ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কুষ্টিয়ার যে বাড়ি থেকে গ্রেফতার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন

জেলা প্রতিনিধি | কুষ্টিয়া | প্রকাশিত: ০৮:২২ পিএম, ২৭ মে ২০২৫

সেনাবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি করা শীর্ষ দুই সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ। মঙ্গলবার (২৭ মে) কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকার সোনার বাংলা সড়কের একটি ছাত্রাবাস থেকে অস্ত্রসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি এখন টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানান, মঙ্গলবার ভোরের দিকে সেনাবাহিনীর ৫-৭টি গাড়ি কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকার সোনার বাংলা সড়ক ও মসজিদের পাশের একটি তিনতলা পুরোনো বাড়ির সামনে এসে অবস্থান নেয়। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা শ্বাসরুদ্ধকর এ অভিযান শেষে সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার দিকে ওই বাড়ির নিচতলা থেকে দুজনকে গ্রেফতার করে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

বাড়ির বাসিন্দা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন তলাবিশিষ্ট পুরোনো বাড়িটির মালিক আলমডাঙ্গার সাবেক পৌর মেয়র ও বিএনপি নেতা প্রয়াত মীর মহিউদ্দিনের। কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের ঠিক একেবারে পেছনে বাড়িটির অবস্থান। প্রায় ৮-১০ বছর ধরে বাড়িটি ছাত্রাবাস হিসেবে ভাড়া দেওয়া। প্রয়াত মীর মহিউদ্দিনের মেয়ে বাড়িটি দেখাশোনা করলেও তিনি এখানে থাকেন না। ওই বাড়ির দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তলা ছাত্রাবাস হিসেবে ভাড়া দেওয়া। বাড়িটির নিচতলা এতদিন খালি পড়ে ছিল।

কুষ্টিয়ার যে বাড়ি থেকে গ্রেফতার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন

ওই ছাত্রাবাসের বাসিন্দা কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহিন আলম। তিনি আজকের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। শাহিন জানান, ছাত্রাবাসের ঠিক পেছনের ০১, হুর আলী শেখ সরণি, কালিশংকরপুর এলাকার তিনতলা বাড়ির মালিক প্রতিবেশী ব্যবসায়ী হাফিজুল। রোজার ঈদের পর তিনি বাড়িটির নিচতলা ভাড়া নিয়ে দুজনকে সেখানে ওঠান। নিচতলায় কী হয় বা কারা থাকেন, এতদিন এ বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা ছিল না। নিচতলায় কতজন থাকতেন, এটিও তারা জানেন না। দু-তিনজনকে থাকতে দেখেছেন। দু-একবার সুন্দরী নারীকেও ওই বাসায় ঢুকতে দেখেছেন। ওই বাড়ির বাসিন্দাদের সঙ্গে হাতেগোনা দুই থেকে তিনবার ক্ষণিকের জন্য দেখা হয়েছে। তবে কোনোদিন কথা-বার্তা হয়নি।

আজকের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শাহিন বলেন, ‌‘ছাত্রাবাসের দুই এবং তিনতলা মিলিয়ে আমরা ১৮-২০ জন ছিলাম। আমরা সবাই কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ঘুমিয়ে ছিলাম। ভোরের আজানের পর (আনুমানিক ৫টা ২০ মিনিট) সেনাবাহিনীর ৩০-৪০ জন সদস্য আমাদেরকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বাড়িতে প্রবেশ করার গ্রিলের তালা খুলতে বলেন। এসময় মোবাইলে দাড়িওয়ালা একজনের ছবি দেখিয়ে জানতে চান, এই ব্যক্তিকে আমরা চিনি কি-না। এসময় সেনাবাহিনীর সশস্ত্র তিনজন আমাদের সবাইকে দুটি কক্ষের মধ্যে আটকে রেখে নিচতলায় অভিযান পরিচালনা করে। আমরা বাড়ির সামনে রাস্তায় সেসময় ৭-৮টি সেনাবাহিনীর গাড়ি অবস্থান করতে দেখেছি। অভিযানের সময় সেনাসদস্যরা নিচতলার ওই বাড়ির দরজা দীর্ঘসময় ধরে ধাক্কা-ধাক্কি করেন। তবে কেউ গেট খুলছিলেন না। একপর্যায়ে সেনাসদস্যরা দরজার ছিটকিনি ভেঙে ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন।’

‘প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে অভিযান ও তল্লাশি চালানো হয়। সকাল ৮টার কিছু পরে নিচতলার ওই বাড়ি থেকে পেছনে হাতকড়া ও মাথায় গামছা বাঁধা অবস্থায় দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিকে কালো মাইক্রোবাসে ওঠানো হয়। অপরজনকেও কোমরে দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ওই গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযানের সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা বলাবলি করছিলেন, গ্রেফতার ব্যক্তি ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র গুলি উদ্ধার হওয়ার কথা শুনেছি’,যোগ করেন ছাত্রাবাসের বাসিন্দা শাহিন।

কুষ্টিয়ার যে বাড়ি থেকে গ্রেফতার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন

ওই ছাত্রাবাসের বাসিন্দা সানজিদুর বলেন, ‘নিচতলা বেশ কিছু দিন ধরেই খালিই পড়ে ছিল। রোজার ঈদের পর পেছনের তিনতলা বাড়ির বাসিন্দা হাফিজুল ও তার ছেলে বাসাটি ভাড়া নিয়ে আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ওই দুজনকে বাড়িতে ওঠান। তাদের ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। সেনাসদস্যরা গ্রেফতারের পর আমরা গুগল এবং অনলাইন ঘেঁটে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন সুব্রত বাইন।’

অভিযানের পর ওই বাড়িতে প্রবেশ করে দেখা যায়, চার কক্ষের বাড়ি। খাট, লেপ, তোশক ছাড়া ফার্নিচার বলতে তেমন বিশেষ কিছু নেই। যে কক্ষে সুব্রত বাইন থাকতেন, সেখানে দুটি টেলিভিশন, ওভেন, পানির ফিল্টার রয়েছে। দুটি কক্ষেই বিছানাপত্র মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

অপর একটি কক্ষে ম্যাট্রেস দেওয়ালের সঙ্গে হেলান দেওয়া। ওই কক্ষের ফ্যান চললেও আলো জ্বলে না। আরেকটি কক্ষ ভেতর থেকে লক করা। বারান্দার গ্রিল দিয়ে ওই কক্ষে প্রবেশের ব্যবস্থা রয়েছে।

আল-মামুন সাগর/এসআর/এএসএম