ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

যশোর-১

বিএনপির মনোনয়ন চান চার নেতা, একক প্রার্থীতে উজ্জীবিত জামায়াত

জামাল হোসেন | প্রকাশিত: ০৭:১৪ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যশোর-১ (শার্শা) আসনের রাজনীতির মাঠে বাড়ছে উত্তাপ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এই আসনে আওয়ামী লীগ দৃশ্যত অনুপস্থিত থাকায় নির্বাচনী প্রতিযোগিতা মূলত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান চারজন। মনোনয়ন যুদ্ধে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। অন্যদিকে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত, খেলাফল মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। নির্বাচনের মাঠে নেই জাতীয় পার্টি ও বাম দলগুলোর কোনো প্রার্থী। দীর্ঘ ২০ বছরে বাম দলগুলোর কোনো কার্যক্রম এখানে চোখে পড়েনি।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যশোর-১ আসনে রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। তবে দলীয় কোন্দল বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘিরে তৃণমূলে রয়েছে বিভেদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে যশোর-১ আসন গঠিত। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল এই আসনে অবস্থিত। সব রাজনৈতিক দলের কাছে আসনটির গুরুত্ব বেশি। বিগত ১২টি সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ সাতবার, বিএনপি তিনবার, জামায়াতে ইসলামী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার করে বিজয়ী হয়েছে। ১৯৭৩, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার এবং ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে শেখ আফিল উদ্দিন এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির আলী তারেক, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মফিকুল হাসান তৃপ্তি ও ২০০১ সালে আলী কদর এমপি নির্বাচিত হন। আর ১৯৮৬ সালে জামায়াতের নূর হুসাইন ও ১৯৮৮ সালে স্বতন্ত্র কেএম নজরুল ইসলাম এমপি নির্বাচিত হন।

ভোটাররা বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বদলে গেছে রাজনীতির মাঠের হালচাল। আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা ভোটের মাঠে তো দূরের কথা, এলাকাতেই নেই। ফলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি ও জামায়াত।

যশোর-১ আসনে বর্তমানে মোট ভোটার তিন লাখ ৭ হাজার ৯৮৯ জন। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৪ জন। নারী ভোটার এক লাখ ৫৪ হাজার ৩১২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার তিনজন।

এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী চার নেতা মাঠে রয়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি এবারও ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন। বিএনপির অন্য তিন মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন শার্শা উপজেলা বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা খায়রুজ্জামান মধু, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির ও সাধারণ সম্পাদক নূরুজ্জামান লিটন।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর একমাত্র প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা আজীজুর রহমান। তিনি দলের একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় নিজের অবস্থানে বেশ আত্মবিশ্বাসী। এরইমধ্যে আজীজুর রহমানের পক্ষে নির্বাচনী ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তারা বিভিন্নভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রকাশ্য সভা থেকে শুরু করে অনলাইন প্রচারণা—কোনো কিছুই বাদ রাখছেন না।

চলছে কেন্দ্রভিত্তিক কর্মিসভা, আলোচনা ও মতবিনিময়ও। দলের মধ্যে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচন না করলে ধর্মপ্রাণ ভোটারদের বড় একটি অংশ জামায়াতের পক্ষে যেতে পারে বলে আশা করছেন স্থানীয় কর্মীরা।

এই আসনে গত ৮ আগস্ট বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস তাদের প্রার্থী হিসেবে শার্শা উপজেলা সভাপতি মাওলানা মাহাবুবুর রহমানের নাম ঘোষণা করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের শার্শা উপজেলা সভাপতি বখতিয়ার হোসেন।

বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চ্যালেঞ্জ দলীয় কোন্দল। বিএনপির রাজনীতিতে কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মফিকুল হাসান তৃপ্তি, আবুল হাসান জহির ও নুরুজ্জামান লিটনের সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে দলের তৃণমূলে। তবে শেষ পর্যন্ত দল যাকেই মনোনয়ন দেবে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তার পক্ষেই অবস্থান নিয়ে কাজ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মফিকুল হাসান তৃপ্তি জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘জেল-জুলুম-নির্যাতন ভোগ করে দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এলাকায় আরও সক্রিয় হয়েছি। কোথাও যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সে ব্যাপারে জিরো টলারেন্সে আছি। গত পূজার সময় প্রত্যেক মণ্ডপে গেছি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাহস দিয়েছি। চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখলবাজির প্রশ্রয় দিইনি।’

তিনি বলেন, ‘দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। তবে আদর্শিক বিরোধ নেই। বিএনপি যাকে মনোনয়ন দেবে, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করবেন।’

যশোর-১ আসনে বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী হাসান জহির। দলের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী তিনিও। হাসান জহির বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই জাতীয়তাবাদী আদর্শের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি। দুইবার ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছি। বিগত সাড়ে ১৫ বছর আন্দোলন, সংগ্রাম ও নির্যাতনে মাঠে ছিলাম। আমার নামে ৪৬টি নাশকতার মামলা চলমান। আমি কখনো মাঠ ছেড়ে পিছিয়ে যাইনি। সংকটে নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি, মৃত মানুষের জানাজায় থেকেছি, মামলা-হামলা উপেক্ষা করে রাজপথে ছিলাম। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষকে বিজয়ী করবে।’

মনোনয়নপ্রত্যাশী আলহাজ খায়রুজ্জামান মধু বলেন, ‘বিএনপির শুরু থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত। কখনো দল পরিবর্তন করিনি। আমার বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নেই। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে কোনো বিভেদ থাকবে না। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষকে বিজয়ী করবে।’

মনোনয়নপ্রত্যাশী শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। তাই সব দিক বিবেচনা করে আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবো বলে আশা করছি।’

যশোর-১ আসনে ১৯৮৬ সালে জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নূর হুসাইন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন জামায়াত নেতা মাওলানা আজীজুর রহমান। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিনের কাছে প্রায় পাঁচ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

আজীজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনের সাড়ে ১৫ বছরে আমরা প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারিনি। কিন্তু পুলিশ ও আওয়ামী লীগের অগোচরে জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি। জামায়াতের প্রতি সমর্থনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। জামায়াতে ইসলামীর প্রতি অতীতের চেয়ে মানুষের ভালোবাসা বেড়েছে। মানুষ চায় দুর্নীতিমুক্ত সমাজ।’

জেইউডি/এসআর/এমএমএআর/এএসএম