ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ভিসি-রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করা শিক্ষক সম্পর্কে যা জানা গেলো

জেলা প্রতিনিধি | পটুয়াখালী | প্রকাশিত: ০৮:৩০ পিএম, ১৩ জুন ২০২৩

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য-রেজিস্ট্রারসহ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তাকে সাময়িক বরখাস্তও করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তবে অধ্যাপক মেহেদীই যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের যে যোগ্যতা নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল তার তুলনায় মেহেদীর সিজিপিএ অনেক কম ছিল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক (নন টেকনিক্যাল) পদে চাকরি পান মেহেদী হাসান। তবে তখন যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এতে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট অনুষদে স্নাতক ডিগ্রির অধিকারী হতে হবে। শিক্ষা জীবনের সব স্তরে প্রথম বিভাগ/শ্রেণি থাকতে হবে। পাশাপাশি প্রার্থির জিপিএ/সিজিপিএ ৪ এর জন্য কমপক্ষে ৩ দশমিক ৭৫ থাকতে হবে বলে শর্ত দেওয়া ছিল। তবে মেহেদী হাসানের সিজিপিএ ২ দশমিক ৯৫। এরপরও তিনি নিয়োগ পেয়েছেন।

এদিকে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের ছবি ব্যবহার করে তাদের ফাঁসির দাবি তুলে একটি পোস্টার ছাপানো হয়। যাতে দাবি করা হয়, ২০১৮ সালের ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী দেবাশিষ সেখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পাওয়ার আত্মহত্যা করেছেন। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসির দাবি করে তিন শিক্ষকের ছবি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি ও রেজিস্ট্রারের ছবি ব্যবহার করে পোস্টার ছাপানো হয়। পোস্টারে হত্যাকারীদের ‘আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা’ হিসেবে বর্তমান ভিসি ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপে ফেলতেই গোপনে এমন একটি পোস্টার ছাপিয়ে তা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগানোর পরিকল্পনা করছিলেন অধ্যাপক মেহেদী হাসান। এজন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. মুকিতকে আগে থেকেই বলেছিলেন তার (মেহেদী হাসান) কিছু পোস্টার আসবে সেগুলো যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে লাগিয়ে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. মুকিত জাগো নিউজকে বলেন, ‘সেদিন রাতে আমাকে মেহেদী স্যার বলেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে একটি প্যাকেট আসবে, আপনি প্যাকেটটি নামিয়ে নেবেন। আমি ব্যস্ত থাকায় আমার এক নিরাপত্তাকর্মীকে দিয়ে প্যাকেটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নামিয়ে রাখি। সকালে যখন প্যাকেটটি খুলি তখন দেখি ভিসি স্যার এবং রেজিস্ট্রার স্যারের ছবি দিয়ে পাশাপাশি তিন শিক্ষকের ছবিতে ফাঁসির রশি দিয়ে পোস্টার করা হয়েছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করে এমন একটি পোস্টার লাগাতে পারি না। তাৎক্ষণিকভাবে আমি রেজিস্ট্রার স্যারকে জানাই। রেজিস্ট্রার স্যার পোস্টার দেখার পর জানতে চাইলে আমি তাকে পুরো বিষয়টি বলি। এসময় যে নিরাপত্তাকর্মী পোস্টার গাড়ি থেকে নামিয়েছেন, গাড়িচালক এবং বরিশালের যে প্রেস থেকে পোস্টার ছাপানো হয়েছে সবার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কথা বলেছে এবং বিষয়টি তখন প্রমাণ হয় যে মেহেদী স্যার পোস্টারগুলো আনিয়েছেন।’

jagonews24

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৮ সালে যখন দেবাষিশ আত্মহত্যা করে সেসময় আমি কোনো দায়িত্বে ছিলাম না এবং আমি দেশের বাইরে অবস্থান করছিলাম। কী কারণে আমার ছবি ব্যবহার করে পোস্টার ছাপানো হয়েছে তা হয়তো (মেহেদী হাসান) সে বলতে পারবে। এছাড়া অধ্যাপক মেহেদী যে পোস্টারগুলো ছাপিয়েছে, তা নিয়ে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রাইভারকে নির্দেশনা দেয় এবং পোস্টার নামানো ও লাগানোর জন্য নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছে, এ বিষয়গুলো প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত। এ কারণে গত ২৮ মে ভিসি স্যারের নির্দেশ মোতাবেক মেহেদী হাসানকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।’

এদিকে, শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে মেহেদী হাসানের যোগ্যতা না থাকলেও নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘তাকে যখন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তখন যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা এ বিষয়ে বলতে পারবেন। তবে অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।’

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেবাষিশ আত্মহত্যার বিষয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। আমি সেসময় (২০১৮ সালে) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সঙ্গে রেজিস্ট্রার কোনোভাবেই জড়িত থাকে না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত শিক্ষক (সাময়িক বরখাস্ত) অধ্যাপক মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি পোস্টার ছাপানোর সঙ্গে জড়িত নই। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে সাময়িক বরখাস্তের যে চিঠি দিয়েছে তাতে পোস্টার ছাপানোর বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে যে সিজিপিএর মানদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তার কম সিজিপিএ নিয়েও তিনি কীভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, এমন প্রশ্নে মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে যোগ্য মনে করেছে বিধায় নিয়োগ দিয়েছে। এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবে।’

আব্দুস সালাম আরিফ/এমআরআর/এমএস