শেষ হয়েও হলো না শেষ বর্ষবরণে শ্লীলতাহানি মামলার বিচার

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর আলম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২৫ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২৪
২০১৫ সালে ঢাবির টিএসসিতে শ্লীলতাহানি-ফাইল ছবি

২০১৫ সালে নববর্ষের উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় বেশ কয়েকজন নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। জাতির প্রত্যাশা ছিল ঘটনার বিচার দ্রুত শেষ হবে। মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য দিনও ধার্য করেছিলেন আদালত। তবে, মামলাটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাক্ষী বাদ যাওয়ায় পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়।

বর্তমানে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এ মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলছে। মামলাটিতে নয়জনের সাক্ষী নেওয়ার পর সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলার রায় ঘোষণার জন্য ৩১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।

এদিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত ১৩ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন। এদিন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মামলাটি রায় ঘোষণা থেকে উত্তোলন করে পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণ নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ১৫ এপ্রিল মামলার সাক্ষ্যগ্রহণে নতুন দিন ধার্য করেন।

বাংলা নববর্ষের উৎসবে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় করা মামলাটিতে কিছু পুলিশ সদস্য সাক্ষ্য দিতে আসেননি। তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সমন জারি করা হবে। আশা করছি, তারা সাক্ষ্য দিলে দ্রুতসময়ের মধ্যে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষ করা হবে।— পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ রেজাউল করিম

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আট লাঞ্ছনাকারীকে শনাক্ত করা হয়। তাদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণাও দেন তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। এ ঘটনায় করা মামলায় সাত আসামিকে খুঁজে না পেয়ে পরের বছর কামাল নামে এক ব্যবসায়ীকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে তদন্ত সংস্থা ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরের বছরের জুন মাসে আসামি কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত। কিন্তু অভিযোগ গঠনের প্রায় ছয় বছর পরও ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে নয়জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না। সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় আলোচিত মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম ঝুলে রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আগামী পহেলা বৈশাখের আগে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে।

আরও পড়ুন

২০১৫ সালের ওই ঘটনায় সেদিন সন্ধ্যায় শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। নারীদের লাঞ্ছনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আটজনকে শনাক্তের পর গণমাধ্যমে ছবি প্রকাশ করে পুলিশ। তাদের ধরিয়ে দিতে লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়।

মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছিল। সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি রায় ঘোষণা থেকে উত্তোলন করে ফের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন। আশা করি, আমার আসামি কামাল খালাস পাবেন।— আসামিপক্ষের আইনজীবী আনিছুর রহমান

২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস। প্রতিবেদনে আসামি খুঁজে না পাওয়ার কথা বলা হয়। তবে ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার।

শেষ হয়েও হলো না শেষ বর্ষবরণে শ্লীলতাহানি মামলার বিচারমঙ্গল শোভাযাত্রা-ফাইল ছবি

২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক ব্যবসায়ী কামালকে একমাত্র আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ১৯ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে আট লাঞ্ছনাকারীর মধ্যে একজনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। অন্য সাতজনকে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের চার্জশিটে নাম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাদের খুঁজে পাওয়া গেলে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হবে। এ মামলায় ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, বাংলা নববর্ষের উৎসবে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় করা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। তবে মামলাটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী বাদ পড়ায় আমরা রায় ঘোষণা থেকে উত্তোলন করে আবার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আবেদন করি। আদালত ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটির পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ঠিক করেন।

অভিযোগ গঠনের প্রায় ছয় বছর পরও ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে নয়জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীদের প্রতি জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না। সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় আলোচিত মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম ঝুলে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মামলাটিতে কিছু পুলিশ সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসেননি। তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সমন জারি করা হবে। তারা সাক্ষ্য দিলে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষ করা হবে। আশা করছি, দ্রুতসময়ের মধ্যে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষ করা হবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আনিছুর রহমান বলেন, আমার আসামি কামাল ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ, তাকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এ পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তাসহ নয়জন সাক্ষী দিয়েছেন। তাদের জেরা করা হলে আমার আসামির বিষয় নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

তিনি বলেন, মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছিল। সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি রায় ঘোষণা থেকে উত্তোলন করে ফের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন। আশা করি, আমার আসামি কামাল খালাস পাবেন।

জেএ/এমএএইচ/এসএইচএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।