আসামি হাজির না করায় ৮ বছরেও শুরু হয়নি ব্লগার নাজিম হত্যার বিচার

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর আলম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫১ পিএম, ০৬ এপ্রিল ২০২৪

আট বছর আগে (২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল) রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার মেসে ফেরার পথে লক্ষ্মীবাজারের একরামপুর মোড়ে জঙ্গিরা কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করে ব্লগার নাজিমুদ্দিনকে। এ ঘটনায় করা মামলায় ২০২০ সালের ২০ আগস্ট বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক জিয়াসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

একাধিকবার মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। তবে, নিরাপত্তাজনিত কারণে কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে হাজির না করায় এখনো বিচার শুরু করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।

মামলাটি বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে অভিযোগ গঠন শুনানির পর্যায়ে। সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ এ মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল। ওইদিন নিরাপত্তাজনিত কারণে কারাগারে থাকা আসামিদের আদালতে না পাঠিয়ে কাস্টডিতে পাঠান কারা কর্তৃপক্ষ। পরে আদালত অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ১৬ মে দিন ধার্য করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে হাজির না করায় তারা মামলার শুনানি করতে পারছেন না। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, অভিযোগ গঠনের নির্ধারিত দিনে নিরাপত্তাজনিত কারণে কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে হাজির না করায় অভিযোগ গঠন করা হচ্ছে না। আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে অভিযোগ গঠন করে বিচারকাজ শেষ করা হবে।

আরও পড়ুন

ট্রাইব্যুনালের পেশকার পারভেজ ভুইয়া জাগো নিউজকে বলেন, মামলার সব আসামি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের আদালতে হাজির করা হচ্ছে না। সর্বশেষ ২৫ মার্চ মামলার ধার্য তারিখ ছিল। এদিনও নিরাপত্তাজনিত কারণে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়নি। আমরা আসামিদের যেন পরবর্তী তারিখে আদালতে হাজির করা হয় সেজন্য কারা কর্তৃপক্ষকে বলেছি। আশা করছি, আগামী ধার্য তারিখে আসামিদের আদালতে হাজির করা হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জাগো নিউজকে বলেন, ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যা মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসামিদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় মামলা থাকায় তাদের অনেক সময় আদালতে হাজির করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় নিরাপত্তাজনিত কারণে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয় না। আশা করছি, সামনের ধার্য তারিখে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে। এরপর সাক্ষী নিয়ে মামলাটির বিচারকাজ দ্রুত শেষ করা হবে।

২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার মেসে ফেরার পথে লক্ষ্মীবাজারের একরামপুর মোড়ে জঙ্গিরা কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করে ব্লগার নাজিমুদ্দিনকে।

এ ঘটনায় পরদিন সূত্রাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। ২০২০ সালের ২০ আগস্ট বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক জিয়াসহ নয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিটিটিসি ইউনিট।

আরও পড়ুন

২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি মেজর জিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। একই সঙ্গে পলাতক পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তাদের গ্রেফতার করতে না পারায় প্রতিবেদন দাখিল হলে একই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পলাতক পাঁচজনের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন। সম্পত্তি ক্রোকের প্রতিবেদন দাখিল হওয়ায় গত ১০ মে আসামিদের আদালতে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির আদেশ দেওয়া হয়।

একই সঙ্গে দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তার কপি আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এরপর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় ২০২২ সালের ২৫ জুলাই বিচারক অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন। এরপর থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়নি।

মামলার আসামিদের মধ্যে মেজর জিয়া ছাড়া আকরাম হোসেন, মো. ওয়ালিউল্লাহ ওরফে ওলি ওরফে তাহের ওরফে তাহসিন, সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক ও মাওলানা জুনেদ আহাম্মেদ ওরফে সাব্বির ওরফে জুনায়েদ পলাতক।

এছাড়া কারাগারে আটক চার আসামি হলেন রশিদুন নবী ভুইয়া ওরফে রায়হান, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, মো. আরাফাত রহমান ও মো. শেখ আব্দুল্লাহ।

জেএ/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।