শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের আদেশে হাইকোর্টে রুল, ড. ইউনূসের আবেদন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:২৯ এএম, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ফাইল ছবি

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তৃতীয় শ্রম আদালতের ১ জানুয়ারি দেওয়া রায় ও আদেশের কার্যক্রম স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ২৮ জানুয়ারি দেওয়া আদেশ কেন বাতিল হবে না তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের বিষয়ে শুনানি করতে পূর্ণবিবেচনা (রিভিউ) আবেদন করা হয়েছে। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য শুনানি আগামী ৬ মার্চ দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন মুহাম্মাদ ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিটার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

এর আগে তৃতীয় শ্রম আদালতের ১ জানুয়ারি দেওয়া রায় ও আদেশের কার্যক্রম স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ২৮ জানুয়ারি দেওয়া আদেশ কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ড. ইউনূসসহ চারজন ও রাষ্ট্রের পক্ষে ঢাকার জেলা প্রশাসকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

একই সঙ্গে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় সাজার রায় থেকে অব্যাহতি পাওয়া গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। এ মামলার বাকি তিন আসামিকেও বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে একই আদেশ প্রতিপালন করতে হবে।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে করা রিভিশন আবেনের ওপর শুনানি নিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন।

একই সঙ্গে ড. ইউনূসসহ চারজনের সাজার রায় স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।

এ দিন ড. ইউনূসের ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায়ের কার্যক্রম স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা আবেদনের বিষয়ে শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে তৃতীয় শ্রম আদালতের রায় ও আদেশ স্থগিত করে ট্রাইব্যুনালের ২৮ জানুয়ারি দেওয়া সিদ্ধান্তের অংশবিশেষের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে ওইদিন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। ড. ইউনুসসহ চারজনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ।

মো.খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ড. ইউনূসসহ চার বিবাদীকে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের (শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের) অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া তাদের দণ্ড বাতিলের বিষয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। রুলে তাদের দেওয়া ছয় মাসের দণ্ড স্থগিত করে দেওয়া আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জনেতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

এর আগে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) শ্রম আইন লঙ্ঘনের এ মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনের সাজার রায় স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। সেই আবেদনে আদালতের অনুমতি ছাড়া ড. ইউনূস যেন বিদেশ যেতে না পারেন সে বিষয়েও আর্জি জানানো হয়।আবেদন করা হয়েছে।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের ওই মামলায় গত ১ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা।

রায় ঘোষণার পর আপিল করার শর্তে তাদের এক মাসের জামিন দেন একই আদালত। ড. ইউনূস ছাড়া অন্য তিনজন হলেন-গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

তাদের শ্রম আইনের ৩০৩ (ঙ) ধারায় সর্বোচ্চ ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অন্যদিকে ৩০৭ ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন আদালত।

এরপর আসামিপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল আবেদনটি ওইদিন শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করে পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে এক মাসের জন্য জামিন দেন। রায় ঘোষণার পর আপিলের শর্তে তাদের এক মাসের জামিন দেন একই আদালত। সেই সময়সীমার মধ্যেই আপিল করেন দণ্ডপ্রাপ্তরা।

তৃতীয় শ্রম আদালতের দেওয়া রায় আগামী ৩ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে চারজনকে জামিন দেন। পরবর্তী শুনানির জন্য ৩ মার্চ দিন ধার্য করা হয়।

শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ২৮ জানুয়ারি দেওয়া আদেশের বৈধতা নিয়ে আবেদনটি করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, রায় স্থগিত করার এখতিয়ার নেই আপিল আদালতের। আইনের যে ধারায় তারা (ড. ইউনূসসহ চারজন) আপিল করেছেন, সে ধারায় পুরো রায় স্থগিতের কোনো বিধান নেই। রায়ে দুটি দিক থাকে। একটি সাজা ও অন্যটি দণ্ড। আপিল ট্রাইব্যুনাল দুটিই স্থগিত করে দিয়েছেন। এই অংশ অবশ্যই বাতিল হওয়া উচিত। কারণ, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত ও ফৌজদারি কার্যবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ওই আবেদনের কপি পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন ‘আসলে আবেদনটি করা হয়েছে হয়রানি করার জন্য। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে যখন ড. ইউনূসসহ চারজনের আপিল আবেদন করা হয় সেখানে সাজা সাসপেন্ড চাওয়া হয়েছিল। এটি আবেদনে সুষ্পষ্টভাবে আছে। আপিল ট্রাইব্যুনালে তখন তারা (বাদীপক্ষের আইনজীবী) আপত্তি জানান যে সাসপেন্ডেড হবে না, স্টে হবে। তিনিই (বাদীপক্ষের আইনজীবী) আপত্তি তুলেছেন তাহলে বিষয়টি নিয়ে আবার এসে এখানে ক্রিমিনাল রিভিশন (আবেদন) করলেন।

আবেদনের প্রার্থনায় দেখা যায়, তৃতীয় শ্রম আদালতের ১ জানুয়ারি দেওয়া রায় ও আদেশের কার্যক্রম স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ২৮ জানুয়ারি দেওয়া আদেশ কেন বাতিল হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। রুল হলে তৃতীয় শ্রম আদালতের রায় ও আদেশ স্থগিত করে ট্রাইব্যুনালের ২৮ জানুয়ারি দেওয়া সিদ্ধান্তের অংশ বিশেষের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে।

তৃতীয় শ্রম আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আদালতের অনুমতি ছাড়া প্রতিপক্ষ (ইউনূসসহ চারজন) যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার আর্জিও জানানো হয় আবেদনে

এফএইচ/এমআইএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।