ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জোকস

আন্তর্জাতিক জোকস দিবস

মিম বনাম জোকস: কৌতুকের ডিজিটাল বিবর্তন

মামুনূর রহমান হৃদয় | প্রকাশিত: ০১:০৫ পিএম, ০১ জুলাই ২০২৫

‘কাজল চোখে হাসলে তুমি, হৃদয়ে লাগে টান’ এই ধরনের কবিতা যেমন পাঠকের মনে দোলা দেয়, তেমনি ‘আমি তোকে ভাই ভাবতাম রে!’ টাইপ কৌতুক শুনে হো হো করে হেসে ওঠে মানুষ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে মানুষের হাসির রুচি, বদলেছে কৌতুক পরিবেশনের ধরন ও মাধ্যম। এক সময় যেসব কৌতুক পাওয়া যেত বই, রেডিও কিংবা টেলিভিশনে, এখন তার স্থান নিয়েছে মিম, টিকটক ভিডিও, ইউটিউব শর্টস কিংবা ইনস্টাগ্রামের রিলস।

বাংলাদেশে কৌতুকের প্রাথমিক মাধ্যম ছিল মানুষের মুখ। রাস্তার মোড়ে গল্পের আসর, অফিস কলিগের মুখে ‘ভাই শুনছেন?’ দিয়ে শুরু হওয়া কৌতুক, কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় একেকজনের ‘নতুন জোকস’ বলার প্রতিযোগিতা এসবই ছিল হাসির চিরচেনা দৃশ্য। এরপর এলো কৌতুক বইয়ের যুগ। ‘হাসির ঝুড়ি’, ‘মজার কৌতুক সংকলন’ বা পকেট সাইজের রঙ্গরসের বই মানুষের হাতে হাতে ঘুরত। রেডিও ও টেলিভিশনে হাস্যরস ছড়িয়ে দিতেন হারুন কিসিঞ্জার, আফজাল শরীফ, দিলদারের মতো জনপ্রিয় শিল্পীরা। ঈদের নাটক কিংবা ‘ইত্যাদি’র হানিফ সংকেতের উপস্থাপনায় মিশে থাকত হাস্যরসের স্পর্শ।

তবে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট এসে বদলে দিয়েছে সব। এখন আর কৌতুক শুনতে কারো মুখাপেক্ষী নয় মানুষ। ফেসবুকে স্ক্রল করলেই চোখে পড়ে একের পর এক মিম। মিমে উঠে আসে রাজনৈতিক ব্যঙ্গ, সামাজিক বৈচিত্র্য, প্রেম-ভাঙনের যন্ত্রণা কিংবা ‘মেস থেকে আলু চুরি’র মতো চিরচেনা বাস্তবতা।

টিকটক ও ইনস্টাগ্রাম রিলস তরুণ-তরুণীদের হাতে দিয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য ভিডিওর শক্তি। দু’এক লাইনের সংলাপেই তারা ফুটিয়ে তুলছে নারী-পুরুষ সম্পর্কের হাস্যকর দিক, অফিস-আদালতের অভিজ্ঞতা কিংবা ব্যক্তিগত ঘটনার রসাত্মক উপস্থাপন। এখন কৌতুকশিল্পের মূলমন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘কম সময়ে বেশি হাসি’।

তবে ‘জোকস’ আর ‘মিম’ এর মাঝে রয়েছে মৌলিক পার্থক্য। জোকস মূলত কথ্য বা লিখিত রূপে উপস্থাপিত একটি রসিকতা; যার শুরু, গঠন ও পরিণতি থাকে। এতে রচনাশৈলী, শব্দচয়ন এবং শ্রোতার মানসিক প্রস্তুতিও গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে মিম মূলত চিত্র, ভিডিও বা গ্রাফিকসভিত্তিক। এতে শব্দ থাকে কম, ইঙ্গিত থাকে বেশি। মিম হাসায় সঙ্গে সঙ্গেই, তবে সে হাসির স্থায়িত্ব হয় কম। একটি কৌতুক যেখানে মাসখানেক ধরে মানুষের মুখে মুখে ফেরে, সেখানে একটি মিমের আয়ু বড়জোর একদিন। পরেরদিন সেই মিমকে ঢেকে দেয় অন্য মিম।

এই পরিবর্তন ভালো না খারাপ, সেটা স্পষ্টভাবে বলা মুশকিল। একদিকে ডিজিটাল কৌতুক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণির মানুষের মধ্যে, যা ইতিবাচক ব্যাপার। তবে অনেক সময় মিম বা ছোট ভিডিওগুলো অশ্লীলতা, বিদ্রূপ বা বিভ্রান্তিকর বার্তা বহন করে। হালকা মনে হলেও এসব কনটেন্ট মানুষের অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে, এমনকি কখনো কখনো সামাজিক অস্থিরতার কারণও হয়ে দাঁড়ায়।

তবে এটাও সত্য যদি কৌতুকের ভাষা ও বার্তা ইতিবাচক হয়, তবে ডিজিটাল কৌতুক হতে পারে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। হিউমারের মাধ্যমে অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরছেন। এমনকি অনেক এনজিও, প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড এখন জনসচেতনতায় মিম ব্যবহার করছে।

মানুষ চিরকালই কৌতুক ভালোবেসেছে, ভবিষ্যতেও ভালোবাসবে। মাধ্যম বদলাবে, উপস্থাপনা পাল্টাবে, কিন্তু হাসির প্রয়োজন কখনোই কমবে না। যদি আমরা ‘জোকস’ আর ‘মিম’ দুটোকেই সচেতনভাবে গ্রহণ করি, তাহলে কৌতুক হয়ে উঠবে সুস্থ বিনোদনের শক্তিশালী মাধ্যম।

আজ ১ জুলাই, আন্তর্জাতিক কৌতুক দিবস বা ইন্টারন্যাশনাল জোকস ডে। এ দিবসটিতে আমাদের বোঝা উচিত...হাসি শুধুই বিনোদনের উপায় নয়, এটি একটি মানসিক ও সামাজিক চাহিদা। এই দিনটিকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিম, স্ট্যাটাস কিংবা ছোট ভিডিওর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে হাস্যরস। তবে দিনটি কেবল হেসে সময় কাটানোর নয়, বরং কৌতুকের মধ্য দিয়ে সমাজের ইতিবাচক বার্তা ছড়ানোরও একটি সুযোগ।

কেএসকে/জিকেএস

আরও পড়ুন