গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর
ছয় মাস থমকে রুটি-রুজির চাকা, আশা জাগাচ্ছে ভারতীয় পাথর
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দর দিয়ে বছরের ছয় মাস ভারত থেকে শুধু কয়লা আমদানি করা হয়। ফলে বাকি সময়গুলোতে বিভিন্ন স্থানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন অনেক শ্রমিক। এই সময়ে কাজ না পেয়ে বন্দরকেন্দ্রিক শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে যান। এতে চরম মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় তাদের। তবে সারাবছর কর্মচাঞ্চল্যে পাথর আমদানিতে আশা দেখছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা । দরদাম মিললে ভারত শুরু হবে আমদানি।
জানা যায়, চলতি বছরের ৮ মে এই দুই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৮৪ ট্রাক কয়লা আমদানির পর থেকে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ। কয়লা আমদানি না হওয়ায় স্থলবন্দরে চলছে সুনসান নীরবতা। পুরাতন কয়লাগুলো স্তূপ করা অবস্থায় রয়েছে। এগুলো কিনতে ক্রেতা আসবে, এমন আশায় কিছু শ্রমিক বন্দরে অপেক্ষায় থাকেন। তবে এই সময়ে কয়লার ক্রেতার দেখা মেলা ভার। ফলে অলস সময় কাটাচ্ছেন অনেক শ্রমিক। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ভারত থেকে পাথর আমদানি করা হবে। এতে সারাবছরই দুই স্থলবন্দরে কর্মচাঞ্চল্য থাকবে।
স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৩৬ হাজার টন কয়লা এই দুই স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর থেকে পাথর আমদানি করতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করছেন কড়ইতলী ও গোবরাকুড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা। তারা ভারতীয়দের কাছ থেকে বোল্ডার পাথর (তুলনামূলক একটু বড় পাথর) আমদানি করতে চাচ্ছেন। কিন্তু ভারতীয়রা ক্রাসিং পাথর (ভাঙা ছোট পাথর) দিতে চাচ্ছে। দামও চাচ্ছে বেশি। এ নিয়ে আলোচনাসহ চলছে দামাদামি।

স্থলবন্দর সূত্র মতে, খুব দ্রুত দামের বিষয়টি সুরাহা হবে। পাথর আমদানি শুরু হলে স্থলবন্দরে কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে। শ্রমিকরাও নিয়মিত কাজ করতে পারবে। সরকারও পাবে মোটা অঙ্কের রাজস্ব।
স্থলবন্দরে বছরের অর্ধেক সময় ট্রাক থেকে কয়লা তোলা-নামানোর কাজ করেন শ্রমিক আজিজ মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় তিন মাস যাবত কয়লা আমদানি হচ্ছে না। এমতাবস্থায় বেকার হয়ে গেছি। অন্য জায়গায় চেষ্টা করেও কাজ পাচ্ছি না। হঠাৎ কোনো ক্রেতা পুরাতন কয়লা কিনতে এলে ট্রাকে উঠিয়ে দিয়ে মজুরি নেব, এমন আশায় প্রতিদিন স্থলবন্দরে আসি। তবে সারাদিনই অলস সময় কাটে।
‘প্রায় তিন মাস যাবত কয়লা আমদানি হচ্ছে না। এমতাবস্থায় বেকার হয়ে গেছি। অন্য জায়গায় চেষ্টা করেও কাজ পাচ্ছি না। হঠাৎ কোনো ক্রেতা পুরাতন কয়লা কিনতে এলে ট্রাকে উঠিয়ে দিয়ে মজুরি নেব, এমন আশায় প্রতিদিন স্থলবন্দরে আসি। তবে সারাদিনই অলস সময় কাটে।’
আশরাফ আলী নামের আরেক শ্রমিক বলেন, বছরের অর্ধের সময় স্থলবন্দরে কর্মচাঞ্চল্য না থাকলেও ব্যবসায়ীদের মধ্যে তেমন হতাশা দেখি না। কারণ তারা কয়লার মৌসুমে যথেষ্ট ব্যবসা করেছে। তবে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছে শ্রমিকরা। কারণ কয়লা আমদানি বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা বেকার হয়ে গেছে। পরিবারের সদস্যদের মুখে তিনবেলা আহার জোগাতে পারছে না। স্থলবন্দরে সারাবছর আমদানি-রপ্তানি সচল রাখলে অন্তত তিনবেলা খাবার জোগাতে পারবো।

- আরও পড়ুন:
ভারতের নিষেধাজ্ঞায় শেওলা স্থলবন্দরে রপ্তানিতে অচলাবস্থা - ময়মনসিংহে ঐতিহ্যবাহী টক-মিষ্টি জিলাপি বিক্রিতে ধস
কড়ইতলী-গোবরাকুড়া আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের (ব্যবসায়ী সংগঠন) সাধারণ সম্পাদক অশোক সরকার অপু জাগো নিউজকে বলেন, শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে বোল্ডার পাথর আমদানি হয়। এই স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা প্রতি সেফটি পাথর ১৫৮ টাকায় কিনছে। আমরাও বোল্ডার পাথর আমদানি করতে চাচ্ছি। কিন্তু ভারতীয়রা আমাদের কাছে ক্রাসিং পাথর রপ্তানি করতে চাচ্ছে। ক্রাসিং পাথর আমদানি করলে সবমিলিয়ে প্রতি সেফটিতে খরচ পড়বে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। অথচ সর্বোচ্চ ভালো মানের প্রতি সেফটি ক্রাসিং পাথর ক্রেতাদের কাছে ১৬৩ টাকার বেশি বিক্রি করা যায় না। লাভ না হলে তো কোনো ব্যবসায়ী পাথর আমদানি করতে চাইবে না। ফলে ক্রাসিং পাথর দিতে হলে দাম কমাতে হবে। বোল্ডার পাথর দেওয়া নিয়ে ভারতীয়দের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে।

তিনি আরও বলেন, দুদিন আগে ভারতীয় ব্যবসায়ী আমার হোয়াটসঅ্যাপে বোল্ডার পাথরের ছবি পাঠিয়েছেন। পাথর পছন্দ হয়েছে। মনে হচ্ছে, বোল্ডার পাথর দিতে রাজি হয়েছে। এ নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে চূড়ান্ত আলোচনা শেষ করে নিয়মিত পাথর আমদানি করা হবে। পাথর ব্যবসা জমজমাট হলে বিপুল পরিমাণ পাথর আমদানি করে সারাবছর স্থলবন্দর সচল রাখা হবে।
এ বিষয়ে কড়ইতলী-গোবরাকুড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক পার্থ ঘোষ বলেন, স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি না থাকলে আমাদেরও অলস সময় কাটাতে হয়। পাথর আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দিয়েছি। পাথরের আশানুরূপ ক্রেতা পাওয়া গেলে ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট লাভবান হবেন। এই দুই স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভারতীয়দের অনেকবার কথাবার্তা হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ভারত থেকে পাথর প্রবেশ করবে। এতে স্থলবন্দরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরবে।
এমএন/এমএন/জেআইএম