ভিডিও EN
  1. Home/
  2. কৃষি ও প্রকৃতি

হারিয়ে যাচ্ছে দেশি ফল ‘খেজুর’

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:২৩ পিএম, ২৩ জুলাই ২০২৫

বিলকিস নাহার মিতু

গ্রামবাংলার পরিচিত ফল দেশি খেজুর। গ্রামের ছেলেমেয়েদের বেড়ে ওঠা যেসব গ্রামীণ ফল খেয়ে; তারমধ্যে খেজুর অন্যতম। ছোটবেলায় খেজুর বলতে ২ ধরনের খেজুরকে বোঝানো হতো। যেটি দেশি খেজুর; সেটি শুধু খেজুর। কিনে আনা খেজুরকে বলা হতো সৌদির খেজুর। কোনো কোনো অঞ্চলে বলা হতো ‘খুরমা খেজুর’।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সাধারণত খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করার পর গাছে ফুল ধরে। সবুজ রঙের ফল হয়। পরে হালকা হলুদাভ রং থেকে পরিপক্ব হওয়ার সময়ে গাড় কমলা রং ধারণ করে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে এ ফল পাকা শুরু করে। তখন গাছের তলায় ঝরে পড়ে। লোকজন গাছের তলা থেকে প্রথমদিকে খেজুর সংগ্রহ করে। এ ছাড়া পাখির আনাগোনা শুরু হয়। পাখিতে প্রচুর পরিমাণে খেজুর খেয়ে থাকে।

একটি খেজুর গাছে ৫-৭টি ছড়া বা তার বেশিও ছড়া হয়ে থাকে। কখনো কখনো এর কমও হতে পারে। কিছু খেজুর আষাঢ় মাসের দিকে পাকা শুরু করে। শ্রাবণ মাস পর্যন্তও এ খেজুর পাওয়া যায়। গাছের তলা থেকে সংগ্রহ করা ছাড়াও মানুষজন ছড়া কেটে কলা পাতায় পেঁচিয়ে পানিতে বা পুকুরে একদিন ডুবিয়ে রাখে। যাকে আঞ্চলিক ভাষায় ‘জাগ দেওয়া’ বলে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

গাছ থেকে ছড়া কেটে ঘরে রেখে দিলেও ২-৩ দিনের মধ্যে পেকে যায়। পাকলে এ ফল অত্যন্ত মিষ্টি হয়। মেরুন রং ধারণ করে। ফলের ওপরে পলিথিনের মতো পাতলা আবরণ এবং ভেতরে নরম বেলে বেলে শ্বাস হয়। ফলের বীজ বেশ লম্বা হয়। বরিশাল অঞ্চলে খেজুরের সাথে মুড়ি দিয়ে মোয়াও তৈরি করা হয় ঘরোয়াভাবে।

যখন এ ফল কাঁচা সবুজ রঙের থাকে; তখন গ্রামের ছেলেমেয়েরা ফলের বীজ দিয়ে গুটি নামক খেলা খেলে মাটিতে ঘর কেটে। এ ছাড়া কাঁচা ফলও কেউ কেউ মুখে রেখে চিবায়। যার স্বাদ কষযুক্ত। বীজগুলো তখন নরম হয়। চিবালে কটকট করে।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, খেজুরে ভিটামিন এ, সি, কে, আয়রন, বিটা-ক্যারোটিন, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন উপাদান থাকে। হৃদরোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং মানবদেহে রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া খেজুর হজমবর্ধক। পাকস্থলি ও যকৃতের শক্তি বাড়াতে সহায়ক। শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্য খেজুর বেশ কার্যকর।

এ গাছের মাতি বা মাথি অত্যন্ত সুস্বাদু। শহরাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায় না। উপকূলীয় অঞ্চলে মাটি ক্ষয় রোধের জন্য এ গাছ রোপণ করা হয়। তবে অধিকাংশ গাছ রোপণ ছাড়াই হয় পাখির মাধ্যমে। দুঃখের বিষয়, এখন এ গাছ খুব একটা দেখা যায় না। গাছের রোপণ কমে গেছে। প্রকৃতিতে পাখি কমে যাওয়ার কারণেও বিলুপ্ত প্রায় খেজুর গাছ।

দেশীয় খেজুর গাছ থেকে প্রচুর রস আহরণ করা হয়। পরে তা দিয়ে গুড় তৈরি হয়। মৌসুমে খেজুর তো আছেই। খেজুর, রস ও গুড়ের ঘাটতি হচ্ছে এ গাছ কমার কারণে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা এ ফল সম্পর্কে এখন ধারণা রাখে না বললেই চলে। জাতীয় এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে খেজুর গাছ রোপণ বাড়ানো উচিত। তাতে আমরা ফিরে পাবো আমাদের দেশীয় ফল এবং গ্রামীণ স্মৃতি। সেইসাথে দেশের অর্থনীতিও চাঙা হবে।

বিজ্ঞাপন

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।

এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন