কুমিল্লায় ২১ কিলোমিটার সড়কে ৩৫০ মিটার মরণফাঁদ
খানাখন্দে ভরা কুমিল্লার সড়ক/ ছবি: জাগো নিউজ
কুমিল্লা নগরে প্রবেশের প্রধান মাধ্যম মেজর এম এ গনি সড়ক। নগরীর শাসনগাছা বাসাস্ট্যান্ড থেকে ব্রাহ্মণপাড়ার মীরপুর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২১ কিলোমিটার। দীর্ঘ এই সড়কের প্রায় পুরোটাতেই অসংখ্য গর্ত আর খানাখন্দে ভরপুর। তবে বুড়িচংয়ের শতবর্ষী ভরাসার বাজার এলাকায় সাড়ে ৩০০ মিটার সড়ক যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। ফলে এ পথে চলাচলকারীদের যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
সড়কটি মেরামত করে যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ কমাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছে দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানায়, ২০২৪ সালের আগস্টে বুড়িচংয়ে বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলা প্লাবিত হয়। এতে বন্যার পানির স্রোতে সড়কটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্তমানে ২১ কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগ অংশই বেহাল। বিশেষ করে বুড়িচংয়ের ষোলনল ইউনিয়ন শতবর্ষী ভরাসার বাজার এলাকায় সড়কটি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সোনারবাংলা কলেজ থেকে সোনালী ব্যাংক ভবন এলাকা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩০০ মিটার সড়ক এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের মাঝে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এতে করে বাজারের ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেওয়াসহ চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া কাঁদা-পানিতে গাড়ি উল্টে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এই দুর্ভোগের কারণে গত এক বছরে পরিবহন চালক ও মালিকরা ভাড়া বাড়িছেন কয়েকগুন।
সরেজমিন দেখা যায়, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার অংশ পার হয়ে বুড়িচং উপজেলার অংশে প্রবেশ করতেই সড়কের বেহাল দশা চোখে পড়ে। বুড়িচংয়ের ভরাসার, ইছাপুরা, খাড়াতাইয়া এলাকায় খানাখন্দে ভরা সড়কটি। এসব স্থানের অনেক জায়গায় পিচ ঢালাইয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। খাড়াতাইয়া থেকে বুড়িচং উপজেলা সদর এবং ব্রাহ্মণপাড়া সদর থেকে টাটারা পর্যন্ত সড়কের অবস্থা বেহাল। কয়েকটি স্থানে পিচঢালাই ও সুরকিও বিলীন হয়ে গেছে।
ভরাসার বাজার অংশে গিয়ে দেখা যায়, সপ্তাহখানেক আগে হওয়া বৃষ্টির পানি সড়কে জমে কাঁদামাটিতে একাকার হয়ে আছে। পুরো সড়কজুড়ে বড় গর্তে কিছুক্ষণ পরপর আটকে যাচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও মালামালবহনকারী বিভিন্ন যানবাহন। এই সড়কে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ সধারণ মানুষের পায়ে হেঁটে চলাও দায়।
বাজার কমিটিসহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বললে জানা যায়, মাত্র সাড়ে ৩০০ মিটার সড়কের কারণে বাজারটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ভাঙা সড়কে মালামাল পরিবহনে প্রতি গাড়িতে এক থেকে দেড় হাজার টাকা অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। সড়ক দুর্ভোগের কারণে মানুষ বাজারে আসা কমিয়ে দিয়েছে। যে বাজারে প্রতিদিন কোটি টাকার উপরে বেঁচা-কেনা হতো, এখন সেই বাজারে ৫০ লাখ টাকা বিক্রি করতেও কষ্ট হয় ব্যবসায়ীদের। মানুষজন কম আসায় বাজারের হোটেল ও কুলিং কর্ণারসহ বহু দোকান বন্ধ হওয়া উপক্রম। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এই রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করলে বাজারটি পুনরায় জমজমাট অবস্থানে ফিরে যাবে বলে আশাবাদী তারা।
আরও পড়ুন
কুমিল্লায় বিএনপির দুই গ্রুপের উত্তেজনা, তোরণ-মঞ্চ ভাঙচুর
৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে জেল খাটতে এসে ফিঙ্গারপ্রিন্টে ধরা
ভরাসার বাজারের ব্যবসায়ী মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ২১ কিলোমিটার সড়কের অংধিকাংশই বেহাল। এই সড়কটি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে দ্বিগুণের বেশি সময় লাগছে। ভাড়াও নেয়া হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ। গত তিন মাস ধরে বাজারের অংশে সড়কের অবস্থা বেহাল। এমন কোনো দিন নেই যে, ভরাসার বাজারে গাড়ি উল্টায়নি। এতে যাত্রীদের হাত-পা ভাঙছে, গাড়ির যন্ত্র নষ্ট হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত আমাদের মালামালতো নষ্ট হচ্ছেই। বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই।
জাকির হোসেন নাঈম নামে এক সিএনজিচালিত এক অটোরিকশাচালক বলেন, এক মাস আগে ইঞ্জিন ডাউন দিয়েছি। রাস্তায় বড় বড় গর্তের কারণে বুধবার আবারও ইঞ্জিন ডাউন দিতে হয়েছে। প্রতিবারে ২০ হাজার করে মোট ৪০ হাজার খরচ হয়েছে। যাত্রীদের কাছে ১০ টাকা বাড়তি ভাড়া চাইলে বাকবিতণ্ডা হয়। আমরা দ্রুত এই সড়ক সংস্কার চাই।
ঢাকা থেকে ইছাপুরায় বেড়াতে আসা আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তি জানান, কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণপাড়ার মিরপুর সড়কের ভরাসার, খাড়াতাইয়া, নতুন বাজার, ইছাপুরাসহ কয়েকটি স্থানেই খানাখন্দে ভরপুর। গত রোববার ভরাসার বাজার এলাকায় তার প্রাইভেটকারটি সড়কের গর্তে আটকে বাম্পার ভেঙে যায়। তাছাড়া সামান্য একটু সড়কে মানুষের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ থাকবে দ্রুত যেন এই অংশটি সংস্কার করা হয়।

ভরাসার বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সড়কের খারাপ অবস্থার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। ঢাকা থেকে মালামাল আনা-নেওয়া যায় না। ক্রেতারাও আসেন না। প্রতিনিয়ত গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে সড়কে। বাজারের প্রবেশ পথে মাত্র সাড়ে ৩০০ মিটার সড়কে অবর্ণনীয় কষ্ট হচ্ছে মানুষের। যে বাজারে প্রতিদিন কোটি টাকারও বেশি লেনদেন-হতো, এখন সেই বাজারে ৫০ লাখও হয় না। গত এক মাস ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও এর কোনো ফলাফল পাইনি। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কার করা হোক।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
তবে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ভরাসার বাজারের অংশটি সাময়িকভাবে সংস্কার করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জাহিদ পাটোয়ারী/এনএইচআর/জিকেএস