আসলে ককটেল ছিল। আদালতে প্রবেশ করে চতুর্থতলায় ওঠেন তারা। দাঁড়ান বারান্দার কিনারে। এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে স্ত্রীর ব্যাগ থেকে ককটেলটি নিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে ছুড়ে মারেন হামিদ। সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে সেটি বিস্ফোরিত হয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বিএনপির হরতাল চলাকালে গত ২০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় গ্রেফতার আসামি হাফসা আক্তার পুতুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করে এসব তথ্য দেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) তিন দিনের রিমান্ড শেষে আসামি পুতুলকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তিনি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন।

আরও পড়ুন>> বোরকা পরিহিত নারী ও পুরুষ আদালতে ককটেল নিক্ষেপ করে

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বিল্লাল হোসাইন জনি তার জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীম তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ মামলায় গ্রেফতার হাফসা আক্তার পুতুলের দেবর আ. রহমান বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার আসামি। ২০ নভেম্বর একটি মামলায় আ. রহমানকে আদালতে হাজির করা হবে জেনে হাফসা, স্বামী আব্দুল হামিদ ভূইয়া ও ছোট মেয়ে মোটরসাইকেলে আদালতে রওয়ানা দেন। মোটরসাইকেলটি রাখেন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ১৫/২০ মিনিট অবস্থান করার সময় আব্দুল হামিদ স্ত্রী পুতুলের কাঁধে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগে একটি কৌটা রাখতে দেন।

কিছুক্ষণ পর তারা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে প্রবেশ করেন। প্রথমে আদালতের দ্বিতীয় তলায় কিছুক্ষণ অবস্থান করে চতুর্থ তলায় ওঠেন। একপর্যায়ে ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা কৌটাটি চাইলে পুতুল তার স্বামীকে সেটি বের করে দেন। আব্দুল হামিদ কৌটাটি নিয়ে চতুর্থ তলা থেকে আদালত প্রাঙ্গণে ফেললে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এসময় আব্দুল হামিদ, পুতুল ও তাদের মেয়ে হেঁটে ঢাকা বার ভবন হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে পৌঁছান। সেখান থেকে মোটরসাইকেলটি নিয়ে চলে যান বাসায়।

আরও পড়ুন>> আদালত প্রাঙ্গণে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা

এ ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. কামরুল হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করা হয়। ২৬ নভেম্বর পুতুল গ্রেফতার হন। ২৭ নভেম্বর শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগে ককটেলটি বহন করেন হামিদ

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০ নভেম্বর বিকেল ৩টা ৫২ মিনিটে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় অজ্ঞাতপরিচয় নাশকতাকারীরা। উপস্থিত আইনজীবী ও আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীদের জীবন বিপন্ন অথবা গুরুতর ক্ষতিসাধনের লক্ষ্যে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান তারা। আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীসহ উপস্থিত লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এতে আদালতের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়াসহ বিচার কার্যক্রমও বিঘ্নিত হয়।

এর আগে ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একজন নারীর সহায়তায় আরেকজন পুরুষ আদালতের চারতলা থেকে ককটেলটি বিস্ফোরণ ঘটাতে নিচে আদালত প্রাঙ্গণে ফেলেন। এরপর তাদের গ্রেফতারে অভিযানে নামে পুলিশ।

তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা ৫০ থেকে ৬০টি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা হয়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও বিশ্বস্ত সোর্সের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিস্ফোরণকারী আসামি হাফসা আক্তার পুতুলকে শনাক্ত করা হয়। পরে তার অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করা হয় রাজধানীর শ্যামপুর থেকে।

হাফসা আক্তার পুতুল মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর থানার ফুলতলা গ্রামের মোসলেম মাতুব্বরের মেয়ে। ঢাকার শ্যামপুর থানার সততা হাউজিং এলাকায় ভাড়া বাসায় স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। ২৬ নভেম্বর ওই বাসা থেকেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে ঘটনার মূলহোতা তার স্বামী আব্দুল হামিদকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। তাকে গ্রেফতারের অভিযান চলছে।

জেএ/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।