‘দোসর’ বলে ইউপি চেয়ারম্যানের রুমে তালা দিলেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমানের কক্ষে হঠাৎ এসে তালা দিয়েছেন ওই ইউনিয়নের বিএনপি নেতাকর্মীরা।
রোববার (১৭ আগস্ট) বিকেল তিনটার দিকে ইউনিয়ন কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যা ছয়টায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাইরুল ইসলামের হস্তক্ষেপে তালা খোলা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের দিকে চেয়ারম্যান কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। এসময় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ডা. আহম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান ও জেলা তাঁতীদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বাবুলের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন এসে চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা দিয়ে দেয়। এতে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, কারো নামে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটির ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন আছে। এভাবে মব সৃষ্টি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে কোনো কিছু করাটা আমাদের কাম্য নয়। এভাবে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
অভিযোগ করে স্থানীয়রা বলেন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদের সম্প্রতি একটি সমাবেশে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার পরই বড়গাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা দেওয়া হয়েছে। এভাবে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি রাজনীতিক নেতাদের থেকে প্রত্যাশা করি না। এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদের সিসি টিভি ফুটেজ দেখে মব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধ দলীয় ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান স্থানীয়রা।
- আরও পড়ুন-
- স্কুলে ঢুকে শিক্ষককে পেটালেন বিএনপি-ছাত্রদল নেতারা
- পদ স্থগিতেও থামেনি চাঁদাবাজি, কারাগারে বিএনপি নেতা
- স্বামীর পরকীয়া নিয়ে সালিশের পরদিন মিললো স্ত্রীর মরদেহ
বড়গাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান বলেন, তালা কে দিয়েছে আমরা জানি না। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ আছে চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের দোসর, পদধারী নেতা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে এখানে বৈঠক করেন। নিয়মিত পরিষদে আসেন না। দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেবাগ্রহীতাদের। তাই মানুষ ক্ষীপ্ত হয়ে তালা দিয়েছে।
সদর উপজেলা বিএনপি নেতার বক্তব্যের পর এমন ঘটনা ঘটলো, এটার সঙ্গে ওই বক্তব্যের কোনো সংযোগ আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ওই বক্তব্যের সঙ্গে আজকের তালা দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে দুর্ভোগে পড়া মানুষ তালা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বড়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমান বলেন, আমি কার্যালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর বাইরে তাদের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তারা আমাকে আটকে বলে আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। আমি বলি আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তো জানামতে নাই। চলো কার্যালয়ে বসি, শুনি কী কী অভিযোগ। তারা যেহেতু আমার ছাত্র। আমাকে বললো স্যার আপনি চলে যান। আমিও চলে গেলাম, পরে শুনি আমার কার্যালয়ে তারা তালা দিয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খাইরুল ইসলাম ঘটনায় জড়িতদের তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এর আগে কোনো লিখিত অভিযোগ কেউ করেনি। আজ হঠাৎ তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমরা আইনের ঊর্ধ্বে কেউ না। যদি চেয়ারম্যান অপরাধী হয় শাস্তির আওতায় আসবেন। আর যদি নির্দোষ প্রমাণিত হয় তিনি দায়িত্বপালন করবেন।
তানভীর হাসান তানু/এফএ/এএসএম