২৮৫ প্রতিবন্ধী প্রার্থী

রায় হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নিয়োগ দিতে নির্দেশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০৮ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে ২০২০ সালের নিয়োগ পরীক্ষায় ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ করে ২৮৫ প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে নির্দেশনা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

নিয়োগ প্রশ্নে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে রোববার (১৪ জানুয়ারি) নির্ধারিত দিনে হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ রায় ঘোষণা করেন। রিটকারী ২৮৫ জন প্রতিবন্ধী নিয়োগ প্রার্থীর পক্ষে মামলাগুলো পরিচালনা ও শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।

বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রিটকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লা মিয়া। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা-২০২০ এ ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ করে ২৮৫ প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে তাদের নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে।

রায়ের পর রিটকারী আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া আরও বলেন, প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় হাইকোর্টের আজকের রায় যুগান্তকারী। আশা করছি কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করবেন।

আরও পড়ুন>>> ২৮৫ প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

এসময় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা বলেন, এ রায়ের ফরে আমরা আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা মনে করি আমাদের প্রতি যে নির্দেশনা আদালত দিয়েছেন তা যথাযথ কর্তৃপক্ষ পালন করবেন। পৃথক ৪টি রিট পিটিশনের ২৮৫ জন প্রতিবন্ধী নিয়োগ প্রার্থীর পক্ষে সম্পূর্ণ বিনা ফি-তে আইনি লড়াই চালিয়েছেন আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া।

রিট পিটিশনগুলোর বিষয়ে রিটকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, রিটকারীগণ অত্যন্ত মেধাবী শারীরিক প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শ্রবণ প্রতিবন্ধী এবং বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। ২৮৫ জনের মধ্যে প্রায় ৫০-৬০ জন দেশের সবচেয়ে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তাদের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।

তারা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা-২০১৮ এবং ২০২০ এর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীতে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সফলভাবে উত্তীর্ণ হন এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

কিন্তু উক্ত নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখা যায় সেখানে কোনো প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) কর্তৃক জারীকরা ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ পরিপত্র অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির সহকারী শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০% পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দ্বারা পূরণ করার বিধান রয়েছে এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ এর ৮ এর ২ বিধিতে বলা হয়েছে “উপ-বিধি (২) এর দফা (গ) তে উল্লেখিত মহিলা, পোষ্য ও পুরুষ কোটা পূরণের ক্ষেত্রে, আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন বিধি বা সরকারি সিদ্ধান্তে কোন বিশেষ শ্রেণির কোটা নির্ধারিত থাকিলে উক্ত কোটা সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী নিয়োগ করিতে হইবে” এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর ধারা ৩৫ এর ১ এ বলা হয়েছে ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, প্রতিবন্ধীতার ধরণ অনুযায়ী, উপযোগী কোনো কর্মে নিযুক্ত হতে কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বঞ্চিত বা তার প্রতি বৈষম্য করা বা তাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না’ এবং আমাদের দেশের সংবিধান এর অনুচ্ছেদ ২৮ এর ৪ এ উল্লেখ্য আছে।

কিন্তু বিধি মোতাবেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার বৈধ অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও উপরিউক্ত সব আইন কানুন অবজ্ঞা করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা-২০১৮ এবং ২০২০ চূড়ান্ত ফলাফলে কোনো প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে সুযোগ প্রদান না করায় পিটিশনারদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন হওয়ায় রিটকারীরা ৪টি রিট দায়ের করেন।

আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া আরও বলেন, এ রায়ের ফলে রিটকারী প্রতিবন্ধী নিয়োগ প্রার্থীরা ন্যায় বিচার পেয়েছেন এবং আমি আশা করছি কর্তৃপক্ষ দ্রুত এ রায় বাস্তবায়ন পূর্বক রিটকারীদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রদান করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন।

তিনি জানান, পূর্বে জারীকৃত রুল অ্যাবসোলিউট করে রিটকারী ২৮৫ জন প্রতিবন্ধী নিয়োগ প্রার্থীকে ৯০ দিনের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রদান করেন।

গত ১১ জানুয়ারি প্রতিবন্ধীদের কোটা ও নিয়োগ প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য ১৪ জানুয়ারি দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট। পৃথক চারটি রিটে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ রায়ের এ দিন ঠিক করেন।

রিট আবেদনকারীরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকাশিত ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। পরে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন।

অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া জানান, ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়, যেখানে কোনো প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ এর ৮ এর ২ বিধিতে বলা হয়েছে, ‘উপ-বিধি (২) এর দফা (গ)-তে উল্লেখিত নারী, পোষ্য ও পুরুষ কোটা পূরণের ক্ষেত্রে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো বিধি বা সরকারি সিদ্ধান্তে কোনো বিশেষ শ্রেণির কোটা নির্ধারিত থাকলে উক্ত কোটা সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী নিয়োগ করতে হবে’ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ এর ধারা ৩৫ এর ১ এ বলা হয়েছে ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, প্রতিবন্ধীতার ধরণ অনুযায়ী উপযোগী কোনো কর্মে নিযুক্ত হতে কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বঞ্চিত বা তার প্রতি বৈষম্য করা বা তাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না’।

এ কারণে ২৮৫ প্রার্থী হাইকোর্টে পৃথক চারটি রিট করেন। সেসব রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রুল জারি করেন। রুলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা-২০২০ এর প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলে ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ করে রিটকারী প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ না দেওয়া কেন অবৈধ হবে না এবং ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা পূরণ করে রিটকারী প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চান।

এফএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।