ছাদে কাঁচামরিচ চাষ করবেন যেভাবে

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
হঠাৎ করেই মরিচের দাম বেড়ে যায়। তাই বিকল্প হিসেবে নিজেই চাষ করতে পারেন কাঁচামরিচ। এতে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হবে না। ছাদ কৃষিতে অল্প একটু জায়গায় প্রচুর কাঁচামরিচ উৎপাদন করা সম্ভব। শুধু জানতে হবে কীভাবে টবে, ড্রামে, বেডে, ফলের ক্রেটে, বালতিতে, মিষ্টির হাঁড়িতে কাঁচামরিচ গাছ লাগাবেন। যখন মন চায়; তখনই কাঁচামরিচ তুলে আনবেন। কাঁচামরিচ ছাড়া তরকারি যেন স্বাদই হয় না। তাই নিজের গাছে উৎপাদিত কাঁচামরিচের কোনো তুলনা হয় না।
কোথায় লাগাবেন
টবে, হাফ ড্রামে, বালতিতে, বেডে, পলি ব্যাগে, বস্তায় কাঁচামরিচ গাছ লাগানো যায়। ভালো বীজ কিনে চারা করতে পারেন। চারা যখন কিছুটা লম্বা হবে। তিন পাতা আসবে; তখন প্রকৃত জায়গায় লাগানো উত্তম। বাজার থেকে গাছ কিনলে ভালো জাত পাবেন। সে নিশ্চয়তা নেই। অবশ্য মরিচসহ কিনলে ভিন্ন কথা। ফলের ক্রেটে লাগালে একটি ক্রেটে দুটি গাছ, বেডে লাগালে দেড় ফুট ব্যবধানে একটি গাছ রাখা ভালো। মরিচের বিভিন্ন জাত আছে। তাই মরিচ গাছ লাগিয়ে ছাদ কৃষিতে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব। তবে জাত ভালো নয় কিন্তু অনেক যত্ন নিলেন। প্রত্যাশিত ফলাফল আসার সুযোগ নেই। বাজারে বেশকিছু রোগ প্রতিরোধী মরিচের বীজ কিনতে পাওয়া যায়।
মাটি
মরিচ গাছের মাটি হতে হবে ঝুরঝুরা। এতে থাকবে ৫০% কেঁচো বা গোবর সার, বালু, সরিষার খৈল, শিং কুচি, হাড়ের গুঁড়ো, কোকোপিট, কিছু পরিমাণ বায়োডার্মা সলিড বা টাইকোডারমা। গাছ লাগিয়ে তার সাথে লাঠি বেঁধে দিতে হবে। মরিচ গাছ পানি সহ্য করতে পারে না। তাই যে পাত্রেই গাছ লাগানো হোক না কেন। সঠিকভাবে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। রোদ পড়ে এমন জায়গায় মরিচ গাছ ভালো হয়। মরিচ গাছ রোদ পছন্দ করে। তবে ধারাবাহিকভাবে অতিরিক্ত রোদ থাকলে শেড দিতে পারলে ভালো হবে। বারান্দায় মরিচ গাছ রাখলে গাছের বেশিরভাগ অংশ বাইরে রাখা উত্তম। যেন পর্যাপ্ত রোদ পায়।
যত্ন
মরিচ গাছে যখন ফুল আসবে। তখন যে কোনো একটি ভালো পিজিআর (প্লান্ট গ্রোথ রেগুলেটর) স্প্রে করতে হবে। মিরকুলান, প্রানোফিক্স, বলবান বিখ্যাত দুটি পিজিআর। পনেরো দিন পর পর যে কোনো অনুখাদ্য স্প্রে করে দিলে গাছের গ্রোথ ভালো হবে। এগরোমিন গোল্ড গাছের জনপ্রিয় অনুখাদ্য। পরিমিত পানি দিতে হবে। গোড়া শুকনো কাঠ হবে না। আবার স্যাঁতসেতেও হবে না। কিছুদিন পরপর এক লিটার পানিতে দুই এমএল হাইড্রোজেন পার অক্সাইড গুলে স্প্রে করলে সুফল মিলবে। এ ছাড়া গাছের বিরিয়ানি সরিষার খৈল ভেজানো পানি দেওয়ার বিকল্প নেই। একবার মরিচ হওয়ার পর গাছকে ভরপেট খাবার দিতে হবে। মরিচ গাছের নিচের দিকে মাটির কাছাকাছি যে শাখাগুলো বের হয়। সেগুলো ভেঙে দেওয়া ভালো। প্রকৃতিগতভাবে গাছে যত ফুল আসবে। সব মরিচ হবে না। কিছু ঝরে পড়বে। এ জন্য চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। অতিবৃষ্টি, খরা, পানি কম বা বেশি দেওয়া, মাটিতে খাবারের অভাবের জন্য ফুল ঝরে পড়তে পারে।
রোগবালাই
মরিচ গাছের সবচেয়ে বড় রোগ হলো পাতা কোঁকড়ানো। এর জন্য এবোম, ভার্মিটেক কিংবা এবামেকটিক গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। সাত দিনে একবার নিম কীটনাশক স্প্রে করা চাই। ইপসম সল্ট স্প্রে করলেও গাছের বৃদ্ধি ভালো হবে। পানি দেওয়ার সময় গাছের পাতা ধুয়ে দিতে হবে। মরিচ গাছের আরেকটা রোগ হলো গাছ ঢলে পড়া। এ জন্য ব্যাকটাফ বা অটোব্যাক বা রাদি বা ব্যাকট্রবান বা ব্যাকট্রল বা বিসমাজল ২০ ডব্লিউপি প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে শেষ বিকেলে গাছের গোড়ায় ভিজিয়ে স্প্রে দিতে হবে ১২ দিন পর পর ২ বার। বীজ থেকে চারা করলে বীজ শোধন করে নিতে হবে। কিছু ন্যাপথলিন মরিচ গাছের কাছে রাখলে অনেক ক্ষতিকারক পোকা আসবে না। গাঁদা ফুল গাছ রাখলে পোকামাকড় কম আসবে। ওই গাছে এমন কিছু উপাদান আছে যা পোকামাকড় পছন্দ করে না। যেমন পছন্দ করে না নিম কীটনাশক। পুদিনা পাতাও পোকামাকড়ের বড় অপছন্দ।
ফলন
যদি বিভিন্ন জাতের দশটির মতো মরিচ গাছ থাকে। সঠিক দেখভাল করতে পারেন। তাহলে সময়ে-অসময়ে মরিচের চাহিদা কেবল মিটবেই না; অন্যদের উপহারও দিতে পারবেন। মরিচ গাছ একটানা অনেকদিন ফলন দেয়। চারা করতে চাইলে কোকোপিট বেছে নেবেন। কোকোপিটে (নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়ো) চারা উৎপাদন হার সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে মরিচ গাছের সব পাতা ঝরে যায়। মরামরা ভাব হয়। আসলে মরে না। পরে আবার নতুন পাতা গজায়। তাই এ অবস্থায় চিন্তায় ঘুম হারাম করলে নিজেরই ক্ষতি। তবে শুকনো শাখা থাকলে তা কেটে দিতে হবে।
লেখক: অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, সেলস অপারেশনস, ফেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড।
এসইউ/এএসএম