মানবতাবিরোধী অপরাধ

ফেনীর তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ ১৬ মে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৪ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
ফাইল ছবি

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফেনী সদরের তোফাজ্জল হোসেন ওরফে তজুসহ (৬৭) তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্র ও আসামি উভয় পক্ষের শুনানি শেষ করা হয়েছে। অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য আগামী ১৬ মে দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রেজিয়া সুলতানা চমন।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মো. ইউসুফ (৭১) ও নূর মোহাম্মদ ওরফে এম নূর আহমদ (৭৩)। আসামিদের মধ্যে কারাগারে আছেন নূর মোহাম্মদ। বাকি দু’জন পালাতক। গ্রেফতারের পর তোফাজ্জল হোসেন ওরফে তজু (৬৭) জামিনে রয়েছেন।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম ও বিচারক এএইচএম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া।

আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। আর আসামিদের পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।

এর আগে তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) দাখিল করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তথা প্রসিকিউশন টিম। এরপরে অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠন পরবর্তী শুনানির জন্য ঠিক করেন আদালত। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটির শুনানি হয়।

প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফেনী সদরের তোফাজ্জল হোসেন ওরফে তজুসহ (৬৭) তিন আসামির বিরুদ্ধে ২০২৯ সালের ৩০ মে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে প্রসিকিউশনের কাছে দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। এর আগে ২০১৯ সালের ৩০ মে ফেনীর তোফাজ্জল হোসেন ওরফে তজুসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার এটি ছিল ৭০তম প্রতিবেদন।

২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে তদন্ত শুরু করে ২০১৯ সালের ৩০ মে পর্যন্ত তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে তাদের বিরুদ্ধে তিনটি ভলিয়মে মোট ৯১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। মামলায় ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার ধানমন্ডি কার্যালয়ে অভিযোগের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান। একই বছর ৩০ জুন সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার তৎকালীন প্রধান সমন্বয়ক মরহুম আব্দুল হান্নান খান ছাড়া জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এম সানাউল হক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মোহাম্মদ আমিনুর রশিদসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তোফাজ্জল ১৯৭১ সালের পূর্বে জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রসংঘের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ফেনী সদরের রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি শিল্পপতি ও এনসিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক ছিলেন। তিনি ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক, ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক পরিচালক ছাড়াও কম পক্ষে ১২টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন।

আবু ইউসুফ ও নূর মোহাম্মদ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের কর্মী হিসেবে ফেনী সদরের রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন। তবে বর্তমানে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারা।

২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে তদন্ত শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ফেনী সদর থানার ফকিরহাট বাজার এলাকায় আটক, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, হত্যা ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধ করে তারা। আসামিদের বিরুদ্ধে মোট দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

এক. ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল রাজাকার তোফাজ্জলসহ ৭-৮ জন সশস্ত্র রাজাকার ফেনী সদরের ফকিরহাট বাজারে আবুল হোসেনের দোকানে আক্রমণ করে। তোফাজ্জল তার হাতে থাকা রাইফেল দিয়ে উত্তর ধলিয়ার গোলাম রাব্বানীকে গুলি করে আহত করে এবং আবুল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে। আসামিরা ফকিরহাট বাজারে ১০-১৫টি দোকান লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। তারপর আবুল হোসেনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ তার দোকানের জলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করেন তোফাজ্জল।

দুই. ১৯৭১ সালের ১০ আগস্ট রাত ১০টার দিকে রাজাকার আবু ইউসুফসহ ৫-৬ জন সশস্ত্র রাজাকার উত্তর গোবিন্দপুরের আব্দুর রউপ মেম্বারের বাড়িঘর লুটপাট করে। রাজাকার তোফাজ্জল, ইউসুফ, নূর মোহাম্মদসহ অন্য রাজাকাররা উত্তর গোবিন্দপুরের নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালি ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক শামছুল হক, আব্দুল হক, মুজিবুল হক (বর্তমানে মৃত) ও আব্দুর রউপকে (বর্তমানে মৃত) নিজ নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে অমানবিক নির্যাতন করেন।

একইদিন রাত ১টার দিকে রাজাকার তোফাজ্জল, আবু ইউসুফ ও নূর মোহাম্মদসহ ৪-৫ জন সশস্ত্র রাজাকার উত্তর গোবিন্দপুরের আব্দুল ওহাবকে আটক করে। পরে তোফাজ্জলের নির্দেশে রাজাকার ইউসুফ তাকে গুলি করে হত্যা করে। এ ছাড়া আটকদের কালিদহ বড়দাহ প্রসন্ন রায় জমিদার বাড়ি রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আটক রেখে তাদের অমানুষিক নির্যাতন করেন।

এফএইচ/এসএইচএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।