ওমর শরিফ
মনে পড়ে এবং অন্যান্য কবিতা
মনে পড়ে
তোমাকে যে খুব মনে পড়ে
বারান্দায় রাখা মাটির মূর্তিটা দেখি
তোমার মুখটা মনে পড়ে।
অর্কিডের নুয়ে পড়া লতাটা জানান দেয়
অনেকদিন তুমি ওদের যত্ন নাও না।
রান্নাঘরে বিক্ষিপ্ত পড়ে থাকা বাসন
ডাইনিং টেবিলে বসে যাওয়া ধুলোর আস্তরণ
তোমার অনুপস্থিতি বলে দেয়।
ঘরের ওধারে জমে থাকা ময়লা, ঝুল
আলগোছে পড়ে থাকা জামা-কাপড়,
অনাদরে পড়ে থাকা সোফার পিলো
কেবলই বলছে, অনেক দিন হলো
তুমি নেই।
বাড়ির ছোট ছেলেটি ঘুমের ঘোরে কেঁদে ওঠে
স্নেহের পরশ পাবে বলে
বড় ছেলেটি মনকে শক্ত করে
খাবার টেবিলে চেনা স্বাদ খুঁজে ফেরে
আর আমি...
নাইবা জানলে
শুধু যেন পুবের হাওয়া বেয়াড়া হয়ে
প্রায়ই দুচোখ ভিজিয়ে দিয়ে যায়।
****
খরা
খাঁ খাঁ রোদে পুড়ছে সোনার শরীর
পুড়ছে মাঠ-ঘাট পুড়ছে গাছের বোবা ছায়া
অনাবৃষ্টিতে তপ্ত মরীচিকার মোহ
পিচঢালা পথে সমুদ্র এঁকে যায়
তৃষ্ণার্ত কাক সেই পথেই চেয়ে থাকে
পথের কুকুরটা এক চিলতে ছায়ায় ঠাঁয় বসে
কাঠফাটা প্রচণ্ড দাবদাহে
সজনে ডালে সজনে পুড়ে ছাই
মুকুল শুকিয়ে ঝরে গেছে
চড়ুইটা হাঁ করে আকাশের দিকে চেয়ে
এতটুকু বৃষ্টির আশায়।
****
সুখ
অনন্তকাল ধরে পথের দিশা হারিয়ে
হিমালয় হতে সাগরের পথে
সাগর হতে মালভূমি
অবকাশ ভুলে তিমির রাতে ছুটেছি
অগ্রহায়ণের আকাশে তমসা লাগা পূর্ণিমায়
পৌষে কোকিলের মৃত স্বরে
ভয়ার্ত রাতে লক্ষ্মী প্যাঁচার হরষে
একাকিত্বের একা খুঁজেছি
গ্রাম শহর মরু প্রান্তর ছাড়িয়ে
দেবদারুর ছায়ায়, অবনত শিরিষ কোলে
ঘাসের ডগায় শিশির সুধা উদরে ভরেছি
অবরুদ্ধ অমরাবতীর রুদ্ধদ্বার টুটেছি
দেবলোকে ভ্রমে সুখ খুঁজেছি
চেয়ে দেখি দিব্যলোকেও,
প্রভূত আকর্ষণে জাগে অন্ধকারের ব্যথা।
এসইউ/জিকেএস