ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

জকসুর খসড়া আচরণবিধি প্রকাশ

প্রার্থীর ডোপ টেস্টের উদ্যোগকে স্বাগত জানালো শিক্ষার্থীরা

তৌফিক হোসেন | জবি | প্রকাশিত: ১২:৪৭ পিএম, ০১ নভেম্বর ২০২৫

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনের খসড়া আচরণবিধি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাতে জকসুর নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ বিধিমালা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত আচরণবিধিতে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।

বিধিমালার ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘কমিশন প্রত্যেক প্রার্থীর ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্তির বিষয়টি পরীক্ষা করবেন এবং মাদকাসক্ত প্রমাণিত হলে উক্ত প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। কেউ ডোপ টেস্টে অনুপস্থিত থাকলে তার মনোনয়নপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা।

প্রশাসনের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়—উল্লেখ করে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সামী মাহমুদ বলেন, ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত অবশ্যই প্রশংসনীয়। নেতৃত্ব যাদের হাতে থাকবে তারা মাদকমুক্ত কি-না তা যাচাই করা জরুরি। এতে ক্যাম্পাস মাদকমুক্ত হওয়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী তুষার জোয়ার্দার বলেন, এটি শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ প্রতিযোগিতা ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবে। ছাত্র প্রতিনিধিদের মানসিকভাবে দৃঢ় ও চরিত্রবান হওয়া জরুরি। এই উদ্যোগ দেশের অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যও দৃষ্টান্ত হতে পারে।

আরেক শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান পারভেজ বলেন, আমরা চাই না, কোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হোক। তাই এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী।

শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহান প্রামানিক বলেন, ডোপ টেস্ট শিক্ষাঙ্গনের রাজনীতিতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এটি নৈতিক ও আদর্শ নেতৃত্ব গঠনে সহায়তা করবে এবং রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ঘটাবে।

সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ছাত্রসংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত অত্যাধুনিক চিন্তার ফসল। একজন মাদকাসক্ত শিক্ষার্থী কখনোই নিজের সীমা বোঝে না, তাই এই পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করা নেতৃত্ব ও ব্যক্তিজীবন উভয়ের জন্যই প্রয়োজনীয়।

শাখা ছাত্রশিবিরের বাইতুল মাল সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দিতে হলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বই শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সহায়ক হবে।

জকসুতে পদপ্রার্থী ও আবৃত্তি সংসদের সভাপতি আতিক মেজবাহ লগ্ন বলেন, ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে হয়েছে। তবে, এই পরীক্ষার ফলাফলে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা জরুরি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে ডোপ টেস্টের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এ বিষয়ে যথাযথ তৎপরতা নেওয়া দরকার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রঙ্গভূমির সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তাকরিম আহমেদ বলেন, আমরা যদি মাদকমুক্ত, সুস্থ, সচেতন প্রজন্মের কথা বলি, তাহলে নিজেরাও তার উদাহরণ হতে হবে। ডোপ টেস্ট আসলে শুধু যাচাই নয়, এটি এক ধরনের প্রতিশ্রুতি যে, আমরা সৎভাবে, পরিষ্কার মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করতে চাই। আমি চাই, এই ধারা স্থায়ীভাবে বজায় থাকুক এবং সব প্রার্থী এতে অংশগ্রহণ করুক বিনা সংকোচে।

ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের সংগঠক তাওহিদুল ইসলাম বলেন, যারা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করবে তারা যদি মাদকাসক্ত হয় তাহলে তারা কীভাবে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করবে? সুতরাং আমার কাছে মনে হয় এই সিদ্ধান্ত যৌক্তিক এবং প্রশাসনের কাছে আশা করব, তারা এই নীতি যথাযথভাবে প্রয়োগ করবে।

আরও পড়ুন
জকসু নির্বাচন: পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন
জকসু নির্বাচন প্রস্তুতির কাজগুলো চ্যালেঞ্জিং: সিইসি মোস্তফা হাসান
জকসুতে নতুন ১০টি পদ সংযোজনের দাবি ছাত্রদলের

শাখা ছাত্র শিবিরের অফিস সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল বলেন, জকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে একটি সাহসী সিদ্ধান্ত এবং এটি অত্যন্ত ইতিবাচক ও যুগোপযোগী একটি পদক্ষেপ বলে মনে করি।

এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি তার হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারবে এবং জকসুর নির্বাচিত নেতারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালন করতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি মো. ছোলায়মান খান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তটা আমার কাছে সত্যিই একটি সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ মনে হয়েছে। এটি শুধু নির্বাচনের নিয়ম নয়, বরং মাদকমুক্ত, সচেতন ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব গড়ে তোলার বার্তা। এই উদ্যোগ ভবিষ্যতের নেতাদের মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা আর নৈতিক মূল্যবোধের সংস্কৃতি তৈরি করবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি মাঈন আল মুবাশ্বির বলেন, ডোপ টেস্ট করার সিদ্ধান্ত খুবই ভালো। এটি করা জরুরি। কারও মাদক গ্রহণের অভ্যাস আছে কি-না বা অতি মাত্রায় কেউ মাদক সেবন করে কি-না এটা জানা জরুরি। কারণ একজন প্রার্থী সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত হওয়া প্রয়োজন। এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।

শাখা ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, আমরা এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। আমরা চাই জকসুর প্রার্থীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, দায়িত্বশীল বোধসম্পন্ন হোক। এতে ছাত্র সমাজে একটি ইতিবাচক ও নৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।

আরিফ বলেন, প্রার্থী নির্ধারণে মাদকাসক্তি পরীক্ষা চালু করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকবিরোধী মানসিকতা ও সচেতনতা তৈরি হবে। তারা বুঝবে যে, মাদক গ্রহণ শুধু শরীরের ক্ষতি নয়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও সুযোগ হারানোর কারণও হতে পারে।

শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য আবু বকর খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জকসু প্রার্থীদের যে ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি ব্যক্তিগতভাবে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমি চাই জকসু নির্বাচনে সুস্থ, স্বাভাবিক ও পরিষ্কার মস্তিষ্কের ব্যক্তি আসুক। কোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তি না আসুক।

শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুপন্তি রত্না বলেন, আমি ডোপ টেস্টের পক্ষে, কারণ ডোপ টেস্ট সমাজে সততা, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমি চাই তরুণ প্রজন্ম মাদককে না বলুক। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কোনো না কোনো কারণে শিক্ষিত তরুণ সমাজের অনেকেই বিভিন্নভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। তাই ডোপ টেস্ট চালু রাখলে নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড.মোস্তফা হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগামীকাল রোববার আমাদের একটা মিটিং আছে। আমাদের নির্বাচন হবে পরিচ্ছন্ন। ডোপ টেস্টের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। আমরা নির্বাচনের কোনো তারিখ এখনো নির্ধারণ করিনি। সার্বিক বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে আমরা সিদ্ধান্তগুলো নেব। শিক্ষার্থীদের একটি সুন্দর জকসু উপহার দিতে চাই।’

টিএইচকিউ/এমএমকে/এএসএম